Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

তারেকের নীরবতায় রহস্য

নভেম্বর ১৯, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


 তারেকের নীরবতায় রহস্য

তারেক রহমান। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান। বর্তমানে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ভালো নেই তার মা! ‘ডিকম্পেনসেটেড লিভার’ রোগে ভুগছেন। সমস্যা খুবই তীব্র, যেটি সাধারণ চিকিৎসায় ভালো হয় না, ওষুধ দিয়েও সারে না। দেখা দিয়েছে আরো বেশ কয়েকটি মারাত্মক জটিলতা। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো নয়। 

বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ নিয়ে জাতীয় সংসদ, সভা-সমাবেশ-সেমিনার, বক্তৃতা-বিবৃতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে আলোচনা। সর্বাত্মক দাবি জানানো হচ্ছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের বাইরে পাঠাতে। কিন্তু এ নিয়ে রহস্যজনক নীরবতায় তারেক রহমান।

দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলো থেকে তারেক রহমানের উদ্বৃতি দিয়ে কথা বললেও খালেদা জিয়া ইস্যুতে তারেক রহমানের নেই কোনো বক্তব্য বা ঘোষণা। দেশের বাইরে বসে দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী কিংবা দেশ ও জাতির জন্য নেই কোনো বক্তব্য। 

এ নিয়ে দলের ভেতরে মায়ের ইস্যুতে সন্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খালেদা জিয়ার ইস্যুতে তারেক রহমানের স্পষ্ট বক্তব্য বা ঘোষণার দাবি উঠেছে। কারণ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়ায় এ দুজনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি কার্যকর হবে না বলে অনেকেই মনে করছেন। খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক জীবনাবসান কিংবা চিকিৎসা পেয়ে অবসানের বিষয়টি তারেক রহমানের উপরও নির্ভর করছে।

দলের একটি অংশ মনে করছে, দেশে খালেদা জিয়ার মৃত্যু নিয়ে তারেক রহমান রাজনীতি করতে চাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার অঘটন নিয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে চাচ্ছেন তিনি। এ জন্য পরিবারকে সামনে রেখে রাজনীতির ভূমিকা থেকে দলকে দূরে রাখা হয়েছে। 

বিএনপির সূত্রগুলো থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভালো নেই খালেদা জিয়া। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে অঘটন। খালেদা জিয়া অনেক রোগে আক্রান্ত। লিভার ও কিডনি সমস্যা তাকে বেশি ভোগাচ্ছে। সাথে হার্টের সমস্যাও আছে। সমপ্রতি তার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই।

গত শনিবার রক্ত বমি হওয়ার পর ক্রনিক লিভার রোগে আক্রান্তের আশঙ্কায় লিভার থেকে ফ্লুইড (তরল) নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, তার লিভারের সমস্যা খুবই জটিল। এ ধরনের সমস্যায় লিভার অকার্যকরও হতে পারে। তখন লিভার প্রতিস্থাপনও করতে হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। 

তারা বলছেন, ৭৬ বছর বয়সি খালেদা জিয়ার রক্তে শর্করা অনেক বেশি। রক্তচাপ ওঠানামা করছে। এ বয়সে এত রোগ— এ সব বিবেচনায় দেশে তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। বাইরে নিলে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। অসুস্থ হয়ে গত সাতদিন ধরে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

গত ১২ অক্টোবর রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন, তখন তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। ছয় দিন পর আবারো ১৩ নভেম্বর হাসপাতালেই ফিরতে হয় তাকে। বর্তমানে এভার কেয়ারের সিসিউইতে ‘আইসিইউ’র চিকিৎসা চলছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। দলীয়ভাবে পঞ্চমবারের মতো বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানানো হয়েছে। এ নিয়ে আজ  শনিবার খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়ার দাবিতে সারা দেশে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

রাজনীতিবিদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে গণদাবি উঠেছে। দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও প্রখ্যাত আইনজীবীরা বলছেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামির উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়ার নজির রয়েছে। ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি আ স ম আবদুর রবকে জার্মানি পাঠানো হয়েছিল।

২০০৮ সালে প্রায় অভিন্ন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। একইভাবে খালেদা জিয়াকেও পাঠানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। 

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি সত্যি সত্যি জানি না খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কতটা খারাপ! তবে, আমি চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলাম তার অবস্থা আগের চাইতে কী ভালো, নাকি খারাপ? তখন চিকিৎসকের চেহারায় একটা বার্তা দেখলাম। যদি তার অবস্থা ভালো হতো চিকিৎসক ভালো বলতেন, কিন্তু তিনি ভালো বলতে পারেননি। যদি বেগম জিয়ার অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয়, তাহলে আমাদের একটা অবস্থা হবে। হয় খালেদা জিয়া বাঁচবেন, না হয় আমরা বাঁচবো। দেশে তিনি চিকিৎসার অভাবে মারা যাবেন, আর আমরা বসে থাকতে পারি না।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। কাজেই কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় এই মুহূর্তে তার দেশে কিংবা বিদেশে সুচিকিৎসা পাওয়ায় বাধা থাকা সমীচীন নয়’, ‘অতি জরুরিভাবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশে বা বিদেশে তার পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী সুচিকিৎসার সুযোগ করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে দেশের অন্যতম প্রধান একটি দলের নেতা ও কয়েকবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেকোনো বিচারেই জরুরি ভিত্তিতে সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকারী।’ 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘ডাহা মিথ্যা’বলে দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার চাইলেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। কিন্তু তারা (সরকার) সেটা করবে না। শুধু রাজনীতি নয়, খালেদা জিয়াকে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে জামিন দিয়ে দ্রুত বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, “খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কোনো অজুহাত সৃষ্টি করে তথাকথিত আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশ পাঠাতে বাধা সৃষ্টি করা সরকারের অপকৌশল বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

মানবতা কোনো করুণার বিষয় নয়। সরকারকে অবশ্যই ‘মানবীয় কর্তৃত্বের’ অধীনস্থ থাকতে হবে। প্রতিহিংসা বা নির্মমতা দিয়ে মানবিক সমাজ বিনির্মাণ করা যায় না। শত্রুভাবাপন্ন নয়— সরকারকে মানবিক হতে হবে। খালেদা জিয়ার জীবন সুরক্ষায় সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের রাজনৈতিক কর্তব্য। খালেদা জিয়ার জীবন সুরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সিসিইউতে স্থানান্তরের সংবাদে দেশবাসীসহ আমরাও উদ্বিগ্ন।”