Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ক্রমশ অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির

মাহমুদুল হাসান

জানুয়ারি ২০, ২০২২, ০৮:৩৫ পিএম


ক্রমশ অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির

১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেও আটকানো যাচ্ছে না সংক্রমণ। জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। জিনম সিকোয়েন্সিয়ের রিপোর্ট বলছে, ওমিক্রন-ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে কাবু দেশ। প্রতি চারজনের নমুনায় এখন একজন করোনা শনাক্ত হচ্ছে। 

এক সপ্তাহে শনাক্তের হার ২২৮ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকা ও রাঙামাটির পর আরও ১০ জেলা উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেখানে গড়ে ১০ শতাংশের ওপরে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দেশ এখন তৃতীয় ঢেউয়ে নিমজ্জিত হয়েছে। 

গতকাল সারা দেশে ১০ হাজার ৮৮৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে চারজনের। অস্বাভাবিক হারে রোগী শনাক্তের কারণে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, মাস্ক পরিধান, নিয়মিত বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়ে প্রথম ঢেউয়ের মতো সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। 

অথচ পরিস্থিতি গেলো বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে সৃষ্ট আগস্টের মতোই ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। গত বছর ২০ শতাংশের বেশি রোগী শনাক্তের পর লকডাউন জারি করা হয়। রেড জোনে থাকা জেলায় তখন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। কিন্তু এ বছর জীবন ও জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে সবাইকে টিকা নিশ্চিত করতে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জোর দিচ্ছে সরকার। 

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি জানিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি সচিবালয়ে বলেছিলেন, যেভাবে রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে, মানুষ সতর্ক ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে হাসপাতালে রোগী জায়গা দেয়া যাবে না। 

জনস্বাস্থ্যবিদরাও বলছেন, শনাক্তের ন্যূনতম ৫-১০ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও আগামীতে হাসপাতালে জায়গা দেয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই এখনই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রাজধানী ঢাকায় ৪৭টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। এসব হাসপাতালে রোগীদের জন্য শতভাগ সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। ৪৭ হাসপাতালে চার হাজার ৬৮৬টি সাধারণ বেড, ৭৭৮টি আইসিইউ বেড এবং ৫২৬টি এইচডিইউ বেড ডেডিকেটেড করা হয়েছে।

সেখানে এক হাজার ১৫৫ জন রোগী সাধারণ বেডে, ১৪০ জন আইসিইউ বেডে এবং ৮৭ জন এইচডিইউ বেডে ভর্তি রয়েছে। গতকাল ২৩৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ১২১ জন। ঢাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ১০ হাজার ৮৪টি।

সারা দেশে ১৩ হাজার ৪৬৬টি সাধারণ বেড, এক হাজার ২৩৭টি আইসিইউ বেড, ৭১৩টি এইচডিইউ বেড রয়েছে। সেখানে এক হাজার  ৮৫৭টি সাধারণ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে। ২২৫ আইসিইউ বেডে এবং ১০০ এইচডিইউ বেডে রোগী ভর্তি রয়েছে। 

গতকাল নতুন করে আরও ৪১৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। একই সময়ে ২২৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। কোভিড চিকিৎসার জন্য ২৯ হাজার ২০৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে ১১৯টি হাসপাতালে এবং আরও তিন হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনা সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা ও রাঙামাটির পর নতুন করে ১০টি লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব জেলায় সংক্রমণের হার অন্তত ১০ শতাংশ।

লাল তালিকাভুক্ত জেলাগুলো হলো— গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড়। আগের দুটি ঢাকা ও রাঙামাটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, রাজধানীতে করোনা সংক্রমণের হার ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। রাঙামাটিতে করোনা সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। 

এছাড়া গাজীপুরে করোনা সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৪৯, রাজশাহীতে ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যশোরে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, বগুড়ায় ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ, দিনাজপুরে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৮ দশমিক ৪৮, লালমনিরহাটে ১০ দশমিক ৭১, খাগড়াছড়িতে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ ও পঞ্চগড়ে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

হলুদ জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা ৩২ জেলায় শনাক্তের হার অন্তত ৫ শতাংশ। জেলাগুলো হলো— সিলেট, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, নাটোর, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, নড়াইল, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, শেরপুর, ঝালকাঠি ও ঠাকুরগাঁও। এ ছাড়া এখনো করোনা থেকে ঝুঁকিমুক্ত আছে ১৬ জেলা। এই জেলাগুলোতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে। 

ঝুঁকিমুক্ত জেলাগুলো হলো— ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এক ভার্চুয়াল বুলেটিনে অংশ নিয়ে বলেন, গত ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এসময় শনাক্ত রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালগুলোতে কোভিড ডেডিকেটেড যেসব শয্যা আছে, সেখানে নতুন করে করোনায় রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা সে অনুপাতে বাড়েনি। তবে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমাদের অক্সিজেনের সংকট নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর— এগুলো প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট পরিমাণ মজুত আছে।

গত ২৪ ঘণ্টার পরিস্থিতি : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সারা দেশে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৮ হাজার ১৮০ জন। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৮৮৮ জনের দেহে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন। এছাড়াও গতকাল বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫৭৭ জন। এ নিয়ে দেশে সুস্থ হয়েছেন মোট ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জন রোগী। 

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ভাইরাসবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অধিপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল প্রাণহারানো চারজনের মধ্যে একজন পুরুষ এবং তিনজন নারী। এদের সবাই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ পর্যন্ত করোনায় ২৮ হাজার ১৮০ জন মানুষ মারা গেছেন।

তাদের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ১৭ জন (৬৩ দশমিক ৯৪ ভাগ) ও নারী ১০ হাজার ১৬৩ জন (৩৬ দশমিক শূন্য ছয় ভাগ)। একদিনে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ ভাগ। সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক শূন্য পাঁচ ভাগ আর মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭০ ভাগ।

এতে আরও বলা হয়েছে, রাজধানীসহ সারা দেশে ৮৫৭টি পরীক্ষাগারে গতকাল ৪০ হাজার ৮৯৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৪১ হাজার ২৯২টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল এক কোটি ২০ লাখ সাত হাজার ৫৮১টি।