Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর আ.লীগ, কেন্দ্রে সুপারিশ এলেই চূড়ান্ত বহিষ্কার

রফিকুল ইসলাম

নভেম্বর ২৬, ২০২১, ০৭:০০ পিএম


বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর আ.লীগ, কেন্দ্রে সুপারিশ এলেই চূড়ান্ত বহিষ্কার
  • দলের নির্দেশ বাস্তবায়নে অনুমতির প্রয়োজন নেই—দাবি তৃণমূলের 
  • চূড়ান্ত বহিষ্কারের ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রের —দাবি আ.লীগের 
  • কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া বহিষ্কার চূড়ান্ত বিচারে টিকবে না —আব্দুর রহমান (প্রেসিডিয়াম সদস্য, আ.লীগ)
  • কিছু সুপারিশ কেন্দ্রে এসেছে  কিছু হয়তো প্রক্রিয়াধীন —আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আ.লীগ)

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী ও তাদের সমর্থকদের বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ। তবে তাদের স্থানীয় বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করছেন না অধিকাংশ নেতা। তারা বলছেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী করলে তাকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। 

তবে আওয়ামী লীগ বলছে, বহিষ্কারের ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের। চূড়ান্ত বহিষ্কারের এখতিয়ার জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেই। বহিষ্কারের জন্য তারা কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে পারেন। কেন্দ্রীয় সুপারিশ ছাড়া চূড়ান্ত বহিষ্কার থেকে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের বিরত থাকতে হবে।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপিবিহীন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহীদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকরা। ভোটের মাঠে বিদ্রোহীর কাছে পরাজিত হচ্ছেন তারা। এমন অবস্থায় দলীয় বিদ্রোহী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ প্রভাবশালী নেতারা। তারা দলের বিদ্রোহীদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিচ্ছেন। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় দুই সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিয়েছেন তারা। 

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় বিদ্রোহী ও তাদের সমর্থকদের জেলা থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেয়া হলেও তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেনি অধিকাংশ জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। কিছু কিছু জেলা থেকে আবেদন করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, জেলা, মহানগর, উপজেলাসহ আ.লীগের যেকোনো ইউনিটির নির্দিষ্ট কোনো নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ উঠলে তাকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রয়েছে। কেন্দ্রীয় সুপারিশ ছাড়া চূড়ান্ত বহিষ্কার থেকে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের বিরত থাকতে হবে। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘জেলা-উপজেলাসহ যেকোনো ইউনিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বহিষ্কারের ক্ষমতা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় আ.লীগের রয়েছে। চূড়ান্ত বহিষ্কারের এখতিয়ার জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেই। কেউ যদি দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত থাকেন, তাকে বহিষ্কারের জন্য তারা কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করতে পারেন। কেন্দ্রীয় সুপারিশ ছাড়া চূড়ান্ত বহিষ্কার থেকে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের বিরত থাকতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী ও নৌকার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন ইতোমধ্যে তাদের সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে জেলা আ.লীগ। আশা করি তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য তারা কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করবেন। কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া কাউকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেয়া হলে চূড়ান্ত বিচারে বহিষ্কারের বিষয়টি টিকবে না। বহিষ্কৃতরা যদি বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে আপিল করে,  তাহলে তারা নিজ নিজ পদে বহাল থাকতে পারবেন বলেও জানান তিনি। 

তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিদ্রোহী ও তাদের মদতদাতাদের বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী করলে এবং নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহীর পক্ষে কাজ করলে তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তারা মনে করছেন, যেহেতু দলীয় বিদ্রোহীদের বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে, তাই কেন্দ্রের সুপারিশের দরকার নেই। ফলে  কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া  নৌকাবিরোধীদের  বহিষ্কার করা হচ্ছে। 

জানতে চাইলে- সিলেট জেলা আ.লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্রের সুপারিশ নেয়ার সময় নেই। দলের নির্দশনা অনুযায়ী বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীপন্থিদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ লাগবে বলে মনে করি না।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা আমার সংবাদকে বলেন, ‘বহিষ্কারের অর্থ দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। কেউ যেনো আর নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে পারে, সে জন্য কেন্দ্রীয় আ.লীগের সুপারিশের মাধ্যমে নৌকাবিরোধীদের বহিষ্কার করতে হবে। কিন্তু কক্সবাজার বহিষ্কারের ক্ষেত্রে কোনো সাংগঠনিক নিয়মনীতি, বিধিবিধান, দলীয় শৃঙ্খলা মানা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাময়িকভাবে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে তা স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে। আমার মনে হয় না কক্সবাজার জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সেই দায়িত্ব পালন করছেন।’ 
 
আ.লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ‘অনেক প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বিদ্রোহী ও তাদের সমর্থকদের মদত দিচ্ছেন। অনেক স্থানে বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করা হয়নি। মূলত যারা তৃণমূলের দায়িত্ব রয়েছেন— তারা বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীপন্থিদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হচ্ছে না। অনেক স্থানের লোক দেখানোর জন্যও  বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। যেই হোক না কেন, নৌকাবিরোধীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।

জানতে চাইলে আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদ বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করা এবং দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী হওয়া নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা আ.লীগের দলীয় সিন্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য অনেক বিদ্রোহী ও তাদের সমর্থকদের সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কিছু সুপারিশ কেন্দ্রে এসেছে। কিছু সুপারিশ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নৌকাবিরোধীদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।’ 

আ.লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘দলীয়  বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য অনেক স্থান থেকে সুপারিশ কেন্দ্রে এসেছে। দলের হাইকমান্ড তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।