Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

শীতে গ্যাস সংকট যেন নিয়তি

জানুয়ারি ২৮, ২০২২, ০৭:০৫ পিএম


শীতে গ্যাস সংকট যেন নিয়তি

প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস তিলোত্তমা নগরী ঢাকায়। নানা ভোগান্তির মধ্যেও এখন নতুন করে গ্যাসের সংকট চরম বিড়ম্বনার মুখোমুখি করছে রাজধানীবাসীকে। প্রতি বছরের মতো এবারো শীত মৌসুমে গ্যাসের সরবরাহ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

জানা গেছে, গ্যাসের দৈনিক চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সরবরাহ ছিল দুই হাজার ৭২৬ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি ছিল এক হাজার ২৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতিদিনই এমন ঘাটতি থাকছে বলে জানা গেছে। 

তবে সেবা সংস্থা তিতাস কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলাসহ খোদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের মাধ্যমে কারিগরি কারনে ১২ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস গ্যাসের অন্তর্গত এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ থাকবে বলে জানিয়েছিলেন। যদিও সে সময়ও পার হয়েছে আজ এক সপ্তাহ। 

এ বিষয়ে এখনো সমস্যার স্পষ্ট কারণ উল্লেখ করে গণমাধ্যমে কিছু না বললেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দাবি অনুযায়ী ত্রুটি মেরামতের কাজও এতেদিনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে জানানো সমস্যারও সমাধান হয়নি। বরং দিন যত গড়াচ্ছে গ্যাস সংকটও ততই বাড়ছে। অথচ শহুরে জীবনে গ্যাস সংকটের ভয়াবহতা কতটা কঠিন তা কল্পনাও করা যায় না। 

এরই মধ্যে বলা হয়েছে, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের সংস্কার কাজের জন্যই এ সংকট। যদিও ভুক্তোভোগীরা বলছেন, প্রতি বছর শীতে গ্যাস সংকট যেন নিয়তি।

এবারকার এ সংকটের কারণ জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ সংকটের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাননি। তবে আমার সংবাদকে তিনি জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত এ সংকট থাকবে। এর মধ্যেই সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। 

গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া ঘোষণায় স্বল্প চাপের কথা বলা হলেও স্বল্পচাপ তো দূরের কথা, গ্যাসই পাচ্ছেন না রাজধানীর অনেক এলাকার মানুষ। ঘোষণার মেয়াদও চলে গেছে। এরই মধ্যে সংকটের সময়কাল দীর্ঘ করে বক্তব্য দিচ্ছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। 

শুধু রাজধানীই নয়, আশপাশের শহরগুলোতেও গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে আগামী ১০-১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোয় বিভিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে দেখা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর করা পোস্টেও গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন। 

শনির আখড়ার বাসিন্দা আরিফ হোসেন জানান, গ্যাসের চাপ একেবারেই কম থাকে দুপুরে। প্রতিদিনই বিকেল পর্যন্ত নামমাত্র যেটা থাকছে, সেটাও আগের তুলনায় অনেকটাই কম। আর শাহজালালবাগ নামের এলাকায় গত ২০-২৫ দিন যাবত গ্যাসই নেই বলে বলছেন সেখানকার বাসিন্দারা। 

ধানমন্ডির একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রতি বছর শীতের সময় গ্যাসের সংকটে ভুগতে হয়। সকাল থেকে গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিকেলও গড়িয়ে যায়, তাও গ্যাস আসছে না। আর এ করোনার সময় বাইরের খাবার নিয়ে আসতেও ভয় হয়। ঢাকা শহরে গ্যাস ছাড়া চলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অথচ এ সংকটের কোনো সমাধান হচ্ছে না। চলছে বছরের পর বছর। শুধু ধানমন্ডি নয়, রাজধানীর এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে গ্যাসের সংকট নেই। সকাল থেকে দুপুর অবধি চুলা জ্বলছে না। কোনো কোনো এলাকায় দুপুর ছাড়িয়ে রাতও হয় চুলায় গ্যাস পাওয়া যায় না।  

বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বলছেন, গ্যাস পাওয়া না গেলেও মাস শেষে ৯৭৫ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হয় ঠিকই। এর ওপর আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। গ্যাস না পেলে বিল দেবেন না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রাহকরা। 

রামপুরার বাসিন্দারাও বলছেন, দিনের বেলা গ্যাস থাকেই না। রাতে অল্প চাপে গ্যাস পাওয়া যায়। এই এলাকার বাড়ির মালিকরাও তাদের ভাড়াটিয়াদের রাতে রান্না করে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ সংকট কবে শেষ হবে কে জানে, এমন প্রশ্নও করছেন তারা।  

যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, এভাবে খুব সমস্যা হচ্ছে। সারা দিনে শুধু রান্নাটা করতে পারার টেনশন। সভ্য সমাজে এটি বিরল। রাজধানীর রাজাবাজার, তেজগাঁও, মহাখালি, আদাবর, বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুর, পল্লবী ও পুরান ঢাকার বাসিন্দারাও একই ধরনের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, টাকা দিয়েও গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। 

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানও গণমাধ্যমকে বলছেন, সামিট ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন তিনি।