Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

রোগী কমলেও বাড়তে পারে মৃত্যু

মাহমুদুল হাসান

অক্টোবর ৬, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


রোগী কমলেও বাড়তে পারে মৃত্যু
  • গত ছয়দিনে চারজনের মৃত্যু
  • মাসজুড়ে থাকবে ডেঙ্গুর প্রকোপ
  • আক্রান্ত-মৃত্যুতে রাজধানী শীর্ষে
  • ঢাকায় ৯০ শতাংশের বেশি মৃত্যু
  • দুই যুগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী

কোভিড-১৯ সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে। সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে নামলেই ধরা হয় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বাংলাদেশের অবস্থা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটা ভালো। কিন্তু ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ এখনো কমেনি, বরং বেড়েছে মৃত্যু। সরকারি হিসাবে গত ছয়দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গেলো ৯ মাসে দুই দশকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। গেলো বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমলেও চলতি বছরের ৯ মাসে ১৯ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিলো। জুলাইয়ের শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশতাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। যার অধিকাংশই রাজধানীর বাসিন্দা।

গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৭৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা আরও কয়েকগুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে আগস্টে। তখন ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় মৃত্যুবরণকৃত ৬৮ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। চলতি বছরের শুরু থেকে সেখানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় শিশুদের শনাক্ত-মৃত্যু কম হলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমেনি। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর হাসপাতালে করোনা রোগী কমে এলেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।

গত ৯ মাসে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ১৬ হাজার ৮০৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এসব হাসপাতালেই মারা গেছে ৬৮ জন। বাকি পাঁচজন রাজধানীর বাইরে মারা গেছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, রাজধানীর ডেঙ্গুর উৎস ধ্বংসে দুই সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতি ও অবহেলার পরিণতিতে প্রতি বছর ডেঙ্গু মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শুধু চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব নয়। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে জোর দিতে হবে। চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে এলেও মৃত্যু গত তিন মাসের চেয়ে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গতকাল নতুন করে ১৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৫১ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ১৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৮৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। আগস্টে সাত হাজার ৬৯৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন, জুনে ২৭২ জন, মে মাসে ৪৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মার্চে ১৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, জানুয়ারিতে ৩২ জন এবং চলতি মাসের গত ছয়দিনে এক হাজার ১৩৯ জন রোগী ভর্তি হয়।

তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ১৮ হাজার ১৫৯ জন রোগী। ডেঙ্গুতে এ সময়ে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৯০১ জন। তার মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৩১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৭০ জন।

এদিকে মৃত্যু তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও চলতি মাসের গত ছয় দিনে ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে আগস্টে সর্বোচ্চ ৩৪ জন, সেপ্টেম্বরে ২৩, জুলাইয়ে ১২ এবং চলতি মাসের ছয়দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই ১৬ হাজার ৮০৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
মারা গেছে ৬৮ জন। তার মধ্যে ৩৮ জন বেসরকারি হাসপাতালে ও ৩০ জন সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হয়েছে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে এই মওসুমে সর্বোচ্চ ১৩ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১১ জন, স্কয়ার হাসপাতালে আটজন, ইবনে সিনা হাসপাতালে সাতজন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ছয়জন, এভার কেয়ার হাসপাতালে চারজন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন, ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে দুইজন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন, এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

চলতি বছর শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৭৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৭১০ জন সুস্থ হলেও এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে ৩৬ শিশু আর মৃত্যু হয়েছে আরও ১১ জনের।