হাসান আল বান্না
আগস্ট ৯, ২০২০, ০২:০১ পিএম
বাংলাদেশের ইতিহাসে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে মেজর সিনহা হত্যা৷ বাংলাদেশ শুধু নয় দুনিয়ায় ইতিহাসে এই প্রথম শান্তিকালীন সময়ে কোন রাষ্ট্রে একজন কুখ্যাত ওসির তত্ত্বাবধানে একজন সাধারণ এসআই কর্তৃক নিরপরাধ সেনা অফিসার নিহত হয়েছে। একটি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশেও এমন ঘটনার অস্তিত্ব মিলবে না৷
বিষয়টি নিয়ে সারা বাংলাদেশ ক্ষত-বিক্ষত। গর্বিত সেনাবাহিনীর একজন দক্ষ ও সৎ অফিসার এভাবেই কোন কারণ ছাড়াই নির্মম ক্রসফায়ারে শিকার তা ভাবতেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা প্রশমিত করতে রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হচ্ছে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সেনাবাহিনীর প্রতি আপামর জনসাধারণের রয়েছে হৃদয় নিংড়ানো আবেগ ও ভালোবাসা রয়েছে। তাই কে কি বললো না বললো তা হয়তো দেশের মানুষ কোনভাবেই আমলে নিবে না বরং জাতি প্রত্যক্ষ করবে কতদিনে মেজর সিনহা হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি হবে।
ইতোমধ্যেই সাবেক সেনা অফিসারদের সংস্থা রাওয়া ক্লাব তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে। মহাখালী ডিওএইচএস এ আমার অফিস এবং কিছু সুহৃদ জেনারেলদের সাথে একান্ত ব্যক্তিগত সখ্যতার সূবাদে আমি নিজেও রাওয়া ক্লাবের একজন গেস্ট মেম্বার হয়েছি। রাওয়া ক্লাবের সুইমিং পুলে এক ঝাঁক জেনারেলদের সাথে প্রায়শই সাঁতার কাটি। রাওয়া ক্লাবের লাইব্রেরী আমার প্রিয় পাঠশালা। মেজর সিনহা হত্যা পরবর্তী তাদের প্রতিক্রিয়া জেনে এটুকু অনুধাবন করলাম, এতো সহজেই রাওয়া কর্তৃপক্ষ মেজর সিনহার বিষয়টি বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিবে না। আর এই অভিব্যক্তি শুধুমাত্র রাওয়া সংগঠনের নয় বরং সারা দেশের মানুষের।
এবার আসি সিনহা হত্যার পোস্ট মর্টেমে:
আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো দৃশ্যমান ঘটনাকে বিশ্বাস করি না। দৃশ্যমান ঘটনা যত বাস্তবিকই হোক না কেন? বরং পর্দার আড়ালের ঘটনাই আমার মুখ্য গবেষণার বিষয়। তারই অংশ হিসেবে সুস্পষ্টভাবে প্রিয় দেশবাসীকে বলতে চাই, একজন অল্প বয়সেই অবসর প্রাপ্ত চৌকস সেনা অফিসার মেজর সিনহা কোনো এক ডকুমেন্টারি তৈরিতে কক্সবাজার গেলেন। পথিমধ্যে একজন এসআই পথরুদ্ধ করলো। আর মাদক সন্দেহে সেই এসআই সংশ্লিষ্ট থানার ওসির নির্দেশে গুলি করতে গেলেন। মানুষ বিষয়টিকে এতো সহজভাবে দেখেন না। মানুষ যাই হোক কিন্তু আমি এই সারলিক অংকে বিশ্বাসী নই। পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করলে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, এটা সম্পূর্ণভাবে পূর্ব পরিকল্পিত। কোন একটি মহল বাংলাদেশকে নিয়ে কোন ভিন্ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে অত্যন্ত সুচারুরূপে৷ কারা ঘটাতে পারে তা শেষাংশে বলবো। তার আগে কিছু প্রশ্নের অবতারণা করলে বিষয়টি উপসংহারে পৌঁছাতে সহযোগিতা করবে।
প্রশ্ন সমূহ:
১. সেনাবাহিনীর একজন সফল কমান্ডো অফিসার যার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাজের দক্ষতা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল তার। সুতরাং তার উজ্বল ক্যারিয়ার মেজর সিনহা এতো তাড়াতাড়ি অবসরে গিয়েছেন কোন দুঃখে?
২. মেজর সিনহা যে কাজে গিয়েছিলেন সেটাও কি প্রি প্লানিং এ তাকে সেই কাজে ইনভলভ করা হয়েছিল?
৪. কোন কারণ নেই একজন এসআই ধাপা ধাপ গুলি চালিয়ে দিলো? নাকি এটা পূর্ব পরিকল্পিত?
৫. মেজর সিনহার মৃত্যু কি অপরিহার্য ছিল? মেজর সিনহা বেঁচে থাকলে কারো হাঁটে হাঁড়ি ভাঙ্গার উপক্রম? যেমনটা সাগর রুনি মৃত্যু হয়তবা কারো জন্য খুবই অপরিহার্য ছিল?
৬. মেজর সিনহা কি ভিনদেশী কোন আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীর রোষানলের শিকার?
৭. মেজর সিনহার মৃত্যু কেন টেকনাফে? নাকি টেকনাফ থানা ও টেকনাফ ওসি হচ্ছে দেশ বিরোধী কোন গোষ্ঠীর নিরাপদ অভয়ারণ্যে?
উপরোক্ত কেসস্ট্যাডি করলে এবং মেজর সিনহার আর্লি রিটায়ার্ড, কথিত ডকুমেন্টারি কাজে কক্সবাজার গমন সাথে সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সহ সবকিছু আমলে নিয়ে তদন্ত করা এবং খুনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট এসআই, ওসিকে রিমান্ড শেষ হলে এবং দায়িত্বরত জেলা পুলিশ সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার স্বরূপ উদঘাটন করা সম্ভব।
আমার মনে হয়, দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যা দেশের আভ্যন্তরীণভাবে সৃষ্ট পর্দাল আড়ালে কোন আধিপত্যবাদীর ষড়যন্ত্র। যারা বাংলাদেশকে তাদের চারণভূমিতে পরিণত করতে চায়।
লেখক: কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
আমারসংবাদ/কেএস