Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

শামীম ওসমানে আগ্রহ সবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১১, ২০২২, ০৭:১০ পিএম


শামীম ওসমানে আগ্রহ সবার

রাজধানীর ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনা। নির্বাচনি মাঠে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে রসায়ন বেড়েই চলেছে। 

আর আলোচনা-সমালোচনায় থাকা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান রয়েছেন আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাকে নিয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থক, ভোটার ও মিডিয়ার আগ্রহের কমতি নেই। সবমিলিয়ে নাসিক নির্বাচন এখন সারা দেশের নজরে রয়েছে।  

গতকাল মঙ্গলবার সিটি কর্পোরেশনটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো নগর এখন পোস্টারের নগরী। কাউন্সিলর ও মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণায় ভোটারদের মধ্যেও উৎসব বিরাজ করছে। এবারের ভোটে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এবার নির্বাচনে ভোটের মাঠে নেমে শামীম ওসমানের সঙ্গে বিরোধেও জড়িয়ে পড়েন আইভী। শামীম ওসমানের অনুসারীরা তৈমূরের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেন শামীম ওসমান। 

সেখানে তিনি বলেন, কোনো দল-মতের কারণে আমি রাজনীতিতে আসিনি। রাজনীতি করতে এসেছি জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে। রাজনীতি করতে এসেছি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে। আমি নৌকার বিরুদ্ধে নই, নৌকা প্রতীক আমাদের রক্ত দিয়ে কেনা প্রতীক। আজ থেকে নৌকার হয়ে মাঠে নামলাম। সংবাদ সম্মেলন করে শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে নামার ঘোষণা দিলেও স্থানীয়রা মনে করছেন, ভোটের মাঠে আইভী আসলে শামীম ওসমান অনুসারীদের সমর্থন পাবেন না। 

তারা বলছেন, শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে নামার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু একবারের জন্যও আইভীর নাম উল্লেখ করেননি। তিনি হয়তো দলীয় চাপে নৌকার পক্ষে থাকার কথা বলছেন বলে মনে করছেন অনেক ভোটার। 

অন্যদিকে, তৈমূর বিএনপি নেতা। দলীয়ভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়া হলেও বিএনপি-জামায়াতের লোক তার পক্ষে রয়েছে। বিএনপি কৌশল করে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তাকে কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। দল থেকে অব্যাহতি দেয়ায় সাধারণ মানুষের একটি অংশের সিমপ্যাথি পাচ্ছেন তৈমূর। 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, আইভী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঘরের মাঠেও চ্যালেঞ্জে রয়েছে। তিনি ত্রিমুখী লড়াইয়ে রয়েছেন। একদিকে, ভোটারের মন জয়, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আর নিজ দলের মধ্যে থাকা বিরোধীদের। আর তৈমূর অব্যাহতির নামে আওয়ামী লীগের একটি অংশকে কাছে নিতে চাচ্ছেন, বিএনপি-জামায়াত তো সঙ্গে আছেই। অব্যাহতি রাজনৈতিক কৌশল। 

গতকাল নগরীর খানপুর এলাকা থেকে গণসংযোগ করেছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় শামীম ওসমান প্রসঙ্গে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, উনি (শামীম ওসমান) কীভাবে মাঠে থাকবেন, উনি একজন সংসদ সদস্য। আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে তারা মাঠে থাকলে। আমি আবারো গণমাধ্যমের কাছে বলি আমার আস্থা সবসময় জনগণের প্রতি, আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। এর বাইরে কারো কাছে আমি আস্থা রাখি না।

আইভী বলেন, দল আমার পাশে আছে এখন দলের ভেতর থেকে কে আমার পাশে আসবে সেটা আমার বিষয় নয়, দলের বিষয়। আমার আস্থা আমার দলের প্রধান, দল ও জনগণের কাছে। নির্বাচনে আইভীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার যে অভিযোগ করেছেন তা নতুন কোনো চাল বলে মন্তব্য করেন আইভী। 

নৌকার প্রতীকের প্রার্থী বলেন, আমি দেখছি উনি প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাহলে বারবার কেন অভিযোগ করছেন তা আমি জানি না। আমি প্রভাব বিস্তার করি না। এখানে প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নই আসে না। কারণ আমি নারায়ণগঞ্জের কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সুতরাং আমি আমার মতো করে প্রচারণা করছি। ওনি উনার মতো করে করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারের অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, ‘আমি কোনো প্রভাব বিস্তার করি না। তৈমূর অভিযোগ করছে সেটা তার নতুন কোনো চাল।’ 

আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে আমার প্রভাব বিস্তার করার মতো লোকবল নাই। প্রশাসন কখনো আমাকে সহযোগিতা করে নাই। হঠাৎ করে প্রশাসন আমাকে সহযোগিতা করবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। প্রতিটা নির্বাচনের একটা রূপ থাকে, হয়তো তারা সেটা করছে কিন্তু আমি জানি না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হয়রানির অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, তার ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বসে নির্বাচন করবেন, কিন্তু ভোট থেকে সরবেন না। নগরীর চাষাঢ়া মিশনপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মঙ্গলবার এসব কথা বলেন তৈমূর আলম খন্দকার।

তৈমূর বলেন, ‘নানা অজুহাতে কর্মী-সমর্থকদের আটক করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে বারবার অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’ 

জাহাঙ্গীর কবির নানককে উদ্দেশ করে তৈমূর বলেন, ‘উনি আমাকে ঘুঘু দেখেন, ঘুঘুর ফাঁদ দেখেন নাই— একথা বলার পর থেকে আমার লোকজনকে হয়রানি শুরু হয়েছে। আপনারা কি চান না নারায়ণগঞ্জে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। আমি মনে করি, এই নির্বাচন নিয়ে যদি ঘুঘুর ফাঁদ দেখানো হয়, তাহলে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আমি গভীরভাবে মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর নজরের বাইরে গিয়ে কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা অন্যভাবে প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের জুলুম-অত্যাচার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছেন। তারা গাড়ি ও মোটরসাইকেলসহ প্রতি রাতে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে যায়।

আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশা করি তিনি নারায়ণগঞ্জের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন’— বলেন তৈমূর। পরে প্রচারণায় নেমে শামীম ওসমান ও আইভীকে উদ্দেশ করে তৈমূর বলেন, গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, পত্রিকায় দেখেছি। আরে ভাইবোন এক দলের লোক, তারা এক হতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে যে বিভাজন তা পরিষ্কার।