Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

জন্মগত বধির শিশুদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’

অক্টোবর ৬, ২০২১, ০৫:৪০ এএম


জন্মগত বধির শিশুদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট’

জন্মের পর থেকে শিশু কানে শুনতে না পারায় সারাজীবন সে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্মগতভাবে বধির শিশু বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে থাকে। কানে শুনতে না পাওয়া এসব অসহায় শিশুর জন্য বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সম্পূর্ণ বধির শিশুদের কানে অত্যাধুনিক শ্রবণযন্ত্রের (কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট) মাধ্যমে শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের পাঁচটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর আর্থিক বরাদ্দ দিচ্ছে।

বধিরতা বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে। এদের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ মারাত্মক বধিরতার শিকার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্মগতবাবে বধির শিশু বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে থাকে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মাধ্যমে এ শিশুরা শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়ে আবারও স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছে। 

এ চিকিৎসাটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জন্মগতভাবে বধির অসহায় শিশুদের শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক করতে ২০১০-২০১৩ মেয়াদে প্রথমপর্যায়ে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কর্মসূচি গ্রহণ করে। প্রথম পর্যায়ে ৫৪ জন শ্রবণ প্রতিবন্ধীকে এ কর্মসূচির আওতায় কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট করা হয়। সরকার এ বিষয়ে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রম কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করেছে। 

যার আওতায় দেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউট, সিএমএইচ, ঢাকা, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সিএমএইচ চট্টগ্রাম-এ ইমপ্লান্ট করার সুযোগ রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০২০-২১ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার আমার সংবাদকে বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীবান্ধব। বিশেষ করে পাঁচ থেকে ছয় বছরের শিশুদের এ প্রতিবন্ধকতা শনাক্তকরণের মাধ্যমে আমরা এ চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছি। 

তিনি বলেন, প্রারম্ভিক পর্যায়ে শনাক্ত ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণ করা হলে তারা সমাজে বোঝার পরিবর্তে সম্ভাবনায় পরিণত হবে। সরকারের এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সচেষ্ট রয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণলয়ের সচিব আরও বলেন, আমরা প্রত্যেক হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে ভিজিট করে দেখি। এরপর অর্থ বরাদ্দ দেই। এ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল স্তরের জনগণের কাছে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানান সরকারের এ কর্মকর্তা। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ কর্মসূচির আওতায় কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের পাশাপাশি স্থানীয় চিকিৎসক, অডিওলজিস্ট, থেরাপিস্ট ও ইমপ্লান্ট সংশ্লিষ্ট জনবল ইমপ্লান্ট ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র। বিগত ২০০৫ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে হাতে গোনা তিন-চারজন রোগী বিদেশে এই ইমপ্লান্ট সার্জারি করিয়েছেন। বর্তমানে দেশের বাজারে একটি কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১৮ লাখ টাকা। 

এছাড়া সার্জারি, হেবিলিটিশন থেরাপি ও বিবিধ খরচের জন্য কমপক্ষে আরও ৫০ হাজার টাকা। এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অনাধিক পাঁচ বছরের শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের পারিবারিক আয়ের ওপর ভিত্তি করে ছয়টি ক্যাটাগরিতে এ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। 

পারিবারিক আয়ের শ্রেণিভেদে ডিভাইস বরাদ্দের জন্য নির্বাচিত আবেদনকারীকে ডিভাইস মূল্যের অংশ বহন করতে হয়।  এ বিষয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, সম্পূর্ণ বধির শিশুদের কানে অত্যাধুনিক শ্রবণযন্ত্র (কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট) বর্তমানে সময়ে খুবই কার্যকরী ব্যবস্থা। 

তিনি বলেন, পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের জন্য এটা বেশি কার্যকরী। যন্ত্রটি প্রতিস্থাপনের পর একটা অডিও ভারবাল থেরাপির মাধ্যমে শিশুটি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সে তার নরমাল লাইফে ফিরে আসে অর্থাৎ কথা শুনতে পারে।