Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

আশার বাণী শোনালেন চট্টগ্রামের উপপরিচালক

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম

অক্টোবর ৯, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


আশার বাণী শোনালেন চট্টগ্রামের উপপরিচালক

সারা দেশজুড়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে অনেক কথা, অনেক লেখালেখি। তবে সমস্যার মূল শেকড় নিয়ে এই পর্যন্ত কোনো কথাই হয়নি। শুধুই ভোগান্তি আর ভোগান্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে। চট্টগ্রামের বাইরে নয়, চট্টগ্রাম বিআরটিএ উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রসঙ্গে দৈনিক আমার সংবাদের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং ছিলো প্রায় দুই বছর। মূল কার্ডটি সরবরাহ করতে না পারায় একটি প্রিন্ট কপি বা স্লিপ দেয়া হয়েছিল। সমস্যাটি শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন গ্রাহকরা। চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রো সার্কেলের কার্ড প্রিন্টিংয়ের অপেক্ষায় ছিলো প্রায় ৮৪ হাজার।     

ইতোমধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্টিং বিআরটিএ সদর কার্যালয় থেকে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টিং কোম্পানির সাথে বিআরটিএ সদর কার্যালয় চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি মোতাবেক চলতি বছরের গত ১৮ জুলাই থেকে তারা দেশের ৬৪ জেলায় নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড প্রিন্টিং করা শুরু করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিআরটিএ প্রায় সাত হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্টিং করে সরবরাহ করেছে গ্রাহককে।

প্রতিদিন গ্রাহকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ১০০-১৫০ গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড প্রিন্টিং করছেন। মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টিং কোম্পানি প্রতিদিনের পাশাপাশি আগের ১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলে প্রচুর সময় প্রয়োজন হচ্ছে। গ্রাহকের কথা ও সময় বিবেচনা করে বিআরটিএ সদর কার্যালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তরের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টিং কোম্পানির সাথে আগের ১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং নতুন করে সেনাবাহিনীর অধীন মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সাথে বিআরটিএ সদর কার্যালয় চুক্তি করেন। ছয় মাসের মধ্যে সেনাবাহিনীর অধীন মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড প্রিন্টিংয়ের কাজ সম্পাদন করে বিআরটিএকে হস্তান্তর করবেন।

সে চুক্তি মোতাবেক ১২ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকের হাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডটি সরবরাহ করা হবে। যাদের কার্ড প্রিন্টিং সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে গ্রাহকদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দ্রুতগতিতে গ্রাহকের হাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স তুলে দেয়ার জন্য চালু করা হয় ডিজিটালাইজড ‘স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স’। কিন্তু স্মার্ট কার্ডের আবেদনের পর প্রায় দুই বছর পর গ্রাহকরা পেতে যাচ্ছেন স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সকল স্তরের মানুষকে। প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মানুষের এত দিনের ভোগান্তির একমাত্র কারণ হচ্ছে স্মার্ট লাইসেন্স প্রদান প্রকল্পের চুক্তিবদ্ধ সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। প্রতিষ্ঠানটি চুক্তির এক বছরেও বিআরটিএকে স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিআরটিএ।

স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের এই ব্যর্থতার কারণে বিআরটিএর ভাবমূর্তিও ম্লান হয়ে গেছে। বছর খানেক আগে আবেদন ও পরীক্ষায় পাস করেও যারা লাইসেন্স পাননি তাদের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ চালক গাড়ি চালাচ্ছেন বিআরটিএর ‘একনলেজমেন্ট স্লিপ’ দিয়ে।

স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড না পাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না তারা। শুধু তাই নয়, এ কারণে দুই বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষ চালক রপ্তানিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে অন্যান্য দেশ সে স্থান দখল করে নিচ্ছে। আশা করছি , সেনাবাহিনীর অধীন মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করবে।

জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ জুলাই ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে পাঁচ বছরে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের শত কোটি টাকার চুক্তি সই করে বিআরটিএ। এ চুক্তিতে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের বাংলাদেশি এজেন্ট লজিক ফোরাম। চুক্তি অনুসারে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই থেকে দুই মাসের মধ্যে প্রিন্ট করা স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করার কথা।

করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই সময় বৃদ্ধি করে সাড়ে চার মাস করা হয়। সে হিসাবে গত ডিসেম্বর থেকে প্রিন্ট করা স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করার কথা মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের। কিন্তু জুলাই থেকে এক বছরেও বিআরটিএকে সময়মতো স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্সের নমুনাও দেখাতে পারেনি সংস্থাটি।

পরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স এখন পর্যন্ত সেন্ট্রাল এনরোলমেন্ট স্টেশন স্থাপনের কাজই শেষ করতে পারেনি। এখনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি বিভিন্ন জেলায়। স্টেশন স্থাপনের কাজেও শর্ত না মানার অভিযোগও রয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি- ‘বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গুণগত এবং স্মার্ট কার্ডের বৈশিষ্ট্য যা যা থাকার কথা তার কোনোটির সাথে আপস করা যাবে না। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর যেনো না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মনিটর করতে হবে। দ্রুত কার্ড সংগ্রহ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে গতি ফিরিয়ে আনতে হবে এবং মানুষের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে হবে।