Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ফেসবুকে অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

জুন ২৩, ২০২০, ০৯:৫৯ পিএম


ফেসবুকে অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের আদৌ কোনও সুচিকিৎসা নেই। এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনও ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিরাময় করে তুলতে। কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত ওষুধ কিছু কাজ করলেও ব্যর্থ হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে।

তবে দুঃখজনক হলো, এমনিতে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে করোনার নিরাময় প্রায় অসম্ভব হলেও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে করোনা নিরাময়ের আশ্চর্য সব চিকিৎসা এমনকি প্রেসক্রিপশন। কিছু মানুষ তা বিশ্বাসও করছে। হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সে সব চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহে।

এমনকি এর জন্য অনেক টাকাপয়সা খরচ করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। প্রচলিত এলোপ্যাথিক ওষুধের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি-আয়ুর্বেদ, ভেষজ এমনকি টোটকা চিকিৎসাও আছে।

কেউ এমনও বলছেন, প্রতিদিন রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকলে করোনা হবে না। কেউ বলছেন থানকুনিপাতা খেতে। আবার কেউবা লেবু। কেউ বলছেন, হোমিও আর্সেনিক এ্যালবাম খেলে করোনা হয় না।

কেউবা বলছেন, উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে করোনাভাইরাস বাঁচতে পারে না। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে ম্যালেরিয়ার প্রচলিত ওষুধ, এমনকি স্টেরয়েড খাওয়ার কথাও বলেছেন অনেকেই।

এসবের কোনটাই কিন্তু প্রমাণিত নয় বৈজ্ঞানিকভাবে; করোনা নিরাময়ের চিকিৎসা তো নয়ই। অথচ কিছু মানুষ খামোখাই ঘুরছে এসবের পেছনে এবং সংক্রমিতও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অন্যদিকে গাঁটের পয়সা খরচ হচ্ছে। ডাক্তাররা এসব অপচিকিৎসাসহ ভুয়া প্রেসক্রিপশন, ওষুধ ও টোটকা চিকিৎসা নেয়ার বিরুদ্ধে বার বার সতর্ক ও সাবধান বাণী উচ্চারণ করছেন। কিন্তু তাতেও ফেসবুকে ভুয়া ওষুধ ও প্রেসক্রিপশনের দৌরাত্ম্য কিন্তু থেমে নেই। এর বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তথা যুদ্ধ করার জন্য বিশ্বের কোনও দেশই প্রস্তুত ছিল না। এমনকি করোনার আঁঁতুড়ঘর বলে খ্যাত চীনের হুবেই প্রদেশের উহানও নয়।

সুতরাং করোনা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। তবে বিশ্ববাসী এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ বা প্রতিরক্ষা কোনটাই গড়ে তুলতে পারেনি যথাসময়ে। কেননা, করোনা ভাইরাস বা জীবাণু যা ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র পাল্টে আক্রমণ করে মানুষকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকদূর অগ্রসর হলেও প্রকৃতপক্ষে ভাইরাসের এই বিচিত্র চরিত্রের জন্য অদ্যাবধি কার্যকর কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি।

যেমন ফ্লু, প্রচলিত অর্থে ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনও প্রতিষেধক নেই। অনুরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায় মার্স, সার্স, ডেঙ্গু, জিকা ভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, নিপাহ ভাইরাস, বার্ডফ্লু ইত্যাদির ক্ষেত্রেও। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। করোনার সংক্রমণে মৃত্যুহার দিন দিন বাড়ছেই।

এই মুহূর্তের খবর হলো, বিশ্বের কয়েকটি দেশ অন্তত ২০টির বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে মানবদেহে এর সফল প্রয়োগও হয়েছে বলে খবর আছে।

তবে তা বাজারে আসতে এখনও অনেক দেরি। ততদিন পর্যন্ত বসবাস করতে হবে করোনাকে নিয়েই। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক।

নিয়মিত হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহারসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা নীতি সর্বদাই মেনে চলতে হবে ঘরে ও বাইরে সর্বত্র। জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন ও পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে না বেরোনোই ভাল।

ফেসবুকের ভুয়া প্রেসক্রিপশন, ওষুধ ও টোটকা চিকিৎসার বিরুদ্ধে জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও দুর্ভোগে ফেলে দেয়া এসব অপচিকিৎসা বন্ধে প্রশাসনকেও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আমারসংবাদ/এসটিএম