Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বস্তির মাঝে শঙ্কার ছায়া

জানুয়ারি ১৫, ২০২২, ১০:৫৫ পিএম


স্বস্তির মাঝে শঙ্কার ছায়া


ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। বছরের প্রথম দিনে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে আনন্দ নিয়ে আসে এই মেলা। নতুন নতুন পণ্যের প্রদর্শনী হয় মেলাতে। পাশাপাশি ক্রেতা আকর্ষণে থাকে নানান ধরনের ছাড়-অফার। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে গত বছর হয়নি মেলা। 

দুই বছর পর এবার নতুন ও স্থায়ী জায়গায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মেলার আয়োজন করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি। রাজধানীর অদূরে আয়োজিত এই মেলায় যাতায়াত বিড়ম্বনাসহ নানান সমস্যা থাকলেও করোনার মধ্যেও মেলার আয়োজন করায় স্বস্তি ফিরেছে বিক্রেতাদের মাঝে। 

তারা বলছেন, নতুন জায়গায় বিক্রি কম হলেও একেবারে বসে থাকার চেয়ে ভালো। অন্যদিকে মেলা শুরুর পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। নতুন ধরন ওমিক্রনের ধাক্কায় দেশে চলছে করোনার নতুন ঢেউ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে ১১ দফা বিধিনিষেধ। কিন্তু বাণিজ্যমেলায় মাস্ক পরাসহ কোনো বিধিনিষেধই মানা হচ্ছে না। নিয়ম রক্ষায় গেট দিয়ে ঢুকার সময় মাস্ক পরলেও ভেতরে ঢুকেই মাস্ক খুলে ফেলছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। আবার অনেকেই গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে রাখছেন। 

ফলে করোনা মহামারির এ সময়ে বাণিজ্যমেলা থেকে বড় আকারে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে চলমান ঢেউয়ের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্যমেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইপিবি। কিন্তু সংক্রমণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে এ সিদ্ধান্ত ঠিক থাকবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্টল মালিকরা। 

তারা বলছেন, ‘সবসময় বুক ধড়ফড় করে, কখন মেলা বন্ধের ঘোষণা আসে।’

এদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় রীতিমতো জমে উঠেছে মেলা। গত শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় দর্শক সমাগম ছিল অন্য দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। উপচে পড়া ভিড়ে মেলায় প্রাণ ফিরে আসে। বিগত সময়ে ঢাকায় আয়োজিত মেলার মতোই উপস্থিতি ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। কিন্তু বেচাবিক্রি ছিল একেবারেই কম। অধিকাংশই এসেছেন মেলা দেখতে কেউ কিছু কিনছেন না। 

ঘুরছেন দেখছেন ছবি তুলছেন, মজা করছেন। মেলায় এসে মাস্ক ছাড়া ঘোরাঘুরি করছেন এমন দর্শনার্থীদের একজন নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থেকে আসা সাইফুল বলেন, মাস্ক পরলে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই মাস্ক খুলে ফেলেছেন। আসলে তারা মাস্ক পরতে অভ্যস্ত নন। মেলায় ঢুকার সময় নিয়ম রক্ষার জন্য পরেছেন। 

তবে মাস্ক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপের কথা জানিয়ে মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলায় দর্শনার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ মেলায় মাস্কবিহীন ঘোরাফেরা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, মেলায় প্রবেশে গতকাল অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থীই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। ফলে মেলার প্রবেশদ্বারে ঠেলাঠেলি কিংবা চাপের মুখে কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। ছুটির দিন থাকায় শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে। 

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা চাকরিজীবী নাহিদ বলেন, ‘ছুটির দিন থাকায় পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। খোলামেলা জায়গায় প্রাকৃতিক পরিবেশে মেলার আয়োজন হওয়ায় প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়েছে। মেলাটি উপভোগ করেছি, ভালো লেগেছে।’ তবে জিনিসপত্রের দাম এত বেশি কেনা সম্ভব না। আমরা সাধারণত এত দামের জিনিস ব্যবহার করি না।

যাত্রাবাড়ী থেকে আসা চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুযোগের অভাবে এতদিন মেলায় আসতে পারিনি। ফেসবুকে মেলায় অন্যদের ছবি দেখে আসতে ইচ্ছা করছিল। তাই ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে চলে এসেছি।’ কিছু কিনেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দূর থেকে এসেছি। নিয়ে যাব কিভাবে তাই কিনিনি। কিছু স্টল থেকে শোরুমের ঠিকানা সংগ্রহ করেছি পরে কিনব।  

মেলার আনন্দ ধুলায় আর যানজটে বিলীন হয়ে গেছে জানিয়ে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে আসা শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ জানান, যানজটের কারণে দীর্ঘ পথ হেঁটে তিন ঘণ্টা পর মেলায় প্রবেশ করেছেন তিনি। যাওয়ার সময় কিভাবে যাবেন এখন সেটাই ভাবছেন। 

তিনি বলেন, ‘এবারের মেলায় বিদেশি স্টল কম। যেহেতু এটি একটি আন্তর্জাতিক মেলা এখানে বিদেশি আরো স্টল থাকার দরকার ছিল। দেশি পণ্য তো আমরা সবসময়ই পাই। বিদেশি স্টল থাকলে আমরা নতুন নতুন পণ্য পেতাম। শুক্রবার মেলায় দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্টলে তাদের পছন্দের পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখেন ও কেনাকাটা করেন। বেশি ভিড় ছিল শো-পিস, কাপড়, অলঙ্কার, তৈজসপত্র, কুটির শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন ও কয়েদিদের উৎপাদিত পণ্যের স্টলে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। কিন্তু ফার্নিচার, মোটরবাইক, ফ্রিজ ও টিভির স্টলগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থী বেশি থাকলেও তুলনামূলক বিক্রি হচ্ছে কম। তবে এসব স্টলের শোরুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীরা। 

গাজী গ্রুপের বিক্রয়কর্মী ফাহিম মিয়া বলেন, ‘কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে বাণিজ্যমেলায় স্টল দেয়া হয়েছে। এ জন্য বিশেষ ছাড়ে আমরা পণ্য বিক্রয় করছি।’ 

আকতার ফার্নিচারের দুলাল রায় বলেন, ‘নান্দনিক ডিজাইনের ফার্নিচার দিয়ে স্টল সাজিয়েছি। মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন কিন্তু ক্রেতা কম। তবে অনেকেই পরে ক্রয় করবেন। তাই শোরুমের ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন।’ 

শিক্ষা উপকরণ বিজ্ঞান বক্স বিক্রয় স্টলের বিক্রয়কর্মী রাকিব হাসান বলেন, ‘আমাদের স্টলে শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞান বক্স আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের কলম, পেনসিল, জ্যামিতি বক্স ও রং তুলিসহ নানা শিক্ষা উপকরণ রয়েছে। ক্রেতাদের কাছে প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। 

এছাড়া মেলায় খাবারের স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় ছিল। মেলায় ঘোরাঘুরি শেষে অনেকেই ফুচকা-চটপটির স্বাদ নিয়েছেন। কেউ পরোটা, বিরিয়ানিও খেয়েছেন। সঙ্গে কফি, আইসক্রিম তো ছিলই। আগের মেলার মতো এবারের মেলায় খাবারের দাম নিয়ে অভিযোগ নেই। 

খাবারের দাম আগের মেলাগুলোর চেয়ে তুলনামূলক কম। ঘুরতে আসা নাসির হোসেন বলেন, ঢাকার মেলায় খাবারের অনেক দাম ছিল। এক প্লেট ফুসকার দাম ৫০০ টাকা, চটপটি ৩০০ টাকা ছিল। এখানে খাবারের দাম কম আছে। নান্না বিরিয়ানি বিক্রেতা জসিম জানালেন একই কথা। 

তিনি বলেন, বাইরের চেয়ে এখানে খরচ অনেক বেশি হলেও একই দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঢাকায় আমরা বেশি দামে খাবার বিক্রি করতে পারতাম, অনেক লাভ হত। এখানে বেশি দাম বেশি নেয়া যায় না। বিফ বিরিয়ানি ২২০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি ২৬০ চিকেন বিরিয়ানি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আমরা এক প্লেট ফুচকা এক হাজার টাকা বিক্রি করতাম এখানে এত দামে কেউ খায় না।