Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

গণতন্ত্রের কবরে ছাত্রদল

নভেম্বর ৩, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


গণতন্ত্রের কবরে ছাত্রদল

মেয়াদ শেষ! গত ১৯ সেপ্টেম্বর। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির। ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের। এর মধ্যে পার হয়েছে আরও দেড় মাসেরও বেশি সময়। ‘আংশিক’ কমিটি দিয়েই নির্দিষ্ট সময় পার। ব্যর্থ হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে। দুই বছরেও ঢাকার বুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পায়নি কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দলীয় অফিস, প্রেসক্লাবে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পেছনে স্লোগান দিতে দিতেই সময় পার করেছেন। এর মধ্যে ঢাকার শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো হয়েছে নেতৃত্ববিহীন মরুভূমিতে। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আমরা আন্দোলন করলেও আমাদের নিজেদের দলেও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। ঢাকার  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি না থাকায় আমাদের অবস্থান প্রায় কবরে পৌঁছে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, এখন খোকন-শ্যামলের মেয়াদ যেহেতু গঠনতান্ত্রিকভাবে শেষ নতুন কমিটির  সম্ভাবনা আছে। তাই রহস্যজনকভাবে সময় শেষ করে ঢাকার প্রতিষ্ঠানে কমিটির কথা শুনতেছি। যা হওয়া উচিত ছিলো আরও দুই বছর আগে। 

এখন কেন্দ্রীয় নতুন কমিটিকে সামনে রেখে কয়েক মাসের জন্য ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি দেয়া হবে, আবার কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি হলে এই কমিটিগুলো আকস্মিকভাবে যে কোনো মুহূর্তে কয়েক মাসের মধ্যে ভেঙেও দেয়া হতে পারে! 

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন যে কমিটিগুলো হবে তা একমাত্র আগামী কমিটির পথকে সুস্পষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করতে করতে ছাত্রদলের অবস্থা এখন কবরে। যদি আগামী কমিটির পথ সুস্পষ্ট করতেই দুই বছর সময় পার করে এখন কমিটি দেয়া হয় তা হবে গঠনতান্ত্রিক ও গণতন্ত্র চর্চার পরিপন্থী। 

জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর ছাত্রদলের ১১ সাংগঠনিক টিম বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির নির্ভরযোগ্য কয়েকটি নেতার ভাষ্য, বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়ায় এ কমিটি ভাঙা হয়েছে। সামনে নতুন কমিটির সম্ভাবনা থাকায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। যদিও দাবি করা হয়েছে, ছাত্রদলের নেতৃত্বকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিম পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিদ্যমান ১১টি সাংগঠনিক টিম বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। 

এদিকে দুই বছর দেড় মাসের অধিক সময় পার করেও রাজধানীর বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বাঙলা কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কমিটি দিতে পারেনি ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল। তাই ঢাকার বুকে ঝিমিয়ে পড়েছে ছাত্রদলের কার্যক্রম। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অংশ দিয়েই দলীয় মিটিং-মিছিলগুলোর চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। উঠে আসেনি এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নতুন নেতৃত্ব। হারিয়ে গেছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ছাত্রদলের জৌলুস। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের কমিটি গঠন হয়নি। অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে করোনাকালীন সময়কে। এই বক্তব্যকে ছাত্রদলের মাঠপর্যায়ের বড় অংশই প্রত্যাখ্যান করছে। দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি হলেও সমন্বয় নেই। এখন পর্যন্ত ঢাবির কয়েকটি হলেও কমিটি দিতে পারেনি।

বিএনপির হাইকমান্ডের এক শীর্ষ নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক এক সভাপতি আমার সংবাদকে বলেন, দুটো বছর শেষ করেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারা এটি ছাত্রদলের অতীত গৌরবের পরিপন্থী। আংশিক কমিটি দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করতে পারেনি ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি। এটি অবশ্যই দায়িত্বরতদের জবাবদিহিতার অংশ। বিএনপির কর্মসূচিতে পল্টন প্রেসক্লাবকেন্দ্রিক নিজেদের সরব দেখালেও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অবস্থান নেই। ছাত্রদলের কাজ হবে শুধু বিএনপির মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করা কিংবা পল্টনে এসে স্লোগান তোলা নয়, তাদের সাংগঠনিক কাজ গঠনতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করা। যেখানে মেয়াদ শেষ করেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয় না সেখানে অবশ্যই ব্যর্থতার দায় থেকে যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক  ইকবাল হোসেন শ্যামল আমার সংবাদকে বলেন, করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাজনীতির ওপর বড় একটা প্রভাব পড়েছে। এজন্য আমাদের চেষ্টা থাকলেও আমরা অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি দিতে পারিনি। আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন কমিটি দেব। ইতোমধ্যে আমাদের ছাত্রদলের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন কমিটির চিন্তাও হচ্ছে। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ হাইকমান্ডের হাতে তারা কবে নতুন কমিটি দেবেন। আমরা এটুকু বলতে পারবো, আমরা সাংগঠনিক কাজ গঠনতান্ত্রিকভাবে করে যাচ্ছি। করোনার সময়ে যে কাজগুলো থমকে ছিলো সেগুলো আমরা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। 

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খান আমার সংবাদকে বলেন,  শুধুমাত্র আমাদের ছাত্রদলের মেয়াদ শেষ হয়েছে তেমনটি নয়, যুবদলসহ অনেকগুলো অঙ্গসংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। একটা রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিকতা যেভাবে চলে, ছাত্রদল সেভাবে সুসংগঠিতভাবে সাংগঠনিক কাজ অব্যাহত রেখেছে। ছাত্রদলের কমিটি কখন কিভাবে দেবে এটি সম্পূর্ণ হাইকমান্ডের দায়িত্ব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দলের মহাসচিবসহ তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। তবে আমাদের কাজ হচ্ছে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চলমান রাখা। আমরা সেটি শতভাগ ধরে রেখেছি। দলকে সুসংগঠিত রাখার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তা ঘোষণা হবে। ছাত্রদল অবশ্যই সাংগঠনিক কাজের মাধ্যমে অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখবে।