Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বিধিনিষেধ কাগজে আছে মাঠে নেই

মাহমুদুল হাসান

জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৬:৩৫ পিএম


বিধিনিষেধ কাগজে আছে মাঠে নেই
  • থুতনিতেই ঝুলছে অধিকাংশের মাস্ক
  • আগের মতো তৎপরতা নেই প্রশাসনের
  • কড়াকড়ি নেই টিকা সনদ প্রদর্শনে
  • টিকার বাইরে বেশির ভাগ পরিবহন ও রেস্টুরেন্ট শ্রমিক

২৩ দিনে আড়াই শতাংশ থেকে সোয়া ৩১ শতাংশের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে গত বছর আরোপিত কঠোর লকডাউন পরিস্থিতির চেয়েও বেশি শনাক্ত হচ্ছে। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না রোগী শনাক্তের স্রোত। দিন দিন হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। 

পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুই ধাপে ১৭ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যেখানে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান ও টিকা সনদ সাথে রাখা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও দ্রুত টিকাদানসহ স্বাস্থ্যবিধিতে জোর দেয়া হয়েছে। 

এসব নির্দেশনা এখন শুধুই কাগুজে আইন। নেই কোনো বাস্তবায়ন। রেস্টুরেন্টে কিংবা শপিংমলে দেখতে চাওয়া হয় না কোভিড টিকা সনদ কিংবা আরটিপিসিআর টেস্টের রিপোর্ট। গণপরিবহনে শুধু নির্দেশনাতেই যেন সরকারের দায়িত্ব শেষ। আগের মতো সব আসন ও দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা। 

এমনকি হাসপাতালে রোগী ও দর্শনার্থীরা পরতে চান না মাস্ক। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অল্প দিনে বানের পানির মতো বাড়ছে রোগী। বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে হাসপাতালে। ব্যাহত হচ্ছে অন্যান্য জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা। এত কিছুর পরও সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠেনি সচেতনতা। অন্যদিকে এসব স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অতীতের মতো সরকারকেও উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। 

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কিছু মানুষকে জরিমানা করা হলেও অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। মাঠ প্রশাসনকেও বেশ উদাসীন আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন ব্যবস্ততম এলাকা, বাজার, হাসপাতাল ও শপিংমল, বাস স্টেশন ও কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এমন চিত্র প্রায় সারা দেশেই।
  
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, বিধিনিষেধ কাগজের টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এসব প্রয়োগ ও নজরদারির জন্য যে জনবল প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। গণপরিবহন বা রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের ৩৫ শতাংশও টিকা নিতে পারেননি। সব মিলিয়ে বিধিনিষিধগুলো বাস্তবায়নযোগ্য হয়ে উঠছে না। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, লকডাউন চলাকালে গত বছরের ২৪ জুলাই রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গতকাল রোববার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। অথচ চলতি মাসের শুরুতে এই সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেদিন মারা যায় চারজন করোনা রোগী। 

এদিকে গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। আস্তে আস্তে ডেল্টার জায়গাগুলো দখল করে ফেলছে ওমিক্রন। ৭৩ শতাংশ মানুষের নাক দিয়ে পানি ঝরছে। ৬৮ শতাংশ মানুষের মাথা ব্যথা করছে। ৬৪ শতাংশ রোগী অবসন্ন-ক্লান্তি অনুভব করছে। ৭ শতাংশ রোগী হাঁচি দিচ্ছে। গলা ব্যথা হচ্ছে ৭ শতাংশ রোগীর। ৪০ শতাংশ রোগীর কাশি হচ্ছে। 

এ বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এখন সিজনাল যে ফ্লু হচ্ছে তার সাথে কিন্তু ওমিক্রনের মিল রয়েছে।’ তিনি বলেন, ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। গত বছরের শেষ দিক থেকে এ বছরের শুরু পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেয়ার জন্য আগ্রহী রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।