Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

‘করোনা ভাইরাস : বিশ্ব পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ’

প্রিন্ট সংস্করণ॥মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০, ০৭:১৪ পিএম


‘করোনা ভাইরাস : বিশ্ব পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ’ চীনের উহান প্রদেশ থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বিমানে ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশ ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের মাধ্যমে যাতে অন্য কেউ সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য আগত সকলকেই আশকোনায় হজ ক্যাম্পে আইসোলেশনে ১৪ দিনের জন্য রাখা হয়েছে। আগত ৩১২ জনের মধ্যে ৭ জনের গায়ে সামান্য জ্বর থাকায় তাদেরকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের শরীরে করোনা ভাইরাস নেগিটিভ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন পর্যন্ত একজনও করোনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত করা হয়নি। এদিকে উহানে আরো ১৭১ জন বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছে। তারা দেশে ফিরতেও চাচ্ছেন। কিন্তু সরকারিভাবে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না নানা কারণে। তারমধ্যে অন্যতম হলো সেদেশে পাঠানো বিমানের পাইলটদের বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এতে করে দেশের পাইলটদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করছে। বিমানের পাইলটরাও এই মুহূর্তে চীনে যেতে আগ্রহী নয়। এখন পর্যন্ত চীনসহ বিশ্বের মোট ২৬টি দেশে এই করোনা ভাইরাসের জীবাণু প্রবেশ করেছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষ এতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে যাদের মধ্যে ৪৯০ জন ইতোমধ্যেই এই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত ফিলিপাইন ও হংকং-এ দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে যদিও বাংলাদেশে এই ভাইরাস এখনো আসেনি কিন্তু এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত কতটা? গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি করোনা ভাইরাস নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভাইরাসটি প্রতিরোধে বাংলাদেশের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন। একই সাথে চীনে আক্রান্ত উহান প্রদেশের ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিজস্ব অর্থায়নে ফিরিয়ে আনার কথা জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রিফিংকালে দেশের সকল বন্দর ও বিমান বন্দরে জরুরি স্ক্যান মেশিন বসানোসহ যাবতীয় পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। জরুরি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, করোনা ভাইরাসের তথ্য গাইড বই বিমান বন্দরের সকল যাত্রীকে প্রদানের উদ্যোগ থেকে জরুরি ৪টি হটলাইন (০১৯৩৭-০০০০১১/০১৯৩১১-৭১১০০১১/ ০১৯২৭-৭১১৭৮৪/ ০১৯২৭-৭১১৭৮৫) সার্বক্ষণিক খোলা রাখার কথা জানান। পরবর্তীতে উহান থেকে আগত ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে উত্তরার আশকোনার হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেনটাইন করে বর্তমানে সেইফ জোনে রাখা হয়েছে। আশার কথা এখন পর্যন্ত একজন বাংলাদেশির শরীরেও করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। দেশের মানুষকে করোনা ভাইরাস নিয়ে সর্বদা আপডেট তথ্য জানাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সার্বক্ষণিক আশকোনা হজ ক্যাম্পে একটি এবং হযরত শাহজালাল (রা.) বিমান বন্দরে অন্য একটি মিডিয়া সেন্টার খুলে দিয়েছেন। প্রতিদিনই সেখান থেকে দেশবাসী আপডেট তথ্য জানতে পারছেন। সর্বশেষ, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে নির্ধারিত কেবিনেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপিকে করণীয় কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রদান করেন যাতে করে এই ভাইরাস দেশে আসতে না পারে। নির্দেশনা অনুযায়ী চীন থেকে আগত দেশে যেকোনো মানুষকে ১৪দিন পর্যবেক্ষণে রাখার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী দেখা যায়, ২১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত চীন থেকে আগত প্রায় ৭ হাজারের মতো যাত্রীকে স্ক্যানিং করা হয়েছে। হটলাইনে প্রায় ৬শর মতো কল পাওয়া গেছে, মোট ৩৯ জনকে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়েছে যেখানে করোনা ভাইরাস নিশ্চিতকৃত হঈড়ঠ এর একজন রোগীও সনাক্ত হয়নি। শেষ কথা : দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্ট সকল শাখায় নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও আপডেট তথ্য জানাচ্ছেন। পাশাপাশি দেশের সর্বোত্রই সতর্ক ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চীন থেকে আগত সকল যাত্রীকে বিশেষভাবে স্ক্র্যানিংসহ সামান্য সন্দেহেও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে সাথে সাথে তাকে বিশেষভাবে নির্ধারিত হাসপাতালে আইসোলেটেডে রাখা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক হটলাইন সেবা ও প্রতিদিনের আপডেট তথ্য প্রদানের বিশেষ উদ্যোগতো রয়েছেই। শেষে এটুকুই বলা যায়, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের যতটা সচেতনতা ও করণীয় উদ্যোগ রাখা প্রয়োজন দেশের স্বাস্থ্য খাত ঠিক সেভাবে ততোটাই প্রস্তুত রয়েছে। লেখক : তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আমারসংবাদ/এসটিএমএ