Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

এবার সিটিং পাঁয়তারা

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নভেম্বর ১৭, ২০২১, ০৫:২০ পিএম


এবার সিটিং পাঁয়তারা

জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার, সুযোগে তেলে চালিত পরিবহনের ভাড়াও বাড়িয়ে নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। আর ঘোলা জলে হাবুডুবু খেয়েই যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। হালের চিত্রে দেখা যাচ্ছে, পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এবার সিটিং কিংবা গেটলক সার্ভিস চালু রাখার পাঁয়তারায় মত্ত রয়েছেন। সড়কে পরিবহনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেই এবারের ঘোলা জলে সিটিং সার্ভিস নামক মাছ ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা —এমনটাই বলছেন সড়কে ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ। 

এদিকে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করেই নিজেদের দাবি আদায়ে সফল হওয়ার পরও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে মতের অমিল। যার প্রভাব পড়েছে সড়কে আর ভুক্তোভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বিআরটিএর সাথে আলোচনার মাধ্যমে দূরপাল্লার পরিবহন ও নগরীর গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। তারা বাড়িয়েছেন ২৭ শতাংশ, অপরদিকে নতুন ভাড়ার ওপর সিটিং বাসগুলো ভাড়া নির্ধারণ করেছে ১৫ শতাংশ। এই নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সাথে মতের অমিল হওয়ার কারণেই ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। 

পরিবহন চালক-হেল্পাররা বলছেন, প্রতিদিনই যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে তর্ক ও ঝগড়া হচ্ছে। নতুন ভাড়া অনুযায়ী যাত্রীরা দিতে চাচ্ছেন না। এদিকে পরিবহনের মালিকরাও পরিবহনের জমা ভাড়ার সাথে মিলিয়ে নিতে চাচ্ছেন। এখন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে দিনে চারটি ট্রিপ দিলে তেল খরচসহ সব মিলিয়ে আমাদের বেতনও ওঠে না। এতে আমরাও বিপাকে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা গাড়ি বন্ধ রেখেছি। তারা বলছেন, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা এ বিষয়ে বসে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত দিলে আগের মতো গাড়ি চলবে। 

মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের অধিকাংশ বাস বন্ধ রয়েছে। এই পবিহনের কয়েকটি বাসের মালিক মো. সুমন বলেন, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা কথা রয়েছে। সেখানে আমরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী আমরা চলবো।

জানা গেছে, সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাজধানীর বিভিন্ন রুটেও বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এর মধ্যে বন্ধ রয়েছে রজনীগন্ধ্যা পরিবহনও। এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। 

এদিকে মিরপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীবাহী বাস চলাচল কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেককেই হেঁটে নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে গতকাল। আবার কেউ কেউ গন্তব্যে গেছেন সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর-১, ১০, ১১, ১২, কালশি, পূরবী, সিরামিক রোডে যাত্রীবাহী বাস ছিলো অন্যান্য সময়ের তুলনায় খুবই কম। রাস্তার দুপাশে ফুটপাথে হেঁটে যাচ্ছেন শতশত মানুষ। 

তবে মিরপুর ১২ নম্বরের প্রধান সড়কে বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। একইভাবে উত্তরা এবং গুলশান থেকেও মিরপুরগামী বাস চলাচল কমে গেছে। গুলশান থেকে মিরপুর ১০ নম্বরে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আমিনুল ইসলাম। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাননি। 

তিনি বলেন, অন্যান্য দিন কিছুক্ষণ পরপরই মিরপুরের বাস পেতাম। কিন্তু আজ বাসের দেখা নেই। শুনেছি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের খবর পেয়ে মিরপুরগামী বাস কমে গেছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এমন হয়রানি বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হওয়া উচিত। 

যাত্রীদের এমন হয়রানির প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে সরকার বাসভাড়া বাড়িয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন তারা। এর সঙ্গে যাত্রী হয়রানিও বেড়েছে। 

পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, পল্লবী এলাকায় বাস চলছে। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে গাড়ির সংখ্যা কম। এ ছাড়া হাফপাশের দাবিতেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। হাফ পাশ চাওয়ায় রাইদা পরিবহনের এক চেকার রাজধানীর একটি কলেজের শিক্ষার্থীতে ধাক্কা দিয়ে বাস ফেলে দেয়ার ঘটনা ছাড়াও মোহাম্মপুর টু চিটাগাং রোডে চলাচল করা রজনীগন্ধ্যা পরিবহনের সঙ্গে দনিয়া কলেজের এক শিক্ষার্থীর ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। 

পরে বাধ্য হয়ে হাফ পাশ অনুমোদন দিতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। ওই ঘটনার পর থেকেই এই দুই পরিবহনেরও বাস কমে গেছে রুটে। এ ছাড়াও ১৫ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায়ের দাবিও রয়েছে। যেখানে সিটিং কিংবা গেটলক সার্ভিসই বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার ও মালিক সমিতি।