Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

টানাপড়েন গড়াচ্ছে আন্দোলনে

নভেম্বর ২২, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


টানাপড়েন গড়াচ্ছে আন্দোলনে

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছ থেকে দাবি আদায়ে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ ছাত্র আন্দোলনের হুঙ্কার দেয়া শিক্ষার্থীরা। গতকাল ২০১৮ সালে সৃষ্ট আন্দোলনের আদলেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকেও হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। তাতেও কর্ণপাত করেননি পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেন সড়কে রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছেন তারা। কিন্তু সে সুযোগ দিতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। 

সম্প্রতি দাবি অনাদায়ে ছাত্র আন্দোলনের হুঙ্কার দেয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের হুমকি, লাঞ্ছিত করাসহ একের পর এক নানা ঘটনার জন্ম দিয়েই যাচ্ছে। সমাধানের লক্ষ্যে কোনো কথাও বলছেন না তাদের মালিক সমিতির নেতারা। তবে নেতারা হাফ ভাড়া বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বলছেন, এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের এই টানাপড়েন ধীরে ধীরে গড়াচ্ছে আন্দোলনের দিকে— সংশ্লিষ্টরাও এমনটাই বলছেন। 

গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে হাফ ভাড়া নেয়ার দাবিতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই অবরোধে অংশ নেন মোহাম্মদপুর গভর্নমেন্ট কলেজ, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক্যাল কলেজ ও মোহাম্মদপুর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাবি বাস্তবায়নে নানান স্লোগান ও বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থান নেয় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। কর্মসূচিতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করতে হয় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি আব্দুল লতিফ। 

তিনি বলেন, বাসে হাফ পাসের দাবিতে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। অবরোধের কারণে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য তাদের বোঝানোও হয়। একইভাবে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়েও অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়া-রায়েরবাগ এলাকায়ও দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীদেরও বাস আটকিয়ে ভাড়ার চার্টসহ বাসে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে কি-না জানতে চান। পরে সেখানে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত এলে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে বেপরোয়া পরিবহন শ্রমিকরা ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করে শাহবাগে। 

বাসভাড়া নিয়ে গায়ে হাত তোলার ওই ঘটনায় ‘তরঙ্গ প্লাস’-এর দুটি বাস আটক করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাস দুটি কলেজের পাশের নায়েমের গলিতে আটকে রাখা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মিরাজ হোসেন। তিনি ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। 

ওই শিক্ষার্থী জানান, রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় তরঙ্গ প্লাসের হেলপারের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিনি। পরে ঘটনা জানাজানি হলে কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ক্ষিপ্ত হয়ে তরঙ্গ প্লাসের অন্য দুটি বাস আটকে রাখেন। 

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে সাত কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে আসার সময় শাহবাগে তরঙ্গ প্লাস বাসের সহকারীর লাঞ্ছিত হয়েছি। ভাড়া চাওয়ার পর নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে আমার কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। পরে ভাড়ার চার্ট দেখতে চাইলে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। একপর্যায়ে গায়ে হাত তুলে এবং আমার টি-শার্ট ছিঁড়ে ফেলে।’ 

তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমি বাস থেকে নেমে স্থানীয় পুলিশ বক্সে অভিযোগ করি। এরপর কলেজে এসে ছেঁড়া টি-শার্ট পরেই পরীক্ষা দেই। মারধরের কারণে আমার চোখের নিচ ফুলে গেছে। হাতে ব্যথা পেয়েছি। কেটে গেছে কয়েক জায়গায়।’ 

আটক তরঙ্গ প্লাস বাসের চালক রায়হান বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড় দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছু ছাত্র গাড়িতে উঠে যাত্রী নামিয়ে গাড়ি ঘুরাতে বলে। পরে এই গলিতে এনে গাড়ি থামিয়ে বসে থাকতে বলে। এখন গাড়ি নিয়ে এখানেই বসে আছি।’ 

জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) স ম কাইয়ুম বলেন, ‘এটা শাহবাগ থানার ঘটনা। শিক্ষার্থীদের বলেছি শাহবাগ থানায় কথা বলে আইনি সহায়তা নেয়ার জন্য।’ 

এদিকে গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, অবরোধ ও আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অবিলম্বে দাবি মেনে শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। 

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘২০১৫ সালের অক্টোবরে বিআরটিসি কার্যালয়ে বাস ডিপো ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে এক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে। আর না নিলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গণপরিবহন আইন সংশোধনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হয়নি। 

অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সরকার গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করলেও গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় না করে নিজেদের ইচ্ছামতো দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে গণপরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। ভাড়া নির্ধারণের সময় গড় ৭০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন দেখিয়ে ভাড়া আদায় দেখালেও কার্যত দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহনের ঘটনা যেন স্বাভাবিক। ভাড়া নির্ধারণে অতিরিক্ত ও যৌক্তিক ব্যয় ও মাইলেজের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখিয়ে একচেটিয়া ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়াটিও ত্রুটিপূর্ণ,’ যোগ করেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সাথে প্রায় সময় গণপরিবহন শ্রমিকদের হাফ পাস বা হাফ ভাড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা চলমান। 

গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম অনুসারেই ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। কিন্তু বাস্তবে সেই চিত্রের কোনো ছিটেফোঁটাও নেই।