Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি নির্মূলে অতন্দ্র প্রহরী

অক্টোবর ২৬, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি নির্মূলে অতন্দ্র প্রহরী

কাস্টমস সংক্রান্ত সব অপরাধের পাশাপাশি স্বর্ণ, মাদক, বৈদেশিক মুদ্রা সহ যেকোনো ধরনের চোরাচালান ক্ষিপ্রতার সাথে মোকাবিলায় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকির অপতৎপরতা রোধে গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে কাস্টমস গোয়েন্দাদের মাঠ তৎপরতাও বেশ লক্ষণীয়। 

সামপ্রতিক সময়ে বেশকিছু স্ট্র্যাটেজিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ফলে আরও আধুনিক, যুগোপযোগী ও সুসংহতভাবে মাঠকার্যক্রমকে শানিত করেই চলছে কাস্টমস গোয়েন্দারা। সময় পাল্টেছে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপরাধপ্রবণতা, বেড়েছে অপরাধের নিত্যনতুন অভিনব কৌশল ও জটিলতাও। যে কারণে শুধুমাত্র শুল্ক ফাঁকি কিংবা এ সংক্রান্ত তথ্যের পেছনে অবিরাম শ্রম ও সময় ব্যয় না করে কাস্টমস গোয়েন্দাদের দৃষ্টি এখন নতুন নতুন ডাইমেনশনের দিকেই। 

কাস্টমস গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সরাসরি তথ্যের ওপর ভর করে নয়, বর্তমানে তথ্য নিয়েই গবেষণা, বিশ্লেষণ ও সন্নিবেশনের পর সাধারণ তথ্যকে গোয়েন্দা তথ্যে রূপান্তর করে চোরাচালান কিংবা শুল্ক ফাঁকি রোধে কাজ করছে কাস্টমস গোয়েন্দারা। যা অনেকটাই ছকের পরে ছক মিলিয়ে ধাঁধার উত্তর বের করার মতো। 

তারা বলছেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও ব্যবসার স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে কেবল তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই মাঠে নামছেন না তারা, তথ্যকে গোয়েন্দা তথ্যে রূপান্তরিত করেই মাঠে নামছেন। যার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কেবল তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই মাঠে নামলে অপরাধী বা তার অপরাধ শনাক্তের অজুহাতে নিরপরাধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

সবশেষ গেলো মাসেও প্রায় সাত কেজি স্বর্ণ জব্দের ঘটনায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুর রউফ বলেছেন, চোরাকারবারিরা পাচারের ধরন পাল্টেছে। চোরাকারবারের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত থাকবে। 

তবে তিনি বলেন, অভিযানের সফলতা নির্ভর করে সঠিক তথ্যের ওপর। 

সূত্র বলছে, সাধারণ তথ্যকে গোয়েন্দা তথ্যে রূপান্তর করে অভিযানে নেমে সফলতাও মিলছে কাস্টমস গোয়েন্দাদের। কাস্টমস অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। 

এরমধ্যে ২০১৫-১৬  অর্থবছরে ছয় কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭-তে দুই কোটি ১৯ লাখ, ২০১৭-১৮-তে আট কোটি ৫৮ লাখ, ২০১৮-১৯-এ ৯৮ লাখ, ২০১৯-২০-এ ৮০ লাখ, ২০২০-২১ এ ৮৪ লাখ ও চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৬ লাখ টাকাসহ মোট ২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়। একই সময়ে জব্দ করা হয় এক হাজার ৪৫৫ কেজি ওজনের স্বর্ণ। যার বাজার মূল্য ৭৫৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। একই সময়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা পণ্য জব্দের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি।  

এছাড়াও ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জব্দ করা হয় চার কোটি ৯০ লাখ প্যাকেট বিদেশি সিগারেট, যার বাজার মূল্য ৬০ কোটি ৯৭২ লাখ টাকা। একই সময়ে জব্দ করা হয় এক লাখ তিন হাজার ৯৫৫ বোতল বিদেশি মদ, যার বাজার মূল্য সাত কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের মাধ্যমে দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের উত্তরোত্তর প্রসার ঘটানোই কাস্টমসের মূল উদ্দেশ্য। আর তাই শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও স্থানীয় বাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী ব্যবসায়ীদের নিবৃত্ত করতে সোচ্চার কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তর। যে কারণে কাস্টমস গোয়েন্দা সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজিয়েছে তার মূল কার্যক্রমকে। ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনকে যথাসম্ভব নিশ্চিত করতে ও ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাধারণ তথ্যকে গোয়েন্দা তথ্যে রূপান্তর করেই পরিচালিত হয় পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম। 

একইভাবে শুল্ক ফাঁকি রোধ ও প্রতিরোধই নয়, স্বর্ণ, মুদ্রা, মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যসহ যেকোনো ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে দেশে অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রাখছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। দেশ ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করে দেশের কাস্টমসের ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক কাস্টমস পরিমণ্ডলে উপস্থাপনের গুরুভারও বেশ দক্ষতার সাথে বহন করে চলছে অধিদপ্তর।