Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ চান ডিসিরা

আমিরুল ইসলাম

জানুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৭:৩৫ পিএম


কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ চান ডিসিরা

দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার বেশিরভাগ ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত। সরকারের পক্ষে ভূমি ব্যবস্থাপনার কাজ করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এবং সরকারি কমিশনার ভূমি (এ্যাসিল্যান্ড)। 

মাঠ প্রশাসনের এসব কর্মকর্তা দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে পড়ছেন বিভিন্ন সমস্যায়। চলমান ডিসি সম্মেলনে ভূমি নিয়ে তারা বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। প্রস্তাব তুলছেন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের। ডিসি সম্মেলনের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, কৃষিজমি অকৃষিকাজে ব্যবহারের বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। 

তারা বলছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালে ১৬১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। এই ম্যানুয়ালে আবার বলা হয়েছে, আবাসিক শিল্প বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য কৃষক নয় এমন ব্যক্তি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কৃষিজমি ক্রয় করতে পারবেন। বিষয়টি স্পষ্টকরণের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। 

প্রতিটি জেলায় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন করে জাতীয় জিআইএসের মাধ্যমে জরিপ কাজ সম্পন্ন করে একটি খতিয়ান নম্বর হিসেবে ডিজিটালি ম্যাপসহ খতিয়ান প্রকাশের প্রস্তাব করেছেন তারা।

এই ব্যবস্থা নিয়ে যে সব সুবিধা পাওয়া যাবে তা উল্লেখ করে তারা বলছেন, এতে ব্যক্তির নিষ্কণ্টক ভূমি মালিকানা নিশ্চিত হবে। দেশের জন্য অভিন্ন ডিজিটাল খতিয়ান প্রস্তুত করে একই ব্যক্তিকে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ অর্জনে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে। ব্যক্তির এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমি অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। 

জমির মালিকানা বদলের সময় ওই অ্যাকাউন্ট থেকে জমির পরিমাণ ডেবিট বা ক্রেডিট হবে মানে বাড়বে কমবে। এনআইডি ব্যবহার করলে উত্তাধিকারদের মধ্যে ভূমির বণ্টনে স্বচ্ছতা আসবে। সরকারি জমি চিহ্নিত হবে। খাসজমি সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত জরিপ কাজ হওয়ায় সীমানা দ্বন্দ্ব বেড়েই চলছে। সেই ক্ষেত্রে সীমানা দ্বন্দ্ব কমে যাবে। প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে জিআইএসের মাধ্যমে অনেকটা নির্ভুল জরিপ সম্পন্ন হবে। 

বর্তমানে বেহাত হওয়া অনাবাদি খাস সম্পত্তি উদ্ধারে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় না। সরকারি খাস জমি প্রতিনিয়ত দখল ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। উচ্ছেদে বিরাট পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। সে ক্ষেত্রে মামলা পরিচালনা, মামলায় জেতার পর দখল এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পুরাতন সীমানা প্রাচীর নতুন করে নির্মাণের প্রয়োজন হয়। এসব কাজে পর্যাপ্ত অর্থের দরকার পড়ে। বিষয়টি বিবেচনার জন্য ডিসিরা সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছেন সরকারি খাসজমি উদ্ধার এবং দখল বজায় রাখতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা।  

হাটবাজারের মূল মালিক সরকার। সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এর ব্যবস্থাপনায় কাজ করেন। বাৎসরিক ডাকের মাধ্যমে সরকার হাটবাজার থেকে রাজস্ব আহরণ করে। হাটবাজারের জমি অধিগ্রহণ করে পেরিফেরিভুক্ত করতে হয়। কিন্তু দেশে অধিকাংশ হাটবাজার পেরিফেরিভুক্ত নয়। অর্থাৎ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নকশায় হাটবাজার স্থাপন করা হয়নি। ফলে হাটবাজারের কোন ভিটি, চান্দিনা বা সরকারি আর কোন ভিটি বেসরকারি মালিকানায়, তা অস্পষ্ট। 

এরফলে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, নামজারি এবং মালিকানাধীন ভিটিতে ভবন নির্মাণের বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব। সে ক্ষেত্রে ডিসিরা বিষয়টি স্পষ্ট করে আইন ও বিধিমালা এবং নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন।

একই সঙ্গে ডিসিরা বলছেন, পেরিফেরি করতে অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা।  জলমহাল ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। জলমহাল নীতিমালায় বলা হয়েছে জলমহালের নিকটবর্তী মানে তীরবর্তী স্থানে বসবাসরত মৎস্যজীবী সমিতির অনুকূলে জলমহাল ইজারা বা বরাদ্দ দিতে হবে। এর ফলে সরকারি রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে বলে জানান ডিসিরা।

আবার অনেক সময় দেখা যায় এক উপজেলায় জলমহালের চেয়ে মৎস্যজীবী সমিতি অনেক কম। নীতিমালার বাধ্যবাধকতার কারণে একটি মৎস্যজীবী সমিতিকে দুইটির বেশি জলমহাল ইজারা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেক জলমহাল ইজারার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। 

১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৮৬ (২) ধারায় বলা হয়েছে একটি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ৩০ বছর পর যদি ওই স্থানে পুনরায় চর জাগে, তাহলে ওই জমিতে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আগে যার মালিকানায় ছিলো তিনি ওই জমির মালিক হবেন।

আবার আইনটির ৮৬(৭) ধারায় বলা হয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমি তাকে বন্দোবস্ত দেয়া যাবে। এই ধারা দুইটি পরস্পরবিরোধী। বিষয়টি স্পষ্টকরণের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। এছাড়া তারা ১৯৪৮ সালের জরুরি হুকুম দখল আইনের আওতায় অনিষ্পন্ন গেজেট প্রকাশের প্রস্তাব করেছেন। গেজেট প্রকাশ না হওয়ায় জটিলতা বাড়ছে। 

ডিসিরা বলছেন, বর্তমানে ভূমির যাবতীয় কাজ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। ভূমিসেবা সমূহ ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসএ শাখায় কোনো আইটির (টেকনিশিয়ান বা প্রোগ্রামার) পদ নেই। তাছাড়া ওই শাখায় আগে থেকে জনবল সংকট রয়েছে। নতুন করে আইটির পদ সৃষ্টি হলে কাজে গতি আসবে। জনগণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা পাবেন। 

সে ক্ষেত্রে আইটির পদ সৃজনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে দিন দিন ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। তিন ফসলি জমিও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বিষয়টির প্রতি মনোযোগ এবং কার্যকর আইন ও প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। 

ডিসিরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাগুলোতে ভূমি জরিপ না হওয়ায় কোনো রেকর্ড তৈরি করা যায়নি। ফলে ভূমি বিরোধের বিষয়ে সঠিক কোনো সমাধান দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে দিন দিন বাড়ছে ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত কোন্দল। বৃদ্ধি পাচ্ছে সংঘর্ষ-সংঘাত। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়ার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। 

অপরদিকে সমতলের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলায় ভূমির মালিকানা ও ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে কোনো রেজিস্টার নেই। জমাবন্দি নামক এক ধরনের অবৈজ্ঞানিক রেজিস্টারে ভূমির মালিকানা ও ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়। রেজিস্টারের ফরমেট না থাকায় সঠিকভাবে মালিকানার তথ্য আপ টু ডেট রাখা যায় না। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়েও একই অবস্থা। বিষয়টি সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা।