Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

যে কারণে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে পিছু হটবে করোনা

অ্যাডভোকেট রোকোনুজ্জামান খান

জুলাই ৫, ২০২০, ০৯:৫৮ এএম


যে কারণে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে পিছু হটবে করোনা

ইউরোপ আমেরিকাসহ গোটা বিশ্ব যখন কোভিড- ১৯ নামক ভাইরাসে বিপর্যস্ত ও আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার যেখানে গগণচুম্বী আকার ধারণ করেছে সেখানে সাউথ এশিয়ার ৪৮টি দেশ তথা সার্কভুক্ত আটটি দেশ এবং বাংলাদেশে অবিশ্বাস্যভাবে মৃত্যুর হার কম হওয়ায় বিশ্ব ব্যাংক হতবাক হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোরাম নামের ওই সংস্থাটি এই রিপোর্ট প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়- অতি ঘনবসতি দেশ হওয়া সত্ত্বেও গোটা দক্ষিণ এশিয়া এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাস তুলনামূলকভাবে অনেকটাই মন্থর। এ নিয়ে রীতিমতো গবেষণার দাবি রাখে সংস্থাটি। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত বিশদ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টটিতে। সূত্র মতে, বিশ্বের মোট আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১১ শতাংশ এই আটাটি সার্কভুক্ত দেশে। জনঘনত্ব যেখানে অনেক বেশি। পৃথিবীর মাত্র তিন শতাংশ ভূখ-জুড়ে থাকা এই দেশগুলোতে বসবাস করে মোট ২১ শতাংশ মানুষ। তা সত্ত্বেও মৃত্যুর হার সব চেয়ে কম, অর্থাৎ মাত্র ১ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে এই জনপদে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এমনকি চীনেও অতি দ্রুত ছড়িয়েছে এই ভাইরাসটি। কিন্তু সে তুলনায় সার্কভুক্ত দেশে দ্রুত ছড়ায়নি এই করোনা ভাইরাসটি। ১৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে মৃত্যহার অতীব নগণ্য। এমনকি ভুটানে এখন পর্যন্ত একজন মানুষ ও মারা যায়নি এই ভাইরাসে।

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশসহ এ সব দেশের মানুষের লাইফস্টাইল, জাতিতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান, বঙ্গোপসাগর, হিমালয় পর্বত, কর্কটক্রান্তি রেখা, আবহাওয়া, জলবায়ু, বিষুব রেখার ছেদবিন্দু ও মানুষের ব্যাপক কষ্টসহিষ্ণুতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভৃতি বিন্যাস করেই লেখা হয়েছে এ প্রতিবেদন। উল্লেখ করা আবশ্যক, সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ২৬ হাজার ৮০১ জন আর মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪ জন।

১. প্রাকৃতিক কারণ : এশিয়া মহাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ৯৮০ মিটার। সবগুলো মহাদেশের চেয়ে এটিই সর্বোচ্চ গড় উচ্চতা। মালভূমি ও পর্বতময় এলাকাগুলো সাধারণত দক্ষিণ পশ্চিম থেকে উত্তর পশ্চিম বরাবর বিস্তৃত। তিব্বত মালভূমি ও পৃথিবীর শিখর সম্বৃদ্ধ হিমালয় পর্বতমালাই এর পরিণতি। আধুনিক মানুষ প্রায় দুই লাখ বছর আগে আফ্রিকার বতসোয়ানা থেকে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়া মহাদেশে আগমনের পর তাদের প্রাত্যহিক জীবন পরম সুখের ছিলো না। তাদের জীবন ধারনের জন্য পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, বন-জঙ্গল, সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝা, সাইক্লোন-টাইফুন, বন্যা-প্লাবন এবং বন্য জীবজন্তুদের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়েছে। ফলে তাদের দৈহিক শত্তি, কায়িক পরিশ্রম ও মানুষিক মনোবল এবং শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যে সকল মহামারির প্রাদুর্ভাব হয়েছে যেমনÑ প্লেগ, কলেরা, স্পেনিশ ফ্লু, গুটিবসন্ত প্রভৃতি মারাÍক মহামারিগুলো এশিয়ায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশ এবং এশিয়ার মানুষের øায়ুতন্ত্র, কার্ডিওভাসকুলার, সার্কোলেটরি, ডাইজেস্টিং, ব্যাডক্রিল, ইমুউনিটি, ইন্টগোমেটরি, মোমফোকোলিটাল, প্রজনন এবং শ্বাসতন্ত্র প্রকটভাবে শক্তিশালী হওয়ার কারণে এখানে তেমন সুবিধা করতে পারছে না ভাইরাসটি।

২. জাতিতত্ত্ব : বাংলাদেশে তথা সার্কভুক্ত দেশগুলোর বসবাসরত জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যতা বিদ্যমান থাকলেও এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সাংস্কৃতিক সামাজিক এবং কৃষিভিত্তিক জীবন যাপনের ধরণ প্রায় একই। এ অঞ্চলের অধিবাসীরা মূলত কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল এবং ব্যাপক কষ্টসহিষ্ণু হওয়ায় এখানকার জনসাধারণের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সর্বশেষে খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০০ হাজার বছর আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে আগমনের পর এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যের সন্ধানে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে প্রকৃতিগতভাবেই তাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। এ কারণে করোনা ভাইরাস এই অঞ্চলে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না মর্মে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

৩. জলবায়ু : বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং স্বতত্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বিশাল আকারের আয়তন অক্ষাংশের ব্যবধান এবং ভূপ্রকৃতির অবস্থানের ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রে তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে মধ্য এশিয়ার গড় তাপমাত্রা গড়ে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণ এশিয়া ২৭ ডিগ্রি, উত্তর এশিয়ায় ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকলেও উত্তর পশ্চিম ভারত এবং আরব উপদ্বীপে কখনো কখনো ৫৫ থেকে ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় উন্নীত হয়। এখানকার এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থান করায় এখানে গ্রীষ্মকালে ব্যাপক উষ্ণ এবং শীতকালে ব্যাপক ঠা-া হওয়ায় ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াদের অধিকাংশই স্বল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়। অতি উষ্ণতা এবং অতি ঠা-ায় ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তার ওপর থাকে বাতাসের চরম আদ্রতা। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে বাতাসের আদ্রতা কোনো কোনো সময় এবসুলেট হিউমিডিটি অর্থাৎ ৮৫-৯০ শতাংশের উপরে চলে যাওয়ার ফলে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়। ফলে কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি এখানে বড় ধরনের মহামারির আকার ধারণ করতে পারবে না।

৪. কর্কটক্রান্তি রেখা ও ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদবিন্দু : কর্কটক্রান্তি রেখা পৃথিবীর মানচিত্রে অংকিত পাঁচটি অক্ষাংশের একটি। এটি বিষুবরেখা থেকে উত্তরে অবস্থিত এবং ২৩ ডিগ্রি ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড অক্ষাংশ বরাবর একটি কল্পিত রেখা। পৃথিবীর অক্ষতলের উপর লম্বভাবে অবস্থানের কারণে এটি ঈষৎ হেলে থাকে। বছরের অর্ধেক সময় উত্তর মেরু সূর্যের দিকে হেলে থাকে। কক্ষতলের ওপর লম্বের থেকে আহ্নিক অক্ষের এই হেলে থাকা অর্থাৎ অবনতি কোনের পরিমাণ এই ২৩ ডিগ্রি ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড। তাই কর্কট সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ সূর্যের উত্তরায়নের দিন সূর্য যে অক্ষাংশ রেখায় লম্বভাবে আলোকপাত করে সেই ২০ ডিগ্রি ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড অক্ষাংশ রেখাই হলো কর্কটক্রান্তি রেখা। সূর্য পৃথিবীর এই এলাকায় সরাসরি আলোকপাত করে ২১ জুন। এই দিন হচ্ছে বছরের সবচেয়ে বড় দিন। অর্থাৎ দিন হচ্ছে ১৪ ঘণ্টা আর রাত হচ্ছে ১০ ঘণ্ট। সূর্য ওই দিন সরাসরি পৃথিবীর এই অক্ষাংশ রেখা এলাকায় আলোক প্রক্ষেপণের কারণে সূর্য থেকে আলোকরশ্মির সাথে হাইড্রোজেন হিলিয়াম কার্বন এবং সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি অতি ক্ষিপ্র গতিতে পৃথিবীর ওই অঞ্চলে আছড়ে পরার কারণে অধিকাংশ পরজীবী ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার মৃত্যু ঘটে। এখন কথা হচ্ছে, এই কর্কটক্রান্তি রেখার অবস্থান পৃথিবীর কোথায় অবস্থিত? কর্কটক্রান্তি রেখা বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের ওপর দিয়ে এবং বেশির ভাগই এশিয়ার দেশের উপর দিয়ে বহমান। উপরন্তু কর্কটক্রান্তি রেখা এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদ বিন্দুটি পড়েছে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট পদার্থবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, পৃথিবীতে তিনটি পূর্ব-পশ্চিম বিস্তৃত রেখা আছে। সেগুলো হলোÑ কর্কটক্রান্তি রেখা, মকরক্রান্তি রেখা আর বিষুবরেখা। ঠিক অনুরূপ আরো চারটি উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত শূন্য ডিগ্রি, ৯০ ডিগ্রি, ১৮০ ডিগ্রি এবং ২৭০ ডিগ্রি রেখা আছে। এই রেখাগুলো পৃথিবীর মোট ১২টি পয়েন্টে ছেদ করেছে। ১২টি ছেদ বিন্দুর ১০টি পরেছে সাগরে এবং একটি পরেছে সাহারা মরুভূমিতে যেখানে কোনো লোক যেতে পারে না। আরেকটি পড়েছে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায়। ২১ জুন রেখাগুলো পরস্পরকে ছেদ করে। ২১ জুন দুপুর ১২টায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার ওই ছেদ বিন্দুতে যদি কেউ দাঁড়ায় তা হলে তার কোনো ছায়া পড়বে না। কারণ ওইদিন সূর্য সরাসরি পৃথিবীর ওই অক্ষাংশ অঞ্চলে আলোকরশ্মি প্রক্ষেপণ করে। এই কারণে সূর্য থেকে নিঃসৃত হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, কার্বন এবং অতি বেগুনি রশ্মি প্রভৃতি তেজস্ক্রীয় পদার্থ পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার কারণে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন অণুজীবীদের অধিকাংশের মৃত্যু হয়ে উঠে অনিবার্য। ফলে বাংলাদেশে ২১ জুন থেকে আরো এক চন্দ্রমাস অর্থাৎ ২৮ দিন পর্যন্ত সূর্যের অনুরূপ তাপ প্রয়োগ কর্কটক্রান্তি রেখা অঞ্চলে অব্যাহত থাকে। ফলে এই সময়ের মধ্যে বর্তমান বিশ্বে আক্রান্ত করোনা নামক ভাইরাসটি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়বে মর্মে কোনো কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করছেন।

৫. বাঙালিদের ইমুউনিটি ক্ষমতা : নিরাদ, কিষাদ, আলপাইন, ককেশীয়, মঙ্গোলীয়, ইউরিপয়েড, নিগ্রোয়েড, দ্রাবিড় অদ্রাবিড়, আর্য-অনার্য প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর রক্তের কৌমজ স্রোতধারায় স্বজাতি আর বিজাতীর দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও বিরহে-মিলনে বঙ্গ জনপদে যে জাতি বাস করে তারাই আজ আমরা এই বাঙালি জাতি। মহাভারতের ঐতেরীয় বালকা- অধ্যায়ে প্রথম বঙ্গ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।

ব্যাসদেব কর্তৃক রচিত মহাভারত প্রায় পাঁচ হাজার হাজার বছর আগে রচিত হয়। আইন-ই আকবর-ই গ্রন্থের রচয়িতা ঐতিহাসিক আবুল ফজলের মতে, বঙদেশের জনগণদের ‘বাং’ বলা হতো। এখানকার অধিবাসীরা প্রাকৃতিক বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সামুদ্রিক ঢেউ প্রভৃতির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ২০-৩০ গজ উঁচু আইল নির্মাণ করতো। পরে এই ‘বাং’ শব্দের সাথে আইল প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বাংগাইল বাঙ্গাল হিসাবে পরচিতি পায়। অতঃপর বাঙাল শব্দের সাথে ঈ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বাঙালি নামক জাতির সৃষ্টি। যুগে যুগে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে এই বঙ্গ জনপদের নামের পরিবর্তন হয়েছে। পাল, সেন আমলের বঙ, সুলতানি আমলের শাহী বাঙালা, মুঘল আমলের সুবে বাঙালাহ, ইংরেজ আমলের বেঙল, পাকিস্তান আমলের পূর্বপাকিস্তান। অতঃপর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। সাগর পাড়ের এই দেশটির অধিবাসীদের ভৌগোলিক, আবহাওয়া এবং জলবায়ুগত কারণে প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়েছে কাল-কালান্তরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-ঝঞ্ঝা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা-খরা অতিবৃষ্টি, আইলা, সিডর, সুনামি প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যায় এদের নিত্যসঙ্গী।
১৯৬৮ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক আসেন এ দেশের মানুষের জীবন বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা করতে। তারা বগুড়া জেলার গাবতলি থানার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখতে পান ১০-১২ জন কৃষক ফাঁকা মাঠের মধ্যে একটা গাছের ছায়ায় দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। একটু পরেই গবেষক দল দেখতে পান যে ওই কৃষকরা পাশেই থাকা একটা নোংরা খাল থেকে কলস ভরে সেই নোংরা পানি পান করছেন। গবেষক দল উৎসুক্য হন এবং ওই খালের পানির স্যাম্পল নিয়ে লন্ডন ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে বিস্মিত হন। তারা দেখতে পান ওই পানিতে যে পরিমাণ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু ছিলো যা পান করলে যেকোনো সুস্থ মানুষেরই জীবন বিপন্ন হওয়ার কথা। কেননা, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা যায় যে ওই পানিতে থাকা টিডিএস (total disolved solids)-এর পরিমাণ ছিলো ১১০০ টিডিএস। যা কি-না সাধারণ পানযোগ্য পানিতে টিডিএস থাকে ১০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত। পরে গবেষক দল বাঙালিদের ১১০০ টিডিএস মাত্রার হার্ডওয়াটার পানি পান করে সুস্থ থাকার কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে বাঙালিদের ইমুউনিটি ক্ষমতা শক্তিশালী এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই প্রবল যার ফলে ওই হার্ড ওয়াটারে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু ওই কৃষকদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বাঙালিরা রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে ১২-১৪ ঘণ্টা অবর্ণনীয় কায়িক পরিশ্রম করে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই তাদের শরীরে ইমিউনিটি ক্ষমতা তৈরি হয়। এদেশ মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এবং কৃষিকাজে কায়িক পরিশ্রম প্রধান শর্ত থাকায় বাঙালিদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে প্রবল। ফলে উন্নত বিশ্বকে শাসিয়ে যাওয়া কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি এখানে পাজিত।

৬. হিমালয় পর্বত : প্রায় দুই কোটি বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ধীরে ধীরে ভারত উপমহাদেশের দিকে ভূ-স্তরের প্লেটটি পূর্বদিকে অর্থাৎ এশিয়ার দিকে এগুতে থাকে এবং প্রচ- ধাক্কা খাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, সাগর-মহাসাগরের এবং তা এশিয়ার ভূখ-ের সাথে জোড়া লেগে যায়। তারই ফলে বিশাল হিমালয় পর্বতের পৃথিবীর সর্বোচ্চশৃঙ্গ ২৯,০২৯ ফুট উচ্চতার এই এভারেস্ট। পৃথিবীর বিশাল হিমবাহের গঙ্গোত্রি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা, পদ্মা, জাহ্নবি, ভাগিরথি, তিস্তা, সিন্ধু প্রভৃতি নদীসমূহ হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে সাগরে প্রবাহিত। তা ছাড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা, কেটু পর্বত মালা এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কোনো এক অজানা কারণে হিমালয় কানেক্টেড রাষ্ট্রসমূহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যায়ের ছোবল থেকে মুক্ত থাকে মর্মে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। ইতিহাস বলছে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যে সকল মহামারির প্রাদুর্ভাব হয়েছে কোনো এক অজানা রহস্যম-িত কারণে হিমালয় কানেক্টেড রাষ্ট্রসমূহে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

এবারের কোভিড-১৯ নামক মরণঘাতী ভাইরাসের আক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বিশ্লেষণ করলে অনুরূপ চিত্র ফুটে ওঠে। হিমালয় কানেক্টেড রাষ্ট্রসমূহ হচ্ছেÑ নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, মঙ্গোলিয়া, চীন এবং তৎসন্নিহিত রাষ্ট্রসমূহ। পৃথিবীর বুকে ইতঃপূর্বে ঘটে যাওয়া বৈশ্বিক মহামারি প্লেগ, স্পেনিশ ফ্লু, কলেরা, গুটিবসন্তসহ নানা জাতীয় প্রাণঘাতী ভাইরাসসমূহ হিমালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে পারেনি। এ সব দেশে করোনার প্রভাব যথেষ্ট মন্থর। উল্লেখ করা আবশ্যক, এখন পর্যন্ত ভুটানে একজন লোকও করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেনি।

৭. খাদ্য : এশিয়া তথা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সম্বৃদ্ধ খাবার থাকার কারণে এখানকার মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শাকসবজি, বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমি ফলমূল এবং কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া প্রভৃতি মসলাজাতীয় খাবার বাঙালিদের দৈহিক শক্তিকে আরো বেগবান করেছে। ফলে অন্যদের তুলনায় বাঙালিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। এ কারণে কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি এখানে মারাÍক প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।

৮. আগাম পূর্বাভাস : চীনের হুবেই প্রদেশের উহান সিটিতে যখন প্রথম এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছিল, তখন এই ভাইরাসটির নেচার সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞরা অতটা ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও একেক সময় একেক ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল।

শব্দ চয়নে safe distance শব্দ ব্যবহার না করে কেনই বা physical distance শব্দটি ব্যবহার করলেন social distance -এর কর্মকর্তারা তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। পরে who- একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে এর প্রতিরোধ, প্রতিকার, লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন এবং ট্রিটমেন্ট সম্বন্ধে প্রাত্যহিক বুলেটিন প্রকাশ করে যাচ্ছে। সামাজিক জনসমাগম নিষিদ্ধ, লকডাউন এবং গণসচেনতা সৃষ্টি করা, এই ছোঁয়াচে রোগটির ক্যারেক্টার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া, আক্রান্ত দেশগুলো থেকে চিকিৎসার পদ্ধতি আগাম জ্ঞাত হওয়া এবং তা ওসব দেশে কাজে খাটানোর ফলে সেই সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশসহ সার্কভুক্ত দেশের অধিবাসীরা। ফলে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে ১৮ কোটি অধ্যুষিত এই ঘনবসতির দেশে আক্রান্তের সংখ্য যাই হোক না কেন, মৃত্যুর সংখ্যা চার ডিজিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে মর্মে আশাবাদী স্বাস্থ্য খাতের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

৯. নারী সরকারপ্রধান : কোনো এক অজানা কারণে এবং অজানা জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় নারীশাসিত সরকারপ্রধানগণ নিজ নিজ দেশে করোনা ভাইরাস দমনে এক অনন্য সফলতা অর্জন করেছেন। নারীশাসিত রাষ্ট্রসমূহ হচ্ছেÑ

ক. ফিনল্যান্ড : পৃথিবীর চিরসুখী রাষ্ট্র হচ্ছে ফিনল্যান্ড। এই ফিনল্যান্ডের নারী প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন হচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রী। করোনা ভাইরাস দমনে তিনি অসাধারণ নৈপুণ্যতা দেখাতে সমর্থ হয়েছেন। ফিনল্যান্ডে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজার ১১৭ জন আর মারা গেছেন ৩২৬ জন।

খ. তাইওয়ান : দুই দুইবারের নির্বাচিত তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী সাই ইন ওয়েন তার দেশে করোনা ভাইরাস দমন কাজে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন। তাইওয়ানে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪৩ জন আর মৃত্যু মাত্র সাতজন। অবিশ্বাস্যভাবে করোনা মোকাবিলায় তিনি বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি অর্জন করেন।

গ. ডেনমার্ক : ইতোমধ্যে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন ব্যাপকভাবে করোনা মোকাবিলায় অপ্রতাশিত সফলতা অর্জন করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার দেশ ডেনমার্কে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ১৬ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৫৯৩ জনের।

ঘ. নিউজিল্যান্ড : বিশ্বব্যাপী এই বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে একেক দেশ এক এক ধরনের কৌশল অবলম্বন করে সফলকাম হয়েছে। নিজিল্যন্ডের নারী প্রধানমন্ত্রী জেসিকা আর্ডান তাদের মধ্যে অন্যতম। অবিশ্বাস্য রকম সফলতা দেখা যায় নিউজিল্যান্ডে। এই দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক হাজার ৫০৪ জন আর মৃত্যু মাত্র ২২ জনের।

ঙ. আইসল্যান্ড : আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কেট্রিন ইয়াক বসদাক। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তার অবদান প্রশংসাযোগ্য। আইস ল্যান্ডের এই নারী প্রধানমন্ত্রী ভাইরাস মোকাবিলায় এক বিরল নজির স্থাপন করেছেন। তার দেশে সর্বশেষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মোট এক হাজার ৭২৭ জন আর মারা গেছেন মাত্র আটজন। তার প্রশংসা বিশ্বজুড়ে।

চ. সেইন্ট মার্টিন : ক্যারবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র সেইন্ট মার্টিনের নারী প্রধানমন্ত্রী সিলভেরিয়া জেকবস করোনা ভাইরাস দমনে আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছেন। তার রাষ্ট্রে মোট আক্রান্ত ৭৭ জন আর মৃত্যু হয়েছে মোট ১৫ জনের।

ছ. নরওয়ে : নরওয়ের নারী প্রধানমন্ত্রী এলবা সোলবার্গ ও করোনা পরিস্থিতি দমনে চরম সফলতা অর্জন করেছেন। নরওয়েতে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৪০৪ জন আর মারা গেছেন ২৩৯ জন।

জ. জার্মানি : পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী প্রধানমন্ত্রী জার্মানির চ্যন্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল। তার দেশ জার্মানিতে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে তিনি নিজ হাতে সব কিছু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তুলে নেন এবং করোনা মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যদিও এই ভাইরাসে তার দেশ জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্য অনেক অর্থাৎ এক লাখ ৮৪ হাজার ৩২৪ জন এবং মারা গেছে আট হাজার ৬৪৫ জন। তবুও তার সাফল্যের কথা গবেষণায় উঠে এসেছে।

ঝ. বাংলাদেশ : দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সার্কভুক্ত এবং বিশ্বের সবচেয় ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশে ও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় একটানা তিনবারের নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের কথা আলোচিত হয়েছে সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টে। বিশ্বের নারী সরকারপ্রধান রাষ্ট্রসমূহে বৈশ্বিক মহামারি এই করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চরম সাফল্যের কি গোপন জাদুর কাঠি কাজ করছে এবং কী রহস্যের বেড়াজালে তারা এই সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে। কয়েকটি গবেষণা সংস্থার মতে এই নারী সরকারপ্রধানরা যে কারণে করোনা মোকাবিলায় সফলতা লাভ করতে পেরেছেন তার অন্যতম কারণ হচ্ছেÑ তাদের ধৈর্য, স্থির মানষিকতা, ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণ, রাষ্ট্রের একক সিদ্ধান্ত নিজ হাতে তুলে নেয়া এবং সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জনপ্রশাসন মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এমনকি পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে কাজে খাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়।

করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী এই ভয়াবহ তা-ব যেভাবে বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের আগামী দিনে কী পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে এবং কতদিন নাগাদ এই ভাইরাসের অবস্থান বাংলাদেশে বিরাজ করবে এবং কি পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হবে বা কি পরিমাণ মানুষ মারা যাবে তার সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান দেয়া সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও উপরে উল্লিখিত কারণসমূহের আলোকে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্গানের দ্বায়িত্বশীল কর্মতৎপরতার কারণে কোভিট-১৯ নামক ভাইরাসটি বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সর্ব প্রথম বাংলাদেশে ৮ মার্চ একজন রোগী কোভিড আক্রান্ত হিসাবে শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম একজন রোগী মারা যায়। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার ৮০১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে এক হাজার ৭৮৩ জন। যদিও আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু হার অনেকটাই কম তথাপি ইতোমধ্যে মৃত্যুর তালিকায় আমরা আমাদের অনেক দেশপ্রেমিক এবং কৃতি সন্তানদের হারিয়েছি। বাংলাদেশে এই মহামারিতে দেশের ফ্রন্টলাইনে ডাক্তারসমাজ, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, সিভিল প্রশাসন, আনসার ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তা, দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর ব্যাপক ভূমিকার কারণে করোনা ভাইরাস এখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।

এ ছাড়া সরকারে নানামুখী পদক্ষেপ যেমন সাস্থ্যসেবায় সর্বাধিক গুরত্ব প্রদান, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা, নতুন করোনা হাসপাতাল নির্মাণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যাল, অফিস-আদালত বন্ধ এবং সকল প্রকার জনসমাগম নিষিদ্ধ করার কারণে অনেকটাই নিষ্কৃতি পাওয়া গেছে এই মহামারির হাত থেকে। করোনা ভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার সম্বলিত দেশসমূহের ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই সকল দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্তের দিন থেকে ৯০ দিন থেকে ১২০ দিনের মাথায় পৌঁছেছে এর মরণ ছোবল ক্লাইমেক্স বা চরমপর্যায়। এই রোগ আমাদের দেশে যদিও ১৮ মার্চ প্রথম কোভিড আক্রান্ত একজন রোগী মারা যায়, কিন্তু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয় এপ্রিলের প্রথম দিকে।সেই বিবেচনায় আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে এবং কর্কটক্রান্তি সংক্রান্তীয় দিন বা বড়দিন হচ্ছে ২১ জুন। এর থেকে এক চান্দ্রমাস যোগ করলে দাঁড়ায় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ আর ১২০ দিন হিসাবে গণনা করলে অথবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহ। সুতরাং আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাংলাদেশ থেকে পিছু হটবে কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি মর্মে আমরা বিশ্লেষণে পাই।

লেখক : বিশ্লেষক, কলামিস্ট, আইনজীবী, মাগুরা বার
ইমেইল : advrokonuzzamankhan@gmail.com