Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

টুল-পিঁড়িই তাদের সম্বল

জানুয়ারি ১২, ২০২২, ০৮:১০ পিএম


টুল-পিঁড়িই তাদের সম্বল

নেই রুম কিংবা ছাউনি। নেই আলিশান কোনো চেয়ারের উপস্থিতি। খোলা আকাশের নিচেই দিব্যি চুল ছাঁটেন, দাড়ি গোঁফ কামান নরসুন্দর জসিম উদ্দিন। জসিম উদ্দিনের বয়স ৩৫। ১৫ বছর ধরে নরসুন্দর পেশায় তিনি। একসময় গ্রামের হাট-বাজারে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল কাটতেন। ভালো উপার্জনের আশায় ১৫ বছর আগে আসেন ঢাকায়। দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন এই পেশার উত্থান-পতন। 

শুধু গ্রামেই নয় রাজধানীর কিছু কিছু জায়গায় এখনো দেখা মিলে এমন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কর্মযজ্ঞ। এক সময় গ্রামের হাট-বাজারে গাছের তলায় নরসুন্দরেরা ক্ষুর-কাঁচি নিয়ে দল বেঁধে কাজ করত। কিন্তু বর্তমান সময়ে যা রূপকথার গল্পের মতো। ধীরে ধীরে নগর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে নরসুন্দরদের কাজের ধরনও। গাছ তলা থেকে এখন রূপান্তর হয়েছে দামি সুসজ্জিত দালানে, বেড়েছে সেবা নেয়ার দামও। 

কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে শহরে ব্যতিক্রম নরসুন্দরের খোঁজ পাওয়া যায়। একযুগ আগেও বাড়ি বাড়ি গিয়েও তারা চুল দাড়ি কামাতেন। তখন গ্রামের কেউ কেউ আবার বাৎসরিক চুক্তিতে ধান, চাল ও ডালের বিনিময়েও তাদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের চুল দাড়ি কাটিয়ে নিতেন। 

গ্রামে সদ্যজাত শিশুর মাথা ন্যাড়া করার দায়িত্বও তাদের পালন করতে হতো। এছাড়া শিশু ভূমিষ্ট হলে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি অথবা এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের কাছে সংবাদ আদান-প্রদানের কাজটিও তাদের মাধ্যমে করানো হতো। এ ক্ষেত্রে উভয় পরিবারের কাছ থেকেই তারা পুরস্কৃত  হতেন। এখনকার মানুষের কাছে সেলুন বলতেই একটা রুমের মাঝে থাকবে এয়ার কন্ডিশন, চারদিকে আয়না, দামি দামি চেয়ার টেবিল ছাড়াও নানান রকমের সরঞ্জামাদি। 

কিন্তু একটা সময় এমনটি কল্পনায়ও ছিল না। সেলুন বলতেই ছিল গাছতলার খোলা আকাশের নিচের সেলুন। তবে এখন রাজধানীর কিছু কিছু জায়গায়ও আধুনিকতার ভিড়ে টিকে আছে তারা। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি, মতিঝিল কিংবা শাহবাগ এলাকায় প্রায় সময়ই দেখা মিলে তাদের। তেমনই তাদের একজন নরসুন্দর জসিম উদ্দিন। তার ভাবনায়ও রয়েছে আদি যুগের সঙ্গে নবযুগের মিশেল।

কথা হয় জসিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। একটা সময় ছিল মানুষ তখন সেলুনের দোকানে যেতে চাইত না। সবাই খোলা আকাশের নিচে বসে চুল কাটতে পছন্দ করত। এখনো মানুষজন আসে কিন্তু আগের মতো নয়। আমাদের হাতের কাজ আর আলিশান দোকানের কাজ এক রকমই। কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের কাছে চুল-সেভ ৭০-৮০ টাকা। আর দোকানে চুল কাটতেই টাকা নেয় ৮০-১০০ টাকা। শহরে একটা দোকান নিতে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। যেই টাকা কামাই করি, দোকান নিয়া চালাইতে পারমু না। তাই রাস্তাতেই কাজ করি।’

রাজধানীর মতিঝিলে খুঁজে পাওয়া যায় আরেকজন ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরকে। তার নাম সুব্রত কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘আগে বাবার সাথে গ্রামের বাজারে নাপিতের কাজ করতাম। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মেলায় বসতাম চুল কাটতে। বাবা মারা যাওয়ার পর ঢাকা চলে আসি। পুরান ঢাকায় পার্কের গাছের নিচে বসে কাজ করতাম। ভালোই চলত। এখন আর আগের মতো কাজ কাম নাই। সবাই দামি দামি সেলুনে যায়। আমাদের কাজ কিন্তু খারাপ না। শহরে দোকান নিতে পারি না, কারণ দোকানের ভাড়া অনেক বেশি। এতটাকা পাব কই? তাই খোলা আকাশের নিচে বসে যা কামাই তা দিয়েই সংসার চলে যায়।’