Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

মহানগর আ.লীগে তোড়জোড়

রফিকুল ইসলাম

ডিসেম্বর ৩, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


মহানগর আ.লীগে তোড়জোড়

বিএনপি-জামায়াত ও হাইব্রিডমুক্ত ওয়ার্ড-ইউনিট গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে নতুন সদস্য সংগ্রহ, সদস্য নবায়ন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড ও ইউনিটের সম্মেলন করছেন তারা। 

বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী, আওয়ামী লীগবিরোধী, সরকারের উন্নয়নবিরোধী ও জামায়াত-বিএনপির কেউ যেন আর মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তারা বলছেন, বিতর্কিতদের স্থান মহানগর আওয়ামী লীগে হবে না।

মহানগর আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত ও হাইব্রিডমুক্ত ওয়ার্ড-ইউনিট গঠনের কঠোর অবস্থানে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল নেতারা। তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণের প্রতিটি ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছেন। 

এজন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ, সদস্য নবায়ন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড ও ইউনিটের সম্মেলন করছেন তারা। মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পী আমার সংবাদকে বলেন, উত্তর আওয়ামী লীগের মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৬৪টি, ইউনিয়ন একটি ও থানার সংখ্যা রয়েছে ২৬টি। সব ওয়ার্ড মিলে ৮ শতাধিকের বেশি ইউনিট রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬ শতাধিক ইউনিটের সম্মেলন শেষ করেছি। 

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাকিগুলোর সম্মেলনও শেষ হবে। তিনি আরও জানান, প্রতিটি ইউনিটে সদস্য সংখ্যা ১৫০। ৩৭ সদস্যের কমিটি ইউনিটের নেতৃত্বে আসবে এবং সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। তারা নিজেদের পছন্দের কর্মীকে নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন। সে ক্ষেত্রে মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড তাদের সহযোগিতা করবে। প্রতিটি থানার জন্য নগর থেকে একটি টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। 

তারা প্রয়োজনে স্থানীয় সাংসদ ও থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থেকে পরামর্শ গ্রহণ করবে। মহানগর উত্তরের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী, আওয়ামী লীগবিরোধী, সরকারের উন্নয়নবিরোধী ও জামায়াত-বিএনপির কেউ যেন আর মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। 

বিশেষ করে ভিন্নপন্থি কেউ যেন হুট করে দলের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল পদপদবি দখল করতে না পারে, সেদিকেও কড়াকড়িভাবে নজর দেয়া হয়েছে। একই সাথে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আশার পর যারা বিভিন্নভাবে মহানগরের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন, তারাও যেন গুরুত্বপূর্ণ পদে না আসতে পারেন— সেটাও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র তাদের প্রাথমিক সদস্যপদে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

এছাড়া প্রতিটি ইউনিটে যাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে, তারা সবাই স্থানীয় বাসিন্দা বলে দাবি করছেন উত্তরের নেতারা। তাদের দাবি, আমরা বিগত দিনে দেখেছি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ার কারণে তারা জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এলাকায় চলে যান। সে বিষয়টি মাথার রেখে এ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে চায় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এ জন্যও কার্যক্রম শুরু করেছে দলটির দপ্তর শাখা। 

তারা বলছেন, প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও মহানগর আওয়ামী লীগে ডাটা বেজ থাকবে। প্রতিটি কর্মীকে সেই ডাটা বেজের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সদস্যের ফোন নম্বর, বাসা নম্বর ও ব্যক্তিগত ডাটা থাকবে। ফলে প্রতিটি কর্মী সম্পর্কে দ্রুত সময়ে সব তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা। 

জানতে চাইলে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ওয়ার্ড ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষের দিকে। আশা করি অল্প কদিনের মধ্যেই সবগুলো শেষ হয়ে যাবে। 

তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু স্থান থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। ওইসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করি কোনো ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তির স্থান মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে হবে না। সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে উত্তরের মতোই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। 

দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীলরা বলছেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। একই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিট ও ওয়ার্ডের সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। আগামীকাল রোববার এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এদিন সকাল ১০টায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, মহানগরে মোট ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে এবং এক হাজারের বেশি ইউনিট রয়েছে। আগামীকাল থেকে এগুলোর সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে। দলের দুঃসময় ও দুর্দিনের প্রতিটি কর্মীকে মূল্যায়ন করা হবে। সাংগঠনিকভাবে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করাই এখন আমাদের প্রধান টার্গেট। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। 

এখান থেকে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়। মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশও বেশি গুরুত্ব পায় দক্ষিণে। ফলে মহানগর আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। বিশেষ করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরে ক্যাসিনো, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি দুঃসময় ও দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন করতে চান তারা। একই পরিবারে এক ভাই বিএনপি, অন্য ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন— তাদেরকেও কমিটিতে চিহ্নিত করতে চায় মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।