Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

হাত বাড়ালেই মিলছে উচ্চতর ডিগ্রি

নভেম্বর ১৭, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


হাত বাড়ালেই মিলছে উচ্চতর ডিগ্রি

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব জায়গাতেই রয়েছে সরকার অনুমোদিত (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের সংকট। চাহিদার তুলনায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করায় ভোগান্তির শিকার হন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনসাধারণ। 

শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনসাধারণই নয়, এ সমস্যার স্বীকার খোদ ঢাকায় বসবাস করা প্রায় তিন ভাগের দুইভাগ জনগণও।  ফলে দেশের মোট জনগণের বড় একটি অংশ বাধ্য হয়েই পাড়ি জমান পল্লী চিকিৎসকদের কাছে। কিন্তু এর চেয়েও ভয়ানক দৃশ্য দেখা যায় যখন উচ্চ মাধ্যমিক পাস না করেই বনে যান বিশেষজ্ঞ অথবা এমবিবিএস ডাক্তার। 

সূত্র জানায়, অনুমোদন নেই অথচ নামের আগে এমবিবিএস (এএম) অল্টারনেটিভ মেডিসিন অথবা (এএস) অল্টারনেটিভ সার্জারি ব্যাবহার করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দাবি করেছেন দেশের প্রায় ১০ হাজার ভুয়া চিকিৎসক।  

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিসিএমডিসি নামে এক অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করছে এসব ভুয়া সনদপত্র। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিল অ্যাক্টের আওতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল’ (বিএমডিসি)।  দেশের সকল মেডিকেল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজের অনুমোদন দেয় এই প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া মেডিকেল ও ডেন্টাল পড়াশোনার পর বাংলাদেশে এ সেবা দেয়ার ব্যাপারে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরদের অনুমোদন দেয় বিএমডিসি।  দেশের চিকিৎসকদের অনুমোদন দেয়া এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে কোনোরকম সম্পৃক্ততা ছাড়াই এমবিবিএস (এএম) এবং এমবিবিএস (এএস) নামে হারহামেশাই চিকিৎসা সনদ প্রদান করছে বাংলাদেশ কম্বাইন্ড মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিসিএমডিসি) নামের এই ভুয়া প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বিসিএমডিসি নামের ভুয়া চিকিৎসক তৈরির এই প্রতিষ্ঠানের ভর্তি এবং সনদ গ্রহণে সতর্ক করলেও থেমে নেই এ চক্রের সদস্যরা। 

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ভুয়া সনদ প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের ভাইস চ্যান্সেলর দাবি করা প্রফেসর ড. শেখ গণির দেয়া অবাক করা তথ্য। ড, গণি জানান, ‘নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং অনিয়মিত হয়ে সার্টিফিকেট নিলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে।’ 

তিনি জানান, পাঁচ লাখ টাকা হলেই কাজ করিয়ে দেবো। ব্যাংকে এক লাখ টাকা জমা দিলেই সার্টিফিকেট পাবেন। প্র্যাক্টিসও করতে পারবেন পরের দিন থেকেই। 

অনুমোদনহীন এই ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক সম্পর্কে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নির্বাহী রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আমার সংবাদকে জানান, ‘বিসিএমডিসি টাকার বিনিময়ে ডাক্তার তৈরি করছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল’ ছাড়া চিকিৎসকদের সনদপত্র দেয়ার বিষয়ে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। 

টাকার বিনিময়ে যারা সার্টিফিকেট বাণিজ্য করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। একাধিক মামলাও হয়েছে ভুয়া সনদপত্র  দেয়া প্রতিষ্ঠান বিসিএমডিসির বিরুদ্ধে। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, কিছু দিন পরপর খোলস পরিবর্তন করে নতুন মোড়কে তারা সার্টিফিকেট বাণিজ্য চালায়।’ 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. সওকত আরা বিথী জানান, ‘এ সকল ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট কিনে অনেকেই রাতারাতি ডাক্তার বনে যাচ্ছেন। সেবার নামে প্রতারণা করা নামধারী এসব ভুয়া চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। কেউ কেউ হারাতে বসেছেন শেষ অবলম্বনটুকুও। সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।  

ভুয়া সার্টিফিকেট সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য প্রফেসর গণির দেয়া ইউনিভার্সিটির লিংকে দেখা যায় আরও ভয়ানক চিত্র। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামের আরেক প্রতিষ্ঠানে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর, আইন, প্রকৌশল, মেডিকেল এমনকি এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রিও দেয়া হচ্ছে পর্দার আড়ালের এই প্রতিষ্ঠান থেকেই।  

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নামমাত্র এই ইউনিভার্সিটির নেই কোনো ক্যাম্পাস বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজস্ব সরঞ্জাম। এ যেনো আলাদীনের সেই আশ্চর্য প্রদীপের মতোই এক ইউনিভার্সিটি।  চাইলেই সব উচ্চতর ডিগ্রি হাতের মুঠোয়। নামে ইউনিভার্সিটি হলেও নেই ইউজিসির অনুমোদন। শুধু অনুমোদনই নয়, যোগাযোগের একটি নাম্বার ছাড়া ওয়েবসাইটে নেই গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য। তবুও পর্দার আড়ালেই চলছে হচ্ছে দেন-দরবার এবং সনদপত্র বিক্রির রমরমা বাণিজ্য।

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির অনুমোদন এবং সনদ বাণিজ্যর প্রশ্নে ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’ ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ও জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসেন জানান, ইউজিসির ওয়েবসাইটে পাবলিক, প্রাইভেট ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার বাইরে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইউজিসি সম্পৃক্ত নয়। যে বা যারা ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে তা সম্পূর্ণ ইউজিসির আইন পরিপন্থি।’