Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

আবারো খালেদার রক্তক্ষরণ

নভেম্বর ৩০, ২০২১, ০৭:২০ পিএম


আবারো খালেদার রক্তক্ষরণ

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন আবারো খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে তিনি এ কথা জানান। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার চতুর্থ দফায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। এর আগে গত রোববার তার চিকিৎসকরা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ১৭ নভেম্বর থেকে তার তিন দফায় রক্তক্ষরণ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল  বলেন, ‘গত সোমবার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ ডা. জাহিদ হোসেন আমাকে ফোন করে বলেন, দ্রুত হাসপাতালে আসেন। আমি সেখানে গিয়ে দেখি অন্তত ১০ জন চিকিৎসক বসে আছেন। ঘরে ঢুকে আমি জানতে চাই, কী হয়েছে। তাদের অত্যন্ত চিন্তিত দেখাচ্ছিল। তারা জানালেন, ‘যেটা ভয় পাচ্ছিলাম, সেটাই হয়েছে। আবারো আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় তার রক্তক্ষরণ হয়েছে।’ 

তিনি  বলেন, ‘সকালে আবারো ডা. জাহিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘কাল থেকে ম্যাডামের অবস্থা কিছুটা ভালো তবে এই ভালো ভালো নয়। চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, যদি তার কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে এই দেশের মানুষ কোনো দিনই আপনাদের রেহাই দেবে না। দায় সব আপনাদের, সেই দায় আপনাদের বহন করতে হবে।’ 

খালেদা জিয়া ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনো তিনি সংগ্রাম করছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে এখনো সংগ্রাম করছেন তিনি। একদিনের জন্যও তিনি অবসর নেননি, একদিনের জন্যও তিনি বিশ্রাম নেননি।’

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের, কী জাতি আমাদের। জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। সরকারের একজন মন্ত্রী গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা নাকি বিএনপি যা বলতে বলেছে, তারা তাই বলেছেন। ধিক্কার দেই এই মন্ত্রীকে। যে কিনা নামিদামি এবং বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকদের বিদ্রূপ করেছেন।’ 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি বলেছেন, আমরা কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। কূটনৈতিকদের সামনে তিনি বলছেন। কেন বলছেন? কূটনীতিকরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা ইতোমধ্যে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন (খালেদা জিয়াকে) দেশের থেকে বাইরে পাঠাও, বিদেশে চিকিৎসার জন্য।’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নাই যে চায় না খালেদা জিয়ার বাইরে চিকিৎসা হোক। মায়েরা রোজা রাখছেন, গৃহবধূরা রোজা রাখছেন, মানত করছেন যে আল্লাহ খালেদা জিয়াকে হায়াত বাড়িয়ে দাও। এই কোটি কোটি মানুষের ফরিয়াদ নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে পৌঁছাচ্ছে। তিনি আবারো খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন।’

বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভয়ানক অসুস্থ। তাকে বাঁচাতে হলে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। জনগণকে বলতে চাই, আপনারা রুখে দাঁড়ান। তাকে সুস্থ করে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।’ তার অভিযোগ, ‘খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিনা চিকিৎসায় যদি কিছু হয়, কে জানে ফলাফল কী হবে। অবনতি হলে সরকার দায়ী থাকবে।’

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় এই সমাবেশ হয়। সকাল ১১টা থেকে ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণের বিভিন্ন থানা থেকে নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশ শুরু হয় দুপুর দেড়টায়, শেষ হয় সাড়ে ৪টায়। সমাবেশের শুরুতে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেসারুল হক খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় মুনাজাত পরিচালনা করেন। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগানে স্লোগানে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশস্থল মুখর করে রাখে। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ থেকে ফকিরেরপুল সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীতে তিল পরিমাণ ঠাঁই ছিলো না। রাস্তায় বসে তারা নেতাদের বক্তব্য শুনেন। সমাবেশে চারটি ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশাল আকৃতির ছবি সম্বলিত ব্যানারে লেখা ছিলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে সমাবেশ। খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানী ছাড়াও আট বিভাগীয় শহরেও একযোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল ইসলাম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম,  শাহিদা রফিক, তৈমূর আলম খন্দকার, আবদুল হাই, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামারুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, আবদুস সালাম আজাদ, তাবিথ আউয়াল, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, সালাহউদ্দিন সরকার, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।