Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি

জসিম উদ্দিন জয়নাল, খাগড়াছড়ি

ডিসেম্বর ১, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি

শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইছে। আজ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

আজ বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯-এর কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনে নানা অনুষ্ঠান কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন। 

কর্মসূচিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কেক কাটা, আলোচনা সভা, মাস্ক বিতরণ, রোড শো, ব্যানার-ফেস্টুন-ডিজিটাল ডিসপ্লে, চুক্তি পরবর্তীতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় নানা উন্নয়ন-বিষয়ক প্রচার-প্রচারণা, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা ও ফানুস ওড়ানোর সিদ্ধান্ত 
নেয়া হয়। পার্বত্য চুক্তির ফলে পুরোপুরি শান্তি না মিললেও বদলে গেছে পাহাড়ের দৃশ্য। দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সঙ্ঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে, উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। 

এককালের দুর্দান্ত প্রতাপশালী শান্তি বাহিনীর গেরিলাদের গায়ে শোভা পাচ্ছে পুলিশের পোশাক। চুক্তির ফলে স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় দূর পাহাড়ের বুক চিরে রাত-দিন ছুটছে যানবাহন। এক সময় জেলার বাইরের অন্য জেলার সাথে ৩টার পর যোগাযোগ করার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। 

বর্তমানে পাহাড়ের পর্যটন স্পট সাজেক ছিলো আতঙ্কিত ও বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগ ছিলো নিষিদ্ধ। চুক্তির ফলে সেই সাজেক পর্যটন স্পট আজ পাহাড় ছেড়ে বাংলাদেশের সর্বত্র সুনাম ছড়িয়েছে। গড়ে উঠেছে বড় বড় হোটেল-রেস্তোরাঁ। প্রতিনিয়ত আসছে হাজার হাজার পর্যটক। 

তবে অব্যাহত খুন, গুম, অপহরণ, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জাতিগত ভেদাভেদ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিবেশের ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনমান। শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন হলেও ভূমি জটিলতাসহ কয়েকটি ইস্যুতে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পার্বত্য জেলাগুলোতে বিদ্যমান সশস্ত্র গ্রুপগুলোর আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে পাহাড়ের পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। নিজেদের স্বার্থে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতি ভেঙে এখন চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চার সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পার্বত্য এলাকায় শান্তিচুক্তির পর যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছিল তাদের অধিকাংশই বাঙালি। এরমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ পাহাড়ি। বাঙালিরা খুন হয়েছে সামপ্রদায়িক বিদ্বেষ ও চাঁদাবাজির জের ধরে। অন্যদিকে পাহাড়িদের অধিকাংশই নিহত হয়েছে দলীয় কোন্দলের কারণে।

১৯৯৭ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি সম্পাদিত হয়। যে চুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। কিন্তু এই চুক্তির ২৪ বছর পার হলেও পাহাড়ে এখনো পুরোপুরি শান্তি ফেরেনি। 

এখনো ঘটছে গোলাগুলি, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। শান্তিচুক্তির বছর যেতে না যেতে প্রতিষ্ঠা হয় চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এরপর থেকেই শুরু হয় পাহাড়ে দুই আঞ্চলিক দলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। থেমে থেমে চলে দুই সংগঠনের হত্যা-পাল্টা হত্যা। ২০০১ সালে তিন বিদেশি অপহরণের মাধ্যমে শুরু হয় পাহাড়ে অপহরণ বাণিজ্য। 

পরে ২০০৭ সালে জনসংহতি সমিতি থেকে বের হয়ে ২০১০ সালে আরেক আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে এসে ইউপিডিএফ থেকে বের হয়ে আরেকটি সংগঠনের জন্ম হয়। যেটি ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পরিচিত। এরপর বিভিন্ন সময় চার পক্ষের কর্মী-সমর্থক হত্যার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, গত এক বছরে ভ্রাতৃঘাতী সঙ্ঘাতে পাহাড়ে অর্ধশতাধিক মৃত্যু হয়েছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে চার পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের হত্যা চললেও এ সময় পাহাড়ে ১৯৯৭ সালের আগের চেয়ে অনেকটা শান্তি স্থাপন হয়।