Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

টিসিবি পণ্যের আশায় গুড়েবালি

ডিসেম্বর ৬, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


টিসিবি পণ্যের আশায় গুড়েবালি

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন দিশাহারা নিন্ম আয়ের মানুষ, তখন ভরসা সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেলের পণ্য। এরপরও কখনো কখনো এই ট্রাক থেকেও পণ্য না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের। 

গতকাল সোমবার টানা বৃষ্টিতে ভিজে লাইনে থেকেও শেষ পর্যন্ত এসে মাল না পেয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে রাজধানীতে। সকালেই লাইনে দাঁড়িয়ে মুষলধার বৃষ্টিতে ভিজে তিন-চার ঘণ্টার লাইন শেষে ট্রাকের সামনে আসা ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও অনেককেই কোনো মাল দিতে পারেনি টিসিবির ডিলাররা। 

মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান থেকে আসা হালিমা বেগম নামে এক নারী জানান, টিসিবির পণ্য কিনতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের লাইনের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ি রাস্তায় জমে থাকা পানি ছিটকে দিয়ে যায়। 

তিনি বলেন, আমাদের আগে বললে এমনে বাদুড় ভেজা বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকতাম না। কম দামের আশায় এসে গুড়েবালি। অন্য যারা লাইনে দাঁড়িয়েও মাল পাননি তাদের কয়েকজন বলেন, লাইনে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও পণ্য পেলাম না। এ সময় কাজ করলে এর চেয়ে আয় বেশি হতো। কেবল এক-দুই জন নয়, ট্রাক সেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় সবারই একই অভিযোগ— এত বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও মাল পাইনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। 

জানা গেছে, মোহাম্মদপুর ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ট্রাক সেলের পণ্যের জন্য ঠেলাঠেলি, হুড়োহুড়ির ঘটনা ঘটেছে। পণ্য পাওয়ার আশায় কে, কাকে ঠেলে সামনে যাবেন— এমন প্রতিযোগিতায়ও লিপ্ত হয়েছেন অনেকেই। ঘটেছে হাতাহাতির ঘটনাও। তবুও পণ্য মিলেনি। অথচ টিসিবির মতে, আগের মতোই ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে রাজধানীসহ সারা দেশে ৪০০ থেকে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে কম দামে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে।  

সূত্র জানায়, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং করোনাকালীন সাধারণ আয়ের জনগণের সহায়তার জন্য দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় ৪০০ থেকে ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে আগের মতোই গত রোববার থেকে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি করা হবে। ২৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে। এ ব্যাপারে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)  মুখপাত্র হুমায়ন কবির গণমাধ্যমকে জানান, কম আয়ের মানুষের জন্য আবারো গত মাসের মতো কম দামে রোববার থেকে টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। আগের দরেই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। 

পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। তবে শুক্রবার এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তিনি জানান, টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল ৬০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকায় এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারবেন। একজন ক্রেতা সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি চিনি ও দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন।  

এদিকে রাজধানীর টাউনহলের মেইন রোডে গতকাল দেখা যায়, টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য বিক্রি করছেন টিসিবির ডিলার মেসার্স নুর মোহাম্মদ ট্রেডার্সের নুর মোহাম্মদ। ক্রেতাদের ভোগান্তির ও পণ্য না পাওয়ার হাহাকারের ব্যাপারে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এক হাজার ১০০ কেজি পণ্য পেয়েছি। কিন্তু চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে সবাইকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যা আছে তাই দিচ্ছি। শুধু মোহাম্মদপুরে নয়, এই দৃশ্য ফার্মগেট, প্রেস ক্লাবসহ প্রায় সব ট্রাক সেলেই। 

বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছেন না ক্রেতারা। উল্লেখ্য, এক মাস বিরতির পর রোববার থেকে ফের এ কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম খুব বেশি। তাই কাকভেজা বৃষ্টিতেও ক্রেতারা লাইনে দাঁড়ায় কম দামে পণ্য পাওয়ার আশায়। 

টিসিবির উল্লেখ করা বাজার দরে দেখা যায়, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোয় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫০-১৬০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা, বড় দানার মসুর ডাল প্রতি কেজি ৮৫-৯০ টাকা, মাঝারি মানের মসুর ডাল ৯৫-১০০ টাকা, ছোট দানার সবচেয়ে ভালো মানের মসুর ডাল ১২০-১৩০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা কেজি।