Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

দৃষ্টি আছে ভীতি নেই

রফিকুল ইসলাম

নভেম্বর ২২, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


দৃষ্টি আছে ভীতি নেই

প্রেস ক্লাবে সমাবেশ, কাকরাইলে পুলিশ-ছাত্রদল সংঘর্ষ, নাটোরে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত, আগামীকাল বুধবার সারা দেশে বিএনপির স্মারকলিপি কর্মসূচি। চলতি সপ্তাহে দোয়া, অনশন, মানবন্ধন কর্মসূচি পালন। চিকিৎসকের ভাষ্য, উন্নতি হয়নি— ক্রিটিক্যাল অবস্থায় খালেদা জিয়া। ‘আন্দোলন আন্দোলন’ বলে হুমকি বিএনপি মহাসচিবের। আ.লীগ বলছে, বিএনপি নেতারা ডাক্তার, তাদের কর্মসূচি নিয়ে আ.লীগ ভাবছে না। সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষপাড়াও দৃষ্টি রেখেছে—
 

বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসেবার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে বিএনপির সরকারবিরোধী কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন ঘোষণায় প্রখর দৃষ্টিতে রাখছে আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপি ভোট ও আন্দোলনের মাঠে ব্যর্থ রাজনৈতিক দল। বিএনপির গণআন্দোলনের হুমকি-ধামকিতে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। আওয়ামী লীগ জেল-জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জনগণের দাবি আদায়ে সাহসী সংগঠন। বেগম জিয়ার মুক্তি বা বিদেশে চিকিৎসাসেবার দুটিই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। অন্য পন্থায় বিএনপির হুমকি-ধামকিতে কোনো লাভ হবে না। 

তথ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি। বিএনপি নেতাদের দাবি— খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি এখনো ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যেই আছেন। এমন অবস্থায় খালেদার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিকল্প পথ দেখছে না দলটির শীর্ষ নেতারা। 

তারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি না দিলে সরকারবিরোধী কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমাদের সামনে এখন আর কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের সামনে একটাই পথ— আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলন। এ আন্দোলনকে তীব্র করে সামনের দিকে আরও বেগবান করতে হবে। খালেদা জিয়া ও দেশের গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে দলটি। 

আর বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করছে বিএনপি। তারা চান বেগম জিয়া সুস্থ না হোক। কারণ তিনি সুস্থ হলেই স্বাস্থ্য নিয়ে যে রাজনীতি, এটি বন্ধ হয়ে যাবে বিএনপির। 

আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা পাত্তাই দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বলছেন, বিএনপি এক দফা অথবা ১০ দফা আন্দোলন করুক— তাতে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। আওয়ামী লীগ রাজপথের সংগঠন। জেল-জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের দাবি আদায়ের সাহসী সংগঠন। আন্দোলন-সংগ্রাম করেই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। 

তারা আরও বলছেন, বিগত দিনেও দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ বিএনপির দফাভিত্তিক আন্দোলন দেখেছে। বিএনপির আন্দোলন রাজপথে নয়— তাদের আন্দোলন ফেসবুক আর মিডিয়া-নির্ভর। দেশের অভ্যন্তরে ব্যর্থ রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি আন্দোলনে ব্যর্থ, ভোটের রাজনীতি ব্যর্থ, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে ব্যর্থ, নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে ব্যর্থ। 

গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম মানেই অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা, গণপরিবহনে আগুন লাগানো, সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত ও মুক্তির দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণা সরকারবিরোধী, দেশবিরোধী ও দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং তাদের বারবার আন্দোলনের ঘোষণা নিদেজের পদ-পদবি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু বলে মনে করছে ক্ষমতাসীনরা। 

বিএনপির শীর্ষ নেতারা কর্মী-সমর্থকদের রোষানল থেকে বাঁচতে গণমাধ্যমে লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন অবিরাম। প্রকৃতপক্ষে বেগম জিয়ার মুক্তি বা বিদেশে চিকিৎসা দুটিই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। বিএনপির অন্য কোনো পন্থায় হুমকি-ধামকিতে লাভ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটি।

আ.লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এক যুগের বেশি সময় বিএনপির মুখে আন্দোলনের কথা শুনে আসছে দেশের মানুষ। কিন্তু আন্দোলন আর দেখে না জনগণ। দেশের মানুষ তাদের কথা ও কাজে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ধ্বংসের রাজনীতির উত্তরাধিকার বহন করছে বিএনপি। খুন, সন্ত্রাস আর ষড়যন্ত্র বিএনপিরই মজ্জাগত দোষ। আগুন-সন্ত্রাসের মতো কর্মসূচির জনক বিএনপিই। দেশের মানুষ ভালো আছে, শুধু ভালো নেই বিএনপি। দেশে সামপ্রদায়িক অপশক্তিকে উস্কানি ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বিএনপিই তাদের পুনর্বাসন করেছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে নেই বরং সন্ত্রাসী, অনিয়মকারী, দুর্নীতিবাজ ও বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা আতঙ্কে আছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। কিন্তু সেই ঘোষণার সফলতা আছে— এমন কোনো উদাহরণ নেই। 

তিনি আরও বলেন,  বিএনপি আন্দোলনের নামে যদি মানুষের ভোগান্তি তৈরি করে, মানুষের নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয় ও দেশের আইনশৃঙ্খা পরিস্থিতির অবনতির ঘটায়— তাহলে দেশের জনগণ সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিহত করবে এবং যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে।’ 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার সংবাদকে বলেন, ২০১২ সাল থেকে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের মধ্যে আছে। তারা আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস ছাড়া কিছুই বোঝে না। তাদের কোনো কিছুতেই জনগণের সাড়া নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বেগম জিয়ার মুক্তি বা বিদেশে চিকিৎসা দুটিই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। অন্য কোনো পন্থায় বিএনপির কোনো হুমকি-ধামকিতে লাভ হবে না।’ 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আন্দোলনে ভয় পায় না। বিএনপি এক দফা অথবা ১০ দফা আন্দোলন করুক, তাতে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। আওয়ামী লীগ রাজপথের সংগঠন। জেল-জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জনগণের দাবি আদায়ের সাহসী সংগঠন। আন্দোলন-সংগ্রাম করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপির গণআন্দোলনের হুমকি-ধামকি নিজেদের পদ-পদবি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। তারা কর্মী-সমর্থকদের রোষানল থেকে বাঁচতে গণমাধ্যমে লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে অবিরাম।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতারা গত এক যুগের বেশি সময় ধরে নানা ইস্যুতে আন্দোলন আর সরকার পতনের হুমকি দিয়ে আসছেন। প্রকৃতপক্ষে এসব হুমকি সরকার ও জনগণের মনে কোনো আগ্রহ বা উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারেনি।’