Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে মেলা

নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৭:১০ পিএম


 প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে মেলা

শিক্ষার্থীদের যথাযথ পাঠদান ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে বা মাঠে প্রদর্শনীর নামে মেলা, যাত্রা, সার্কাস ইত্যাদি বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না উল্লেখ করে ২০০৯ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কার্যত ওই প্রজ্ঞাপনের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি আদৌ। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে কিংবা মাঠে এসব অনুষ্ঠান আয়োজনও বন্ধ হয়নি। বরং প্রতি বছরই বাণিজ্য মেলা, শিল্প মেলা, কুটির ও হস্তশিল্প মেলাসহ নামে-বেনামে বিভিন্ন মেলা বা বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছেই। যে কারণে শিক্ষার পরিবেশও ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকেরই। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরবর্তী বর্তমান সময়টি শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষাও। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব মেলা আয়োজনের আবেদনও পড়ছে বলে জানা গেছে। তার একটি মৌলভীবাজারের কাশীনাথ আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। প্রতিষ্ঠানটিতে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রও রয়েছে বলে জানা গেছে। 

যদিও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই এই প্রতিষ্ঠানটির মাঠেও আগামীকাল বুধবার মৌলভীবাজার পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। 

স্থানীয়রা বলছেন, এই মেলা কাশীনাথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মাঠেই হচ্ছে। তবে মাঠটি বেশি দূরে নয়, পাশেই। আর সেখানেই মাসব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। আবার ২ ডিসেম্বর থেকে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রও এখানে। এর পাশেই যদি এই মেলার আয়োজন করা হয় তাহলে মেলার উচ্চ শব্দে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হতে পারে। শিক্ষার পরিবেশও ব্যাহত হতে পারে বলে বলছেন স্থানীয়রা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মীর নাহিদ আহসান আমার সংবাদকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি তার নজরে নেই। তবে তিনি বলছেন, কাশীনাথ আলাউদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠটি স্কুল প্রাঙ্গণে নয়। এটি আলাদা একটি জায়গায়। এখানে বাৎসরিক পূজামণ্ডপ থেকে শুরু করে অন্যান্য যেসব অনুষ্ঠানাদি আছে, সেসব ওই মাঠেই হয়। এ ছাড়া যেকোনো মেলা কিংবা অনুষ্ঠানের জন্য এসবি রিপোর্ট নেয়া কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতামত নেয়া— এসবও আমরা সম্পন্ন করেছি।’ 

কিন্তু ২০০৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়— ‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দেশের কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে বা মাঠে বিভিন্ন প্রদর্শনীর নামে মেলা, যাত্রা, সার্কাস ইত্যাদি বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে পাঠদান ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে বা মাঠে প্রদর্শনীর নামে  মেলা, সার্কাস ইত্যাদি বাণিজ্যিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না।’ 

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশক্রমে অনুরোধও করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শামছুল আলম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনটি সব বিভাগীয় কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সব জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু ওই প্রজ্ঞাপন জারির পরও প্রতি বছরই জেলাপর্যায়ে স্কুল-কলেজ মাঠ-প্রাঙ্গণে বিভিন্ন মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতি বছরের  মতো এ বছরও বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যে মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদন পড়ছে পুলিশ সুপার কিংবা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে। যার অধিকাংশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে কিংবা মাঠে। 

এর আগে দেখা গেছে, গত বছরের মার্চে কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। জানুয়ারিতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও মাওনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মাসব্যাপী হস্ত ও কুটির শিল্প মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ হস্ত ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন। প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর ওই দুটি স্কুলে সেসময় শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট ও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুযোগ বন্ধ হওয়ায় মেলার বিরোধিতা করে এবং মেলা কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করে অভিভাবক মহল, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ স্থানীয়রা। এর আগে ২০১৯ সালেও কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স স্কুল মাঠে বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে মেলার আয়োজন করে পুনাক। এ নিয়ে সে সময় বিভিন্ন মহলে বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়। 

তৎকালীন জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, তার সাথে সমন্বয় না করেই স্কুলমাঠে মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আবার মেলা এবং শিক্ষা কার্যক্রম একই সাথে চলার কারণে সে সময় অভিভাবকরাও এর বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু মেলা বন্ধ হয়নি। 

পুলিশ সদর দপ্তর বলেছিল, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হলে মেলা পরিচালনার সুযোগ নেই। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠলেও কোনো পদক্ষেপই নেয়নি পুলিশ সদর দপ্তর। তারও আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জামালপুর সদরের জামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এসএমই ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সাত দিনব্যাপী আঞ্চলিক এসএমই পণ্য প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হয়। সে সময় ওই স্কুলটির এক হাজার ৭৪ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ স্থানীয় বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যদিও মেলা বন্ধ হয়নি এক মুহূর্তের জন্যও। একইভাবে প্রতি বছরই এসব মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। 

বিষয়টি জানতে চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের দপ্তরেও একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি এবং মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।