Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রেল কার্গোতে পণ্য আমদানি

জুন ১০, ২০২০, ০৩:৩৬ এএম


রেল কার্গোতে পণ্য আমদানি

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পণ্য আমদানিতে স্থল বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর এতদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছিল।

কিন্তু করোনা সংকটের এই মহাক্রান্তিকালে অবরুদ্ধতার কঠিন বেড়াজালে আটকে পড়ে বিশ্ব বাণিজ্য।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর স্থলবন্দরও পড়ে হুমকির মুখে। তেমনই এক অচলাবস্থার চিত্র উঠে এসেছে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর হিসেবে বেনাপোলের অবস্থান।

সেখানে চাঁদা আদায়ের মতো অনৈতিক কার্যক্রমও চলে অবাধে। করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণে এই বৃহৎ স্থলবন্দরটি টানা দুই মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে একেবারে অবরোধের কব্জায়।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বন্দরটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম এখনও সচল অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। সেটা যতটা না করোনার দুর্যোগ তার চেয়েও বেশি স্থানীয় পেশীশক্তির প্রচণ্ড প্রতাপ।

বিশেষ করে পেট্রপোলের সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার ৫ হাজার ট্রাক। ভারত থেকে রপ্তানিমুখী এসব ট্রাক আটক করা হয় মূলত এক বিশাল অঙ্কের চাঁদা আদায়ের হীন স্বার্থে। সঙ্গত কারণে পুরো স্থলবন্দরটি চরম অচলায়তনের শিকার।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপর। কারণ গত আড়াই মাসে বাংলাদেশ সরকার বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। বাণিজ্য অর্থনীতির চাকা স্থবিরতার আবর্তে পড়লে ওপারে আটকা পড়ে যায় বহু পণ্যবাহী ট্রাক।

করোনাভাইরাসের দুর্বিপাকে সীমান্ত বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয় সেই মার্চ মাস থেকে। ঊর্ধ্বতন দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনায় তার সমাধান দেয়া হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে সে কার্যক্রম এখনও শুরু করা যায়নি।

কলকাতা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই পথেই পণ্য আমদানি-রফতানিতে আগ্রহ দেখায়। মার্চ মাস থেকে বন্ধ হওয়া সীমান্ত বাণিজ্য সীমিত আকারে খোলার নির্দেশনা আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে।

জনশূন্য অবস্থায় সীমান্ত পথে পণ্য পারাপারের পরামর্শ দেয়া হয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে। তেমন ব্যবস্থাপনায় ৩০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা হয় নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। এরইমধ্যে বিপত্তিও দেখা দেয়।

ট্রাক শ্রমিক ও স্থানীয় জনগণের আপত্তির মুখে ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করা বন্ধ হয়ে যায়। অজুহাত খাড়া করা হয় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে বলে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের নির্দেশক্রমে রফতানিমুখী ট্রাকগুলো আটকে দেয়া হয়।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ভারতের পেট্রপোলের কিছু দূরে ক্ষমতাসীন এক সিন্ডিকেট এই আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

তাদের নজরদারি এড়িয়ে সীমান্ত বাণিজ্য সচল রাখা প্রায় অসম্ভব। ফলে বাংলাদেশের আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।

সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কারিগরি কমিটি গঠন করে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো খালাস করার কিছু পরামর্শ উপস্থাপন করেন। প্রথম বেনাপোল-পেট্রপোল রুটে সাইড ডোর বিশিষ্ট কন্টেনার ট্রেন চালু করার অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটি।

এছাড়া পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যাপারটি এনবিআরের নজরে আসাও অত্যন্ত জরুরি। করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাও বাঞ্ছনীয়।

রেল কার্গোতে দুু’দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হলে ব্যয়সাশ্রয়সহ ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে। থাকবে না চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য।

আমারসংবাদ/এআই