Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষা-গবেষণার প্রত্যয়ে ৪৪ বছর

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া

নভেম্বর ২১, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


শিক্ষা-গবেষণার প্রত্যয়ে ৪৪ বছর

আজ ২২ নভেম্বর, ৪৪তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ১৯৭৯ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গাজীপুর বোর্ড বাজারে এবং ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অপর এক আদেশে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়। 

১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩০০ ছাত্র ভর্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক যাত্রা। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির আটটি অনুষদের ৩৪টি বিভাগে ১৫ হাজার ৩৮৪ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ২৯১ এবং ছাত্রী পাঁচ হাজার ৯৩ জন। বর্তমানে ৩৯০ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। 

এছাড়াও ৪৬৮ জন কর্মকর্তা, ১৫২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৭১ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫১৪ জনকে পিএইচডি এবং ৬৯৬ জনকে এমফিল ডিগ্রি দিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯০ জন পিএইচডি এবং ২১৯ জন এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত। অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে সম্পতি প্রকাশিত বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৭ শিক্ষক স্থান পেয়েছেন। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ চতুর্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন : যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রচনা, চিত্রাঙ্কন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কেক কাটা, আলোচনাসভাসহ ধারাবাহিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফটকের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘মুক্তির আহ্বান’ ও ‘শাশ্বত মুজিব’ তৈরি করা হয়েছে। একই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ‘মহানক্ষত্র মুজিব’ এবং ইংরেজিতে ‘ইম্মর্টাল মুজিব’ নামে দুটি স্মারকগ্রন্থ উন্মোচন করা হয়। 

গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে উপাচার্যের বাসভবনে শিশুদের সাথে উপাচার্য ও গুণীজনদের সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া এবং ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধুর জীবনের জানা-অজানা বিভিন্ন অধ্যায় তুলে ধরে গল্প করেন বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি ও ইবির বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান। 

এ সময় ক্যাম্পাসের আবাসিক শিশু ও তাদের মায়েরা অতিথিদের গল্প শোনেন। পরে উপস্থিত শিশুদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বিতরণ করা হয়। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৩-১৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২১ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপন করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। 

উন্নয়ন চিত্র : আবাসন ও শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট নিরসনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ৫৩৭কোটি সাত লাখ টাকার মেগাপ্রকল্পের অধীনে ক্যাম্পাসে ৯টি ১০ তলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে, চুক্তিপত্রও সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কিছু ভবনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গত ১৩ অক্টোবর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ১০ তলা এক হাজার সিট বিশিষ্ট দুটি আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। ভবন দুটি উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ। 

পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, দ্বিতীয় ডরমিটরি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকাজ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন, প্রভোস্ট কোয়ার্টার, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১০ তলা আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট দূরীকরণে হলসংখ্যা আটটিতে উন্নীত করা হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি ছাত্র হল এবং তিনটি ছাত্রী হল।

শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে ৪৩টি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি এসি কোস্টার গাড়িসহ বাস-মিনিবাস ২২টি,  অ্যাম্বুলেন্স দুটি, পিক-আপ দুটি। করোনার প্রকোপের কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ২৫৩তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তক্রমে গত ৫ অক্টোবর লাইব্রেরি এবং ৯ অক্টোবর আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়া হয়। করোনার অন্তত এক ডোজ টিকা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে তোলা হয়। ২৫ অক্টোবর থেকে সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়েছে।

 বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার আদর্শে মানসম্পন্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।  

৪৪তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি : ৪৪তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

দিবসটি উপলক্ষে আজ ২২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। একই সময়ে প্রভোস্টরা নিজ নিজ  হলে জাতীয় পতাকা ও হল পতাকা উত্তোলন করবেন। পতাকা উত্তোলন শেষে শান্তির প্রতীক পায়রা ও আনন্দের প্রতীক বেলুন উড়িয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, রেজিস্ট্রার (ভার.) মু. আতাউর রহমানসহ সব পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকবেন। 

এরপর সক পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হবে। র্যালিটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাংলা মঞ্চে এসে শেষ হবে। র্যালি শেষে বাংলা মঞ্চে আলোচনা সভা, কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়াও বাদ জোহর কেন্দ্রীয় মসজিদ ও হল মসজিদসমূহে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।