Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বেড়েছে নজরদারি

মাহমুদুল হাসান

অক্টোবর ৩, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বেড়েছে নজরদারি
  • গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বমানের মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
  • জেলা হাসপাতালে চলছে চিকিৎসক-নার্সকে প্রশিক্ষণ প্রদান
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরামর্শ দিতে নিয়োগ দেয়া হবে মনোবিজ্ঞানী
  • মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ানো হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা
  • স্বাস্থ্যনীতির খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের অপেক্ষায়
  • নীতি প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না বাজেটে

দেহ আর মন মিলেই মানুষ। যার একটি অসুস্থ হলে মানুষ স্বাভাবিক থাকতে পারে না। বর্তমানে শারীরিক চিকিৎসার ব্যাপ্তি বাড়লেও মানসিক চিকিৎসায় বিশ্বজুড়েই রয়ে গেছে সংকট। অথচ মানসিক রোগ বসে থাকেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে ৩০ কোটির বেশি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে।

যার প্রভাব পড়ছে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতায়। বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও মডেল সার্ভের তথ্যমতে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ১৯ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। করোনাকালে দেশে আত্মহত্যাসহ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অনেক বেড়ে গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কেউ না কেউ আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারায়। ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে আট লাখ লোক আত্মহত্যায় মারা যায়। মৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মহত্যার এ হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও মত ডব্লিউএইচওর। দেশে প্রতি বছর ঠিক কত মানুষ আত্মহত্যা করে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে সরকারের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ১১ হাজারের মতো মানুষ আত্মহত্যা করেছে। করোনাকালে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে।

তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনাকালে গেল এক বছরে পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ নারী-পুরুষ।

স্থানীয় গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৬ থেকে ১০ জন, যা উন্নত দেশের কাছাকাছি। দেশের মোট স্বাস্থ্য বাজেটের দশমিক ৫০ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে। আবার এ খাতে দক্ষ জনবলেরও স্বল্পতা আছে। তবে গত কয়েক বছরে এ খাতের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আগের চেয়ে আগ্রাধিকার পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, পাবনা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রচেষ্টায় দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পাবনা মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদদের ভাষ্যমতে, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে এখন মানুষের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। বিষয়টিকে সঠিক গন্তব্যের দিকে নিতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। হতাশার দিক চিহ্নিত করে তারা বলেন, দেশের কত মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে, তার সঠিক তথ্য নেই। জনশুমারিতে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারের নজরদারি অতীতের চেয়ে বেড়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। কয়েক বছর ধরে এ খাতে বিভিন্ন উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্সকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ পেতে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতির খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। নীতি প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়নে বাজেটের কোনো সমস্যা হবে না বলেও মত এ খাত-সংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন,  বড় বড় হাসপাতাল না বানিয়ে বিদ্যমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ আরও বাড়ান। পাবনা মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের ইনস্টিটিউট করার বিষয়টিও রয়েছে।

তিনি বলেন, চিকিৎসাবিষয়ক বিভিন্ন কোর্স, কারিকুলাম ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সংযোজন করা জরুরি।