Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

‘আরসা’ এখন ব্যবসার ঘুঁটি

অক্টোবর ২৫, ২০২১, ০৯:২০ পিএম


‘আরসা’ এখন ব্যবসার ঘুঁটি

‘আরসা’— আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি। পুরোনো নাম— হারাকাহ আল ইয়াকিন। প্রধান নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। জন্ম পাকিস্তানের করাচিতে। বড় হয়েছেন সৌদি আরবের মক্কায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ, মিয়ানমার বর্মি সীমান্তে সামরিক চৌকিতে হামলার প্রধান নির্দেশদাতা। প্রতিশোধমূলক ওই হামলায় ৪৪ জন বেসামরিক লোক মারা যান, অপহূত হন ৩০ জনেরও বেশি। ওই ঘটনার পর শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা। ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সরকারি হিসাবে। 

দু’-একটি সংস্থা বলছে, প্রতি বছর প্রায় ২৯ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে আসা এ নিয়ে বাংলাদেশে এখন প্রায় ১৬-১৭ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান। বাংলাদেশের জন্য আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন ভূখণ্ড ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলছে খুনখারাবি, নারী, অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা। পাঁচ বছর হতে চললেও হচ্ছে না প্রত্যাবাসন। এর পেছনে এখন বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সশস্ত্র ‘আরসা’ সন্ত্রাসী সংগঠন। রাজনৈতিক সমঝোতায় না বসে সশস্ত্র অ্যাকশনই উদ্দেশ্য হয়ে গেছে গোষ্ঠীটির। আরসার বার্তা— ‘তারা মিয়ানমারে বড় হামলার আগে বাংলাদেশ থেকে ফিরবে না’। 

এ ছাড়া ‘আরসা’ নিয়ে অভিজ্ঞ রোহিঙ্গারা বলছেন, আরসার বড় অংশই এখন মিয়ানমারের এজেন্ট। টার্গেট অস্ত্রের ব্যবসা। বিশেষ ব্যবস্থায় আরাকানে বসে আতাউল্লাহ উখিয়ায় সেনাদের এমন বার্তা দিচ্ছেন। চীন ও ভারতের তৈরি অস্ত্র আসছে আরসার কাছে। পরিশোধ করা হয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ। মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে সেই অস্ত্র ঢুকছে। গঠন করা হয়েছে ক্যাম্প ও পাহাড়ভিত্তিক আরসার সশস্ত্র কমিটি। রোহিঙ্গারা জানে আরসার বিষয়ে। মাদ্রাসা ও হেফজখানায় চলছে আরসার চাঁদার রাজত্ব। 

আরসার পকেটেই ঢুকছে এনজিওদের বড় অংকের অর্থ। উদ্দেশ্য এক হয়ে গেছে এ দুই সংগঠনের। শিক্ষক ও কুরআনে হাফেজদের ওপর আরসার বর্বরতা নিয়ে বিস্মিত রোহিঙ্গারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় আরসার উইং। উপরিউক্ত তথ্য নিয়ে পালিয়ে আসা রাখাইনের মেম্বার, আরসার দুই সদস্য ও রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা হয় আমার সংবাদের। প্রত্যাবাসনে জনমত গঠনে প্রশাসনকে যারা সহযোগিতা দিচ্ছে, ওইসব রোহিঙ্গার তালিকা করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে আরসা। এ নিয়ে ঘটেছে প্রায় শত খুনের ঘটনা। হত্যা করা হয়েছে  মাস্টার মুহিবুল্লাহকে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ভোরে সাত নিরীহ মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। 

মিয়ানমারে বড় হামলার আগে ফিরবো না —আরসা : আরসার দুই সদস্যের সাথে আমার সংবাদের কথা হলে তারা জানিয়েছে, তারা এখনই মিয়ানমারে ফিরতে চায় না। মিয়ানমারে ফিরে তারা এখনই কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারবে না। তাদের প্রধান নেতা আতাউল্লাহ বার্তা দিয়েছেন, তাদের আপাতত বাংলাদেশে শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকতে। তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে বড় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে তারপরই আরাকান দখল করবে। 

বিশেষ ব্যবস্থায় আরাকানে আতাউল্লাহ, সেনারা উখিয়ায় : নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় অবস্থান করা আরসার এক শীর্ষ নেতা এনায়েত উল্লাহ ও রাখাইনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আব্দুল করিমের সাথে কথা হয় আমার সংবাদের। তারা দাবি করেছেন, আরসার প্রধান নেতা আতাউল্লাহ বিশেষ ব্যবস্থায় আরাকানেই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি আরাকান ছাড়েননি। দুই-এক দিন পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফোন করেন। এখানকার নেতাদের সাথে কথা বলেন, দিকনির্দেশনা দেন। রাত গভীর হলে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাহাড়ে মিটিং হয় বলেও জানিয়েছেন তারা।

রাজনৈতিক সমঝোতায় না বসে সশস্ত্র অ্যাকশনই উদ্দেশ্য : রাজনৈতিক সমঝোতায় না বসে সশস্ত্র অ্যাকশনের মাধ্যমে আরাকান বিজয় চায় আরসা। ক্যাম্পে থাকা শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ বলছেন, সেনাদের সাথে উগ্রবাদিতায় না জড়িয়ে যদি শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক সমঝোতায় বসা হতো তাহলে হয়তো তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে হতো না। আরসার নেতৃত্ব লড়াইয়ের জন্য সাধারণ রোহিঙ্গারা এখন দেশছাড়া। মিয়ানমার সরকারও বলছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি —আরসা ২০১৭ অক্টোবরে রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়। সরকারি বাহিনীর সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তারা। তাই সরকার নাগরিকদের রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।’ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমার সরকার বলছে, এই গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা জিহাদিরা, যারা বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’ তাদের এক রিপোর্টে বলছে— সংগঠনটি মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে। মক্কায় থাকে এমন ২০-২৫ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি গড়ে তোলে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে এদের যোগাযোগ রয়েছে।

চীন ও ভারতের তৈরি অস্ত্র আসে আরসার কাছে : আরসার সদস্যরা বলছে, তাদের কাছে যে অস্ত্র আসে তার বেশির ভাগই চীন ও ভারতের তৈরি। ভারী অস্ত্র পরিচালনার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই দুই দেশকে মোটা অংকের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে আরো শক্তিশালী অস্ত্রের জন্য। অস্ত্রগুলো মিয়ানমার হয়েই বাংলাদেশে আসে বলে তারা জানিয়েছে।

আরসার পকেটেই ঢুকছে এনজিওদের বড় অংকের অর্থ : ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বলছেন, বিভিন্ন বড় এনজিওর টাকা আগে আরসাকে দিতে হয়। না দিলে হুমকি দেয়া আছে এনজিওগুলোর ওপর। তাদের অনেকের কাছে তথ্য রয়েছে— অন্তরালে বিদেশি এনজিওগুলোর টাকার ভাগ আগে আরসার কাছে চলে যায়। তারা মনে করছেন, এনজিওগুলোর উদ্দেশ্য ও আরসার উদ্দেশ্য এখন এক হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হলে প্রত্যাবাসনবিরোধী গ্রুপটির (আরসা) সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। মিয়ানমার এবং কিছু এনজিও থেকে মাসিক মোটা অংকের অর্থ পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আশ্রয়শিবির থেকে মাসোহারা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে আরসার ক্যাডাররা। তাই প্রশাসনকে প্রত্যাবাসনে সহযোগিতাকারী রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে হত্যা করে চলেছে আরসা ক্যাডাররা।

আরসার বড় অংশই এখন মিয়ানমারের এজেন্ট : আন্তর্জাতিক একটি বিশেষ গোষ্ঠীর হয়ে কাজ শুরু করলেও  সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘আরসা’ আশ্রয় শিবিরে মিয়ানমারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বলে তথ্য মিলছে। এমন অভিযোগ রোহিঙ্গাদের বড় অংশের। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাবিরোধী মিয়ানমারে যে শক্তিগুলো তৎপর মূলত তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আরসা কমান্ডারের নির্দেশে ক্যাম্পে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের হত্যা করে চলেছে। আশ্রয় ক্যাম্পে নানান অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে আরসার পূর্বপরিকল্পনায়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাতের বেলায় আরসা ক্যাডারদের রামরাজত্ব চলে। 

মাদ্রাসা ও হেফজখানায় চলে আরসার চাঁদার রাজত্ব : সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা ক্যাডাররা উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত ৩৪টি ক্যাম্পে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে থাকে। এসব ক্যাম্পে অন্তত দুই শতাধিক মাদ্রাসা ও হেফজখানা রয়েছে। প্রতিটি মাদ্রাসা থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হারে আরসা সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়। টাকা দেয়ার সময় হাসিমুখে না দিয়ে মুখভার করে দিলেও খেসারত দিতে হয়। মাদ্রাসায় শিক্ষকতার দায়িত্বে থাকা প্রত্যেকের কাছ থেকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে থাকে আরসা। আশ্রিত রোহিঙ্গারা বলছেন, সমপ্রতি দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে আরসা ক্যাডারদের মাসিক চাঁদা দিতে গড়িমসি করতেন শিক্ষকরা। তাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শীর্ষ নেতার নির্দেশে সমপ্রতি  শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে। ওস্তাদদের বাঁচাতে এগিয়ে এলে শিক্ষার্থীদের ওপরও নির্দয়ভাবে গুলি চালায় আরসা ক্যাডাররা।

শিক্ষক ও কুরআনে হাফেজদের ওপর আরসার বর্বরতা : শিক্ষক ও কুরআনে হাফেজদের ওপর আরসার বর্বরতা গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। সমপ্রতি সাত মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষককে খুনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রতাবাসন উদ্যোগ নেয়া নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহকেও আরসা খুন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার ভাই। এর আগে আরসা বালুখালী ক্যাম্পের মাস্টার আরিফ উল্লাহ, হাফেজ শফিকুল ইসলাম, মুফতি আবদুল্লাহকে খুন করে। আরসার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সমালোচনা করে ফতোয়া জারির কারণে একজনকে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই এশার নামাজরত অবস্থায় জামতলী ক্যাম্প থেকে আরসা সন্ত্রাসীরা উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করে লাশ ঘুম করে ফেলে। মাওলানা মো. হাশিম একজন প্রখ্যাত আলেম ও বর্ষীয়ান শিক্ষক। এ ছাড়া  মাস্টার আরিফ উল্লাহ রোহিঙ্গাদের মাঝে হাতেগোনা কয়েকজন ইয়াঙ্গুন (রেঙ্গুন) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজ্যুয়েটদের মধ্যে একজন। আরসার বহু বর্বরতার সাক্ষী ছিলেন এই আরিফ উল্লাহ। আরসার হয়ে কাজ না করায় ২০১৮ সালের ১৮ জুন বালুখালী থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ও কুপিয়ে তাকে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। এমন আরো অনেক হত্যার সাক্ষী রোহিঙ্গারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় আরসার উইং : রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আরাকানের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় আরসার উইং। ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার সরকার ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী যখনই আরসার সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলেছে তখনই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও বার্তা ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে। সর্বশেষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর তার ভাই হাবিব উল্লাহ ঘটনার জন্য আরসাকে দায়ী করেন। সঙ্গে সঙ্গে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরসার প্যাডে এর অধিনায়কের স্বাক্ষর ও সিলযুক্ত এক বিবৃতিতে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।

ক্যাম্প ও পাহাড়ভিত্তিক রয়েছে আরসার সশস্ত্র কমিটি : সৌদি আরবে বসেই ৮৩৩ জন সদস্য নিয়েই আরসার কমিটি গঠন করা হয়। সেই থেকে তারা এখন দুই ধাপে কমিটি দিচ্ছে। এক রাখাইনে গ্রামভিত্তিক, অন্যদিকে বাংলাদেশে পাহাড়ে অবস্থানরত ও ক্যাম্পে। নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত আরসা সদস্যের ভাষ্য— প্রত্যেক পাড়াভিত্তিক কমিটি তারা সম্পন্ন করেছেন। ১৩ গ্রামে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের পরিচয় জিম্মাদার। দায়িত্বরতদের প্রায় ৩০ ভাগ উচ্চ শিক্ষিত।

টার্গেট অস্ত্রের ব্যবসা, সংগঠন তৈরি সৌদি আরব থেকে :  ২০১২ সালের শেষ দিকে সৌদি আরবে অবস্থানরত মাওলানা আবুল কালাম হায়দারী ও মাওলানা আবুল হাসান হায়দারী প্রথমে আরসার সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেন। তারা দুজনই রোহিঙ্গা। আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াও তারা একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেন। ওই সময় সৌদি আরবে ছিলেন বর্তমান আরসা প্রধান আতাউল্লাহ। ২০১৩ সালে নেতৃত্বে আসা আরসার প্রথম দল মিয়ানমারে প্রবেশ করে। সরকারি গোষ্ঠীর ওপর হামলার ছক কষাকালে ওই বৈঠকে আটজনকে মেরে ফেলা হয়। সেই থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে আরো উগ্রবাদিতা বেড়ে যায়।

এক সময় আরসার সদস্য ছিলেন আরাকানের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল করিম। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে। পরে আমি বুঝতে পারি তাদের বড় অংশ অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত। তাই আমি বেরিয়ে পড়ি। আমিও এখন হুমকির মুখে আছি।’ 

পালংখালি ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের চারটি সন্ত্রাসী সংগঠন তৎপর আছে। গ্রুপের সদস্যরা নানা অবৈধ ব্যবসা করে। তাদের ক্যাম্পে দোকানপাট আছে। রোহিঙ্গারা চলে গেলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তারা ক্যাম্পের ত্রাণসামগ্রী বাইরে বিক্রিও করে। তাদের মিয়ানমারের সেনারা শেল্টার দেয়। তাদের দিয়ে ইয়াবা কক্সবাজারে পাঠায়। তাদের কিছু রোহিঙ্গা আছে ছয় মাস কক্সবাজার ক্যাম্পে এবং ছয় মাস মিয়ানমারে থাকে। এখানে আরসা এবং আরএসও নামেও দুটি উগ্রপন্থি গ্রুপ আছে। তারা কেউই মিয়ানমারে ফিরতে চায় না, কারণ তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চিন্তা করবে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘসহ আরো অনেকে কিন্তু এখন চুপ। নীরব কেন, এর রহস্য কোথায়? তারা কেন মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করছে না, সারা পৃথিবীর মানুষ জানে মিয়ানমার অস্ত্রের ব্যবসা করে, মাদক— ইয়াবা তৈরি করে। এখন কেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো ঘুমিয়ে আছে? তারা কেন এর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ইয়াবা কোথা থেকে আসে, অস্ত্র কোথা থেকে আসে, তারা কি তা জানে না? বাংলাদেশ তো ইয়াবা তৈরি করে না, অস্ত্র তৈরি করে না, কারা করে— মিয়ানমার করে! এখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের এমন প্রতিটি ঘটনার দায় মিয়ানমারকে বহন করতে হবে। আমরা যদি বলি মাদকের উপাদান তৈরি করে মিয়ানমার আর কেমিক্যাল দেয় ভারত। এটি আমরা সবাই জানি। তাহলে কি আমরা ধরে নেবো এই সংঘাতের পেছনে, এই অস্ত্র-মাদকের পেছনে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিগুলো লাভবান হচ্ছে! এ জন্যই তারা মাদকের বিরুদ্ধে, অস্ত্রের বিরুদ্ধে, সংঘাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।’