Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

শেষ বেলায় খালেদা একা!

ডিসেম্বর ৩, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


শেষ বেলায় খালেদা একা!
  • ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির এমপি-মন্ত্রীরা খালেদায় চুপ  
  • খালেদার বন্দি থেকে সাজা এবং চিকিৎসার দাবিতেও আন্দোলন নেই 
  • মাঠপর্যায়ের নেতারা খালেদার জন্য কার্যত আন্দোলনের অপেক্ষায় 
  • খালেদার অঘটন হলে বিএনপির হাইকমান্ডকে জবাব দিতে হবে 
  • বিএনপির দলীয় নীরবতা খালেদাকে মাইনাসের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে

মৃত্যুমুখে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। হাসপাতালে বাঁচার লড়াই প্রতিটি মুহূর্তে। দীর্ঘ সময় কারাবাসের পর এখনো সরকারের নজরে। এই সময়ে ভূমিকা নিয়ে পাশে থাকেনি বিএনপির সাবেক এমপি-মন্ত্রী কেউ। শেষ সময়ে খালেদা জিয়া একাই লড়ছেন। মায়ের মুক্তির জন্য বার্তা দেননি লন্ডনে থাকা পুত্র তারেক রহমানও। পরিবারের দুই-একজন সদস্যই দৃশ্যত রয়েছেন মুক্তির আবদার নিয়ে। 

শুধু এমপি কিংবা মন্ত্রী নন, দলটির নানা অঙ্গসংগঠন, আইনজীবী, চিকিৎসক, রাজনৈতিক সহযোদ্ধারাও অদৃশ্য রহস্যে চুপ। খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর আন্দোলন হয়নি, সাজা হওয়ার পরও আন্দোলন হয়নি, এখন মৃত্যুর পথযাত্রীর চিকিৎসা নিশ্চিতেও কোনো কার্যত আন্দোলন হচ্ছে না। 

দোয়া, মিলাদ মাহফিল, অনশন, স্মারকলিপি ও মানবন্ধন করে নরম অবস্থান থেকে সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে মুক্তি দিতে। কিন্তু মুক্তি দিতে চাপ কিংবা বাধ্য করার মতো কর্মসূচি এখনো দলটি দেয়নি। অতীতে সামান্য ইস্যু হলেও বৃহৎ আন্দোলন ও ভূমিকা দেখাতো দলটি। 

শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দলটির হাই-কমান্ড কিছুই করতে পারেনি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার অঘটন হলে সরকারের আগে বিএনপির এমপি-মন্ত্রী ও হাই-কমান্ডকেই আগে জনতা ও নেতাকর্মীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

রাজনীতিতে চোখ রাখা সংশ্লিষ্টর ব্যক্তিরা বলছেন, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১  সালের নির্বাচনে  খালেদা জিয়ার ছবি, নাম ব্যবহার করে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন  কিংবা সরকারি বা রাষ্ট্রীয়  নানা পদবি পেয়ে  সুবিধা নিয়েছেন। ভোগ, উপভোগ করেছেন, শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এখন তারা সামান্য দাঁত ব্যথা পেট ব্যথা হলে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, লন্ডন, নিউইয়র্কের হাসপাতালে চিকিৎসা করছেন এখনো যাচ্ছেন। বাড়ি-গাড়ি, মৌজ-ফূর্তি, ভোগ-উপভোগ সবই করছেন, করেছেন। 

’৯১ সালের আগে তাদের কি সম্পদ, অর্থ ছিলো তা কমবেশি দেশের মানুষ ভালোভাবেই জানে। সব কিছু ভোগ করার পরও তারা এখন নীরব কেন। এমন রহস্য দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের ভাবাচ্ছে। দলের একটি অংশ থেকে প্রশ্ন উঠেছে— বিএনপির হাই-কমান্ডের কারণেও কী আন্দোলন হচ্ছে না, নাকি বিএনপি আন্দোলন করতে ব্যর্থ। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভাষ্য, দলের শীর্ষ নেতাদের ইঙ্গিদের কারণেই বন্দি থেকে সাজা কিংবা মৃত্যু পথেও খালেদা জিয়ার জন্য কোনো আন্দোলন হচ্ছে না। যদি বন্দি হওয়ার পর সাজা হওয়ার পর আন্দোলন হতো তা হলে সরকার অবশ্যই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে অবশ্যই বাধ্য হতো। বিএনপির নীরব ভূমিকার কারণে সরকার খালেদা জিয়ার বিষয়ে একের পর এক কঠিন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। 

দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক দল বিএনপি তথা বেগম খালেদ জিয়ার জন্য বিএনপির রাজনৈতিক সহকর্মী তথা দল তেমন কিছু এখন পর্যন্ত করতে পারেননি। পদ-পদবিবিহীন বিএনপির হাজার লাখো নেতাকর্মীর কোনো দোষ নেই।  কিন্তু যারা বিএনপি খালেদা জিয়ার নাম ব্যবহার করে ইজ্জত-সম্মান কিনেছেন, বড় বড় নেতা হয়েছেন, কেন তারা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে পারেননি বা এখনো করছেন না তার জবাব তারাই ভালো দিতে পারবেন। মাঠ পর্যায়ের নেতারা একটা নির্দেশনার জন্য প্রতিটা সময় অপেক্ষায় থাকলেও সেই নির্দেশনা এখনো আসেনি। 

নিজ দলের ওপরই ক্ষুব্ধ দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মী। তারা বলছেন, সমপ্রতি নরম, ঠাণ্ডা, হালকা গরম কর্মসূচি দিচ্ছে— তা বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার আগে-পরে কতটুকু আন্তরিকতার সাথে দিয়েছে তা ইতিহাস একদিন বিচার করবে। আর যে সব আইনজীবী ও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বেগম জিয়াকে কারাবন্দি হওয়ার আগের রাতে গুলশান অফিসে গিয়ে বলেছিলেন, ম্যাডাম সাজা দিলেও রোববারের মধ্যে এই মামলায় আপনার জামিন হয়ে যাবে?  

তারা এখন কোথায় আছেন? তাদের বিবেক এখন  কেমন আছে জানি না। তবে তারা টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদে বিএনপির কোটি কোটি টাকার মালিক নেতাদের মতো ভালো আছেন। সামান্য ডায়াবেটিস, প্রেশার, বা হার্টের একটি-দুটি ব্লক বা রিং পরানো থাকতে পারে।  তারা তো দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার জন্য কী করছেন। মৃত্যুর পথযাত্রী খালেদা জিয়াকে এ পরস্থিতিতে রেখেও দলটির অনেক সিনিয়র নেতা এখনো বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যা অনেককেই ভাবাচ্ছে। 

খালেদাপন্থি দুই সংসদ সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর গুলশান অফিস থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে অনেককেই আউট করা হয়েছে। এ জন্য শেষ সময়ে এসে কেউ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কাদা লাগাতে চান না। সবাই সম্মান নিয়ে রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চান। খালেদা জিয়ার বিষয়ে করণীয় কী সবাই জানলেও দলের দুই-একজন হাই-কমান্ডের কারণে কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। 

কারণ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়া, শেখ হাসিনার সাথে এক সাথে আলোচনার টেবিলে বসা কিংবা পাঁচ সংসদ সদস্যকে সংসদে পাঠানো সব কিছুই দলের প্রেসক্রিপশন ও অনুমতিক্রমে হয়েছে। এমন কিছু খালেদা জিয়াকে দলীয় মাইনাসের ইঙ্গিতও  দেখছেন অনেকে। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা তারেক রহমান যদি একটা আন্দোলনের ঘোষণা দেন তাহলে আমরা অবশ্যই খালেদা জিয়ার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত।

যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তার মুক্তির জন্য রাজপথে রক্ত দিতে আমরা প্রস্তুত। নেতাদের বলবো আপনারা কর্মসূচি দিন।’ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নেত্রীর মুক্তির জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করুন। আমরা বাস্তবায়ন করবো।’ 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আজকে যে পর্যায়ে এসেছি তার জন্য অবদান জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার। তাই তাদের প্রতি ঋণ শোধ করতে হলে আমাদের শপথ নিতে হবে জীবন দিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনে রাজপথে থাকবো।’ 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের রাস্তায় নামতে হবে, সোচ্চার হতে হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে এ ভয়াবহ সরকারকে পরাজিত করতে হবে। তাদের বাধ্য করতে হবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার জন্য। 

আওয়ামী লীগকে যদি সরাতে না পারি তবে আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব না, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করতে পারব না। সে জন্য আমি আগাম আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ 

দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন, সচেতন নাগরিক সবাই বলছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ দিন। তার যে রোগ হয়েছে, এভাবে যদি চলে তাহলে তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না। বাংলাদেশে তার চিকিৎসার তেমন সুযোগ নেই। লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে সবচেয়ে ভালো।