Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

রপ্তানি আয়ে টার্গেট দুই বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১২, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


রপ্তানি আয়ে টার্গেট দুই বিলিয়ন ডলার

গবেষণার মাধ্যমে সময়োপযোগী উদ্যোগ আর বাস্তবায়নের ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। ধান, গম ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল ও খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে ২০০৯-২০২১ সময়ে ৩০৬টি উন্নত জাত এবং ৩৬৩টি প্রযুক্তিসহ মোট ৬৬৯টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে। আগাম জাতের আমন ধান চাষ পদ্ধতির ফলে উত্তরাঞ্চলে ফিরেছে স্বস্তি।

উৎপাদিত কৃষিপণ্যে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিতে আগ্রহ বাড়িয়েছে সরকার। গত ১ বছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার টার্গেট নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের কঠোর নির্দেশনা এবং বাস্তবায়নে তদারকির ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে কৃষি খাত। ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শস্য বহুমুখীকরণ, পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ ফসল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করা এবং জনসাধারণের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিনি নিরলস কাজ করছেন।

করোনা সংকট ও বন্যার মধ্যেও খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে তিনি বেশকিছু উদ্যোগ নিয়ে সর্বমহলের প্রশংসা পেয়েছেন। কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়াতে সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করা, মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং শাকসবজির বিপণন, সরবরাহ ঠিক রাখা ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

সূত্র মতে, শাকসবজি, আলু ও ফলমূল রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক। রপ্তানির বাধাসমূহ দূর করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শাকসবজি, আলু, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি শাকসবজি, ফলমূল রপ্তানির জন্য একটি ও আলু রপ্তানির জন্য একটি মোট দুটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে।

খসড়া রোডম্যাপে দেয়া সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০২১-২২ সালে ১.৬৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (সম্ভাব্য) এবং ২০২২-২৩ সালে (জুন পর্যন্ত) দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার (সম্ভাব্য) আয় করা সম্ভব হবে। আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০২২ সালে ৮০ হাজার টন, ২০২৩ সালে এক লাখ ২০ হাজার টন, ২০২৪ সালে এক লাখ ৮০ হাজার এবং ২০২৫ সালে দুই লাখ ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা সম্ভব বলে খসড়া রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে  দেশে চালের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। গড় উৎপাদনশীলতাও বেড়েছে। এখন দেশে প্রতি শতাংশ জমিতে এক মণ করে ধান উৎপাদন হয়। দেশে বছরে এখন ৬০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। আগে যে ক্ষেতে ধানের চাষ হতো সেখানেই ভুট্টা চাষ হচ্ছে। ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন ঘাতসহনশীল জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্যক্রম আধুনিকায়ন করা হয়েছে। গবেষক-বিজ্ঞানীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে বেশকিছু আধুনিক ল্যাব।  

গত ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইউরিয়া সারের মজুদ ছিলো ৬.৩৩ লাখ মেট্রিক টন। টিএসপি ১.৮৪ লাখ মেট্রিক টন। ডিএসপি ৭.১১ লাখ মেট্রিক টন। এমওপি ২.৯৪ লাখ মেট্রিক টন। করোনা সংকটের ক্ষতি কাটিয়ে নিতে কৃষি খাতে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা করা হয়েছে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের মাঝে এ ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। বিশেষ প্রণোদনা ছাড়াও সারসহ সেচ কাজে বিদ্যুৎ বিলের রিবেট বাবদ কৃষি খাতে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আউশ এবং আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, বীজ ও সারসহ প্রণোদনার কারণে চলতি বছর বোরো উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি সাত লাখ ৮৪ হাজার ৫০৮ টন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। বোরোর উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১১ লাখ টনেরও বেশি হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৯৬ লাখ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। গত বছর দেশে বোরো ধানের জাতীয় গড় ফলন ছিলো প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৯৭ টন। এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৯ টনে। অর্থাৎ হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ৩২ টন, যা গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক শূন্য শতাংশ বেশি।

গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। এ বছর সবচেয়ে আশা জাগানো নতুন জাত হিসেবে উঠে এসেছে ‘ব্রি ধান ৮১’। এছাড়া ‘ব্রি ধান ৮৮’, ‘ব্রি ধান ৮৯’, ‘ব্রি ধান ৯২’ ও ‘ব্রি ধান ৯৬’ পুরোনো জাতগুলোর তুলনায় পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে দারুণ ফলন দিয়েছে। ‘ব্রি ৮১’চাষিরা বিঘাপ্রতি ৩১ মণ ফলন পেয়েছেন উচ্চ ফলনশীল এ জাত থেকে। যেখানে প্রতি হেক্টরে আগের জনপ্রিয় জাত ‘ব্রি ২৮’ উৎপাদন হতো ছয় টন, সেখানে একই জমিতে ‘ব্রি ৮১’ চাষ করে ফলন পাওয়া গেছে সাড়ে সাত টন পর্যন্ত। ফলন বেশি হওয়ায় এ বছর হাইব্রিড ধানের উৎপাদন যেমন বেশি হয়েছে, উচ্চ ফলনশীল ধানের প্রচলন ও সম্প্রসারণও বেড়েছে।

চলতি বছর ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬৬ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দুই লাখের বেশি হেক্টর জমি। আউশ ধানের আবাদ বাড়ানোর জন্য চার লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৪ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ দেয়া হয়েছে। প্রায় ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৫৬ লাখ টন। এজন্য উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়ানো, পর্যাপ্ত বীজ, সার ও সেচের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমনের উৎপাদন বাড়াতে সরকার এবারই প্রথম বীজে ভর্তুকি দিচ্ছে। বিএডিসির ১৯ হাজার ৫০০ টন আমন ধান বীজ চাষি পর্যায়ে বিক্রির জন্য ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রতি ইউনিয়নে ৩২টি করে পারিবারিক সবজি পুষ্টিবাগান তৈরির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এজন্য ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলায় এক লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ, চারা ও সার দেয়া হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ২৪০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫০০টি রিপার বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে এবং উপকূল ও হাওর এলাকায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষকের মধ্যে এসব কৃষিযন্ত্র দেয়া হয়েছে। প্রায় তিন হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।

এরমাধ্যমে প্রায় ৫২ হাজার কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার ও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার নামের কৃষিযন্ত্র কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। বিএডিসি ও অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানির উৎপাদিত আউশ, সবজি ও পাটবীজ মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। রবি মৌসুমে উৎপাদিত আলুবীজ সংগ্রহ করে হিমাগারে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে বিএডিসির আলুবীজ সংগ্রহের পরিমাণ ৩৪ হাজার ৫০০ টন এবং বেসরকারি কোম্পানির প্রায় ৮৫ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার টন বেশি। ১১ অক্টোবর  পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ ১৫.৬১ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল ১৪.৩৪ লাখ মে. টন, ধান ০.১৮ লাখ মে. টন এবং গম ১.১৬ লাখ মে. টন।