Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বদলি চালকেই প্রাণহানি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নভেম্বর ২৬, ২০২১, ০৭:১০ পিএম


বদলি চালকেই প্রাণহানি

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনেরই ময়লাবাহী গাড়িতে ঘটছে দুর্ঘটনা। এর নেপথ্যে কারণ বদলি রীতিতে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসা অদক্ষ ও নিবন্ধনহীন চালক। গত বুধবার রাজধানীর গুলিস্তানে ডিএসসিসির ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান ও পরদিন বৃহস্পতিবার পান্থপথে ডিএনসিসির ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় আরও একজন নিহতের ঘটনার পর বেরিয়ে আসছে এসব তথ্য। 

জানা গেছে, বরাদ্দ দেয়ার পর সেসব গাড়ি কারা চালাচ্ছে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই দুই সিটি কর্পোরেশনের। যে কারণে নাঈম হাসান নিহতের পর গাড়ির মূল চালক কে, তা নিয়েও সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা। পুলিশ দিচ্ছে এক তথ্য, সিটি কর্পোরেশন দিচ্ছে আরেক তথ্য। এরই মধ্যে সড়কে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর যাকে ময়লার গাড়ির মূল চালক হিসেবে পুলিশ দেখিয়ে আসছিল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে বরখাস্তের আদেশ হওয়ার পর দেখা গেলো, তিনিও চালক নন। সিটি কর্পোরেশন হারুন মিয়াকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ থেকে বরখাস্ত করেছে। 

আর বুধবার দুর্ঘটনার সময় যে রাসেল মিয়া গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তিনি সিটি কর্পোরেশনের কোনো পর্যায়েরই কর্মী নন বলে সংস্থার কর্মকর্তারা এখন দাবি করছেন। নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবার ডিএসসিসির এক দাপ্তরিক আদেশে হারুন মিয়ার পাশাপাশি গাড়িচালক ইরান মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করে। সহযোগিতার অভিযোগে কর্মচ্যুত করা হয় আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুর রাজ্জাককেও। বুধবার গুলিস্তানে নাঈমকে চাপা দেয়ার পর ময়লার গাড়িটি চালানোর দায়িত্বে থাকা রাসেল মিয়াকে আটক করা হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনার মামলায় তাকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডেও পেয়েছে পুলিশ।  

দুর্ঘটনার পর পুলিশ বলেছিল, হারুন এই গাড়ির চালক, আর রাসেল পরিচ্ছন্নতাকর্মী। হারুন বদলি দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাসেলকে। হারুনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আব্দুল আহাদ। তিনি বলেছিলেন, ‘হারুনও এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সে কেন লাইসেন্সবিহীন রাসেলকে ট্রাকটি চালাতে দিলো।’ 

অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, হারুন মিয়াও চালক নন, তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আর রাসেল পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নন। গাড়িটির চালক ইরান মিয়া। আর হারুনের মতোই সিটি কর্পোরেশনের আরেক দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুর রাজ্জাক। তারা দুজনই চাকরি হারিয়েছেন। আর সাময়িক বরখাস্ত ইরান মিয়া বরখাস্তকালীন সময়ে খোরাকি ভাতা পাবেন। 

আদেশে বলা হয়, ‘গাড়িটি পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক (ভারী) ইরান মিয়ার অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হলেও তিনি অবৈধভাবে হারুন মিয়াকে মৌখিকভাবে চালানোর দায়িত্ব দেন। দুর্ঘটনার দিন হারুন, রাসেল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তিকে গাড়ি চালানোর জন্য অবৈধভাবে দায়িত্ব দেন। ইরানের এ ধরনের দায়িত্বহীনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে ইরানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করাসহ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।’ 

রাসেলের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ‘রাসেল আসলে সিটি কর্পোরেশনের কেউ না। তাই তার সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছি না।’ 

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত থাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক এক পরিদর্শক বলেন, ‘এমন বদলি চালক দিয়ে গাড়ি চালানোর রীতি সিটি কর্পোরেশনে বহুদিন থেকে চলে আসছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তিন শতাধিক ভারী যানবাহন থাকলেও চালক একশও নেই। গাড়ির চেয়ে চালক কম। আর নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক চালক নিজে গাড়ি না চালিয়ে অন্য আরেকজনকে দিয়ে চালান।’ 

এদিকে নাঈমের বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা বৃহস্পতিবার নগর ভবনে অবস্থান নিলে তাদের সামনে এসে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি যার চালানোর কথা ছিলো, সে তার নিজের দায়িত্ব পালন না করে আরেকজন চালককে ভাড়া করে সেই গাড়ি চালিয়েছে। তাদের দুইজনকেই শাস্তি পেতে হবে। মূল চালককে আমরা সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। আর যে গাড়ি চালাচ্ছিল, তার সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা নিশ্চিত করব।’ এদিকে সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী ময়লার গাড়ি রাতের বেলায় চলে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান বলেন, ‘কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া ময়লার গাড়ি রাতেই চলাচল করার কথা। যে দুটি গাড়ি দিনে চলাচল করে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিশেষ কোনো কারণ আছে কি-না তা জানতে হবে। কোনো কারণ না থাকলে নিয়ম মেনে রাতে চললে দুটি দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো।’ বৃহস্পতিবারও ময়লার গাড়ির ধাক্কায় রাজধানীর পান্থপথে একজন নিহত হন। ওই গাড়িটি ছিলো উত্তর সিটি কর্পোরেশনের।