Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

‘মুজিব জিয়া ভাসানীই আমার আদর্শ’

রেদওয়ানুল হক

নভেম্বর ২, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


‘মুজিব জিয়া ভাসানীই আমার আদর্শ’

নুরুল হক নুর। ডাকসুর সাবেক সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডেকেছেন ‘মা’ বলে! ছাত্রলীগের হাতে বারবার মার খেয়ে নানান কারণে আলোচিত ও সমালোচিত। ডাকসু থাকাকালীন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত যাতায়াত করেছেন বিশেষ পাড়াগুলোতে। ঘুরেছেন শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দরবারে। পদের মেয়াদ শেষে সরকারবিরোধী প্ল্যাটফর্মে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন নতুন রাজনৈতিক দল। নাম দিয়েছেন ‘বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ’। ঘোষণা দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে নির্বাচনের। বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তির আদর্শকে ধারণ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন। নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান ফোকাসকে সামনে রেখে পাকিস্তানসহ সবার সাথে ভালো সম্পর্কের কথাও জানিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও ঐক্যবদ্ধতার কথা বলেছেন নুর। 

তার ভাষ্য, অতীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলন করেছিল। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন মেনে যারা রাজনীতি করেন, তাদের সবার সঙ্গে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য জোট বা যুগপৎ আন্দোলন করবেন তিনি। যার হাত ধরে রাজনীতিতে আলোচনায়, সেই হাসান আল মামুনকে ইঙ্গিত করেও দুর্বল মন্তব্য রয়েছে তার। বলেছেন, রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলে হয়তো সরকার হাসান আল মামুনের প্রতি আরো কঠোর হবে, আরো হয়রানি করবে, তাই তিনি আপাতত নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন। গতকাল আমার সংবাদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। বিস্তারিত তুলে ধরা হলো : 

আমার সংবাদ : আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ছাড়া আপনারা সবাই অপেক্ষাকৃত তরুণ। সিনিয়র কেউ বা অন্য দলের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা আপনাদের দলে যোগ দেবেন কী?
নুরুল হক নুর : বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এক রকম ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এই ভঙ্গুর অবস্থান। দেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। তাই অনেকেই পুরাতন এসব রাজনৈতিক দল আর করতে চান না, তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা শিগগিরই আমাদের দলে আসবেন। যেমন, বিভিন্ন দল থেকে এমপি নির্বাচন করেছেন, মেয়র নির্বাচন করেছেন এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন— এ ধরনের নেতাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে তারা শিগগিরই আমাদের দলে যোগ দেবেন। 

আমার সংবাদ : হাসান আল মামুন আপনাদের কমিটিতে নেই কেন? মামলা তো আপনাদের নামেও আছে, জেলও খেটেছেন অনেকে।
নুরুল হক নুর : সরকারের হামলা-মামলা এবং চাপের কারণে হাসান আল মামুন রাজনীতি থেকে নিজের ইচ্ছায় দূরে থাকছেন। দেখুন, সবাই তো আর চাপ সইতে পারে না; এখন তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলে হয়তো সরকার তার প্রতি আরো কঠোর হবে, আরো হয়রানি করবে, তাই তিনি আপাতত নিজেকে গুটিয়ে রাখছেন। এ ধরনের ঝামেলা শেষ হয়ে গেলে আমরা আশা করি তিনি আবার আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন। 

আমার সংবাদ : ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বিষয়ে আপনাদের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে? 
নুরুল হক নুর : এ বিষয়ে এখনই আমরা কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চাই না। ভবিষ্যতে আমরা আমাদের অবস্থান ঠিক করবো। যেহেতু বড় দুটি দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, অর্থাৎ তারা এর বিরোধিতা করছে না। তাই সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার বিষয়ে আমাদের অবস্থান হলো— আমরা সরকারে গেলে জনগণের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত  নেব। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে এটা নিয়ে খুব বেশি সমস্যা হবে না বরং যে যার মতো ধর্ম পালন করবে; সংবিধানে সেটা আলাদাভাবে বলা আছে। 

আমার সংবাদ : ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদের নীতি কী হবে?
নুরুল হক নুর : কোনো ধর্মই মানুষকে অন্যায় করতে বা অসহিষ্ণু হতে বলে না। তাছাড়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল শুধু বাংলাদেশ বা ভারতেই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও আছে। উদাহরণ হিসেবে জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কথা বলা যায়। মেরকেলের ধর্মীয় পার্টি জার্মানিতে কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। তবে ধর্মের নামে কেউ অপরাজনীতি করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নেব। 

আমার সংবাদ : মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট কিংবা যুগপৎ আন্দোলন করার সম্ভাবনা আছে কি না?
নুরুল হক নুর : তাদের সঙ্গে জোট বা আন্দোলন করতে সমস্যা থাকার কথা নয়। অতীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলন করেছিল। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন মেনে যারা রাজনীতি করেন, তাদের সবার সঙ্গে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য জোট বা যুগপৎ আন্দোলন করবো। 

আমার সংবাদ : গণতান্ত্রিকভাবে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসে ইসলাম কায়েম করলে তখন কী করবেন? 
নুরুল হক নুর : ইসলামী দলগুলো বিগত সময়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ভবিষ্যতে তারা কী করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে; অর্থাৎ পরিস্থিতিই বলে দেবে আমরা কী করবো। ইসলামী দলগুলো যদি পজিটিভ রাজনীতি করে, তাহলে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত। যেহেতু বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ, তাই এটি নিয়ে গায়ের জোরে কিছু বললে খুব বেশি লাভ হবে না।

আমার সংবাদ : আন্তর্জাতিক নীতিতে কোন ব্লকে থাকছেন?
নুরুল হক নুর : ব্লক মেনটেইন করে যারা রাজনীতি করেন, তারা দেশের স্বার্থ নিয়ে ডিল করতে পারেন না। ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে তারা দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেন। আমাদের দলের চার মূলনীতির মধ্যে অন্যতম জাতীয় স্বার্থ। তাই দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে আমরা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করবো। 

আমার সংবাদ : পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে?
নুরুল হক নুর : একটি দেশ নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই; সবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে। যাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে দেশের জনগণ উপকৃত হবে, তাদের সঙ্গেই আমরা সম্পর্ক রাখবো। পাকিস্তানের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সস্তা রাজনীতি করে। একদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা পাকিস্তানকে নিয়ে বিরূপ কথা বলেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য আম পাঠান— এই হলো তাদের অবস্থা। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে পারছে না। কারণ, তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার নয়। এছাড়া আমরা যতই ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিই না কেন, নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখতে হবে। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলে ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থ নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারবো। যেমন, অসম বাণিজ্যচুক্তি ও সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলতে পারবো। ভারতকে বলবো, আমাদের জনগণ এটা চায়।

আমার সংবাদ : নির্বাচন কমিশন নিয়ে আন্দোলন কেন নয়? 
নুরুল হক নুর : নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলকানা ও অযোগ্য লোক বসিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা ধ্বংস করেছে বর্তমান সরকার। এমনকি সামরিক বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলনিরপেক্ষ অবস্থান একসময় ছিল, যা এখন নেই। তাই কেবল একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘নির্বাচন কমিশন’ নিয়ে আন্দোলন করে কোনো লাভ হবে না। আমাদের প্রধান ফোকাস নিরপেক্ষ সরকার; সেটি প্রতিষ্ঠিত হলে নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য বিষয়েও পরিবর্তন আনা যাবে।

আমার সংবাদ : বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে রাজনীতি করলে সাধুবাদ, অন্যথায় কঠোর হওয়ার কথা বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এতে আপনার মন্তব্য কী?
নুরুল হক নুর : আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাদের গায়ের জোরে কথা বলা উচিত নয়। তাদের জনগণের ভাষা বুঝতে হবে। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কী আছে? প্রয়োজন হলে মিলেমিশে কাজ করবো। আর যদি তারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখে, তাহলে তাদের টেনে নামানোর চেষ্টা করবো— এটাই তো বাস্তবতা। এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক মানের একজন নেতা; তার আদর্শ মেনে চলতে সমস্যা নেই। তবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের একমাত্র নেতা নন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুরও নেতা ছিলেন। এছাড়া জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করেছেন। তাই আমরা সবাইকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে চাই।

আমার সংবাদ : আন্দোলন ইস্যুতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন কি না?
নুরুল হক নুর : এখনই সংলাপ নয় বরং আমরা প্রথমে দল গোছানোর কাজ এগিয়ে  নেব। আমরা একটি নতুন দল করেছি। এখন সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে চাই। এরপর সিদ্ধান্ত নেব জোট করবো, না একক আন্দোলন করবো। এ ছাড়া দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের উত্থাপিত ২১ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধ, ক্ষমতার ভারসাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসন, ভোটাধিকার, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও ধর্মাবলম্বী, দখল-দূষণ প্রতিরোধ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাবে দলটি।