Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

শেষ পৃষ্ঠায় খালেদা জিয়া

নভেম্বর ১৬, ২০২১, ০৫:১৫ পিএম


শেষ পৃষ্ঠায় খালেদা জিয়া

রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এখন শুধু কিছু দিন পরপর অসুস্থতা, চিকিৎসা ও মুক্তি নিয়ে আলোচনায় আসেন। আটকের পর দীর্ঘ সাজা ও সরকারের করুণায় মুক্তি পাওয়ার মাঝে বিএনপির শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার জন্য কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেননি যাতে সরকার তকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ঘরোয়া প্রোগ্রাম ও প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করেই দায় সেরেছেন দলটি। ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে করেছেন নির্বাচন। গিয়েছেন শেখ হাসিনার ডাকে সংলাপেও। খালেদা মুক্তির বিষয়টি পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়েছে দলটি। 

বিএনপির বড় অংশ থেকে প্রশ্ন উঠেছে— খালেদা জিয়া কার? নেত্রী পারিবারিক ইস্যু নিয়ে সাজা খাটছেন নাকি দলীয় ইস্যু নিয়ে? যদি দলীয় ইস্যুতে বা রাজনৈতিক ইস্যুতে খালেদা জিয়ার সাজা হয় ও বিদেশ যাত্রার পথ কঠিন হয় তাহলে মুক্তির দায়িত্ব কেন পরিবারের হাতে। গত ১৫ নভেম্বর সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পুনঃরায় পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। 

শুরুতে বিষয়টি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মিডিয়া উইং ও হাইকমান্ডের কেউ স্বীকার করেনি। কিন্তু একদিন পর ঠিকই মুখ খুলেছেন। আবেদন নিয়ে এমন লুকোচুরিকেও মাঠ পর্যায়ের নেতারা সন্দেহের চোখে দেখছেন। আসলে আদৌ কী বিএনপির হাইকমান্ড খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় নাকি পর্দার আড়ালে খালেদা বিষয়টি এভাবে ঝুলিয়ে রেখে নেত্রীকে মাইনাস করতে চায়।

খালেদাপন্থিরা বলছেন, দলে এখন খালেদা জিয়ার অবস্থান বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার মতো। প্রথমে বিএনপির কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে— কয়েকটি দেশকে সন্তুষ্ট রাখা, সমঝোতার রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন। দলের বড় একটি অংশ থেকে অভিযোগ উঠেছে, কারাবন্দি হয়ে খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্বের বাইরে থাকায় সংস্কারবাদী-বামপন্থি নেতারা বিএনপিতে কৌশলে তাদের বীজ বপন করছেন। এতে করে বিএনপি চলে যাচ্ছে জনগণের বাইরে, দলের মূল চরিত্র থেকে দূরে। 

খালেদাপন্থিদের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র আমার সংবাদকে জানায়, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর ও নির্বাচনের আগ থেকেই বিএনপির নেতৃত্ব বাম রাজনীতির কৌশলে চলছে। পাশের একটি দেশ, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিজনেস পলিসির জন্য বিএনপিতে বাম রাজনীতির আদর্শ তৈরি করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের লোভে দলের বড় একটি অংশ খালেদা জিয়ার মুক্তিতেও নীরব রয়েছেন। 

আন্তর্জাতিক ওই মহলটি কোনোভাবেই চাচ্ছে না, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশে আন্দোলন-সংগ্রামের নামে কোনো অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধের নামে কোনো সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। সবসময় মহলটি খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপিকে আশ্বাস দিয়ে রাখছে, সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছে। কয়েক মাস পরপর খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। 

তবে খালেদাপন্থি নেতারা এই আশ্বাস বিশ্বাস করেন না। তারা মনে করেন, আন্দোলন ছাড়া কোনোভাবেই খালেদা জিয়াকে এই সরকার মুক্তি দেবে না, যতক্ষণ না আন্দোলন করে এই সরকারকে বাধ্য করা হয়। আর যদি ক্ষমতাসীন সরকারের ছকে কিংবা সমঝোতায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হয় তাহলে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রীর অর্জিত সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ রাজনীতি আজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে।

দলে রাজনীতির নানান জটিলতায় খালেদা জিয়া মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন। গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিতে হয় করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিউতে)। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপ আর বেশ কয়েকবার বমি করার কারণেই তৎক্ষণাৎ নেয়া হয় সেখানে। এছাড়া সিসিইউতে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে তাকে দুই ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে এসব খবরে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দলটির নেতাকর্মীদের। 

খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিশ্চিতে মৃত্যু হবে নাকি বিনাচিকিৎসা বড় বিপদের সম্মুখীন হবে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘মেডিকেল বোর্ড তাকে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছে। তাকে দেশের বাইরে নেয়ার বিকল্প নেই বলেও মতামত দিয়েছেন চিকিৎসক দলের সদস্যরা। নিয়মিত দেশের বাইরে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসাগুলো হতো তা এখন বাংলাদেশে নেই। এখন খালেদা জিয়ার প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের লাখ লাখ মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। কিন্তু সরকার চায় না, কারণ সরকার তাকে ঘোর বিরোধী মনে করে। বেগম জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একটা মামলায় যদি সাজা দেয়া হয়, হাইকোর্ট সে মামলা থেকে আরেকটু সহানুভূতিশীল হয়ে সাজা কমিয়ে দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বেগম জিয়াকে হাইকোর্ট পাঁচ বছর সাজা বাড়িয়ে দিয়েছেন। হত্যা মামলার আসামি বিদেশ গিয়ে বসে থাকে, অথচ বেগম জিয়াকে চিকিৎসাও করতে দেয়া হবে না।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, অনেক বেশি অসুস্থ। আমি ঠিক আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না যে, গতকাল তিনি প্রথম সিসিইউতে তার বেড থেকে চেয়ারে বসেছেন এবং অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় আছেন।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। সরকারের কাছে আহ্বান, তাকে দ্রুত বিদেশে যেতে দেয়া হোক। অন্যথায় সব দায় দায়িত্ব এই সরকারকেই বহন করতে হবে। যদিও একদিন আগে মহাসচিব গণমাধ্যমকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে আবেদন নিয়ে তিনি জানেন না। 

তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে তিনি জানতে পেরেছেন, খালেদা জিয়ার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে আবেদন করেছেন।’