Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ছাত্র আন্দোলনের হুঙ্কার

নভেম্বর ২০, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


ছাত্র আন্দোলনের হুঙ্কার

এখন পর্যন্ত আইনগত ভিত্তি না থাকলেও হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ‘১১ দফা’ নামে শিক্ষার্থীদের যে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায়, সেখানেও হাফ ভাড়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিলো। 

মাঝের লম্বা সময় অতিক্রম করে ২০১৮ সালেও রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সৃষ্ট ছাত্র আন্দোলনেও ৯ দফা দাবির একটি ছিলো— ঢাকাসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া পাসের বিষয়টি। 

কিন্তু সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে গণপরিবহনেও ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট নৈরাজ্যের রেশ সাধারণ যাত্রী হয়ে এখন ঠেকেছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-ভাঙচুরে। বন্ধই হয়ে গেছে হাফ ভাড়ার সিস্টেম। 

এই প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের মতোই আরও একটি ছাত্র আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বাস মালিক-সমিতির নেতারা —বলছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, সরকারি চাকরি করেও পুলিশ পাচ্ছে ফুল পাস; আর হাফও মিলছে না শিক্ষার্থীদের। উল্টো শিক্ষার্থীদের গায়েও হাত তুলছেন পরিবহন শ্রমিকরা। 

যে কারণে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে যদি গতকাল শনিবার পর্যন্তও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হলে আন্দোলনে নামার যে হুঙ্কার দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা সে বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানান, এখন যেকোনো সময়ই আন্দোলনে নামতে পারে তারা।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনগত ভিত্তি না থাকলেও এটা শিক্ষার্থীদের অধিকার। পাকিস্তান শাসনামলে আন্দোলন করেই এই অধিকার আদায় করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় সরকার পক্ষ থেকে আলোচনাও হয়েছে, যদিও আদৌ আইন করার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। 

২০১৫ সালেও বিআরটিসির কার্যালয়ে বাস ডিপো ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে বৈঠকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, রাজধানীতে চলাচলরত বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে। 

আর না নিলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এরপর ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের সড়ক আন্দোলনে তোলপাড় হলো গোটা দেশ। সে আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির একটি— ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

সে সময়ই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করলেও সেখানে হাফ ভাড়ার বিষয়টি ছিলো না। এছাড়া গেলো বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য আশ্বস্ত করেছিলেন, তাও এখনো কার্যকর হয়নি।  

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের অভিযোগ, সিটিং সার্ভিস বা গেটলক নামে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনগুলো। মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম। ভাড়ার চার্ট দেখতে চাইলেও দেখানো হচ্ছে না। বাসে ওয়েবিলের নামে সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ২৬ শতাংশ বাড়লে সেখানে নতুন ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১৩ টাকা। সেখানে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। কোনো পরিবহনে ২০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। ২৫ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। অথচ নতুন ভাড়ায় সঠিক হিসাব করলে কোনো কোনো বাসে ভাড়া কমে আসার কথা। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ছাত্রদের হাফ পাস নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল শনিবারের মধ্যেই সুরাহা চেয়েছিলেন তারা। গতকালও কোনো সুরাহা না হওয়ায় যেকোনো সময় কঠোর আন্দোলনে নামবে বলে জানান বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। 

বেসরকারি বাস মালিকরা বলছেন, হাফ ভাড়া বাস্তবায়ন হলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। আইনগত ভিত্তির ওপর এই দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়নি।’ 

তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন বলছেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই হাফ ভাড়া দিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। অথচ সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, পরিবহন মালিকরা মনোপলি ব্যবসার করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সিটিং, গেটলক সার্ভিসের নামে ছাত্রদের হাফ ভাড়া বন্ধ করে দেয়। 

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে মতবিনিয় করে বন্ধের দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে যেনো হাফ ভাড়ার বিষয়টি কার্যকর করা হয় এবং অনতিবিলম্বে সরকার যেনো একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে যে— এই সিদ্ধান্ত যেসব পরিবহন মালিকরা উপেক্ষা করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরিবহন সংশ্লিষ্ট অন্যরাও বলছেন, পরিবহন নেতা-মালিকরাই নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ভাড়া আদায় করতে গিয়ে শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রী শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করে দিয়েছেন। 

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর থেকেই পরিবহনে ভাড়া নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে সাধারণ যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। ভাড়া নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তা, সরকারি তিতুমীর কলেজের চার শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত, ইম্পেরিয়াল কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলা, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীকে বাস হেল্পারের ধাক্কা উল্লেখযোগ্য। ঘটনাগুলো এখানেই থেমে নেই। 

এরপর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ ও হাফ ভাড়ার দাবি জানিয়ে আসছে। গতকালও রাজধানীর সাইন্সল্যাব, ফার্মগেট, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। যদিও আইনগতভাবে হাফ ভাড়ার বিষয়টির কোনো ভিত্তি নেই, তবে ঢাকার গণপরিবহনে এটি চিরায়ত প্রথা। বাস মালিকরা এখন সেই প্রথা মানতে চান না। বাসের বাইরে বা ভেতরে লিখে রাখেন ‘হাফ পাস নেই’।  

এদিকে, একমাত্র সরকারি সড়ক পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) বাসেও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। 

বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের সরকারি বাসে হাফ ভাড়া নেয়া হয় না। এ নিয়ে সরকারি কোনো নির্দেশও আমাদের কাছে আসেনি। সরকার নির্দেশ দিলে বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবো। এখন বিআরটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্যে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।