Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

নদীভাঙনে বাস্তুহারা তিস্তাপাড়ের মানুষের দিকে দৃষ্টি দিন

আগস্ট ২০, ২০২০, ০৭:১৩ এএম


নদীভাঙনে বাস্তুহারা তিস্তাপাড়ের মানুষের দিকে দৃষ্টি দিন

থেমে থেমে কয়েক দফায় বন্যার পর লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রামে তিস্তাবিধৌত চরাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার পরিবার নদীভাঙনের কারণে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়ে তাদের কেউ আশ্রয় নিয়েছে তিস্তার বাঁধে আবার কেউ স্কুল-কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে।

প্রতি বছর বন্যায় সৃষ্ট এসব সমস্যা ও দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধান চান তিস্তা চরাঞ্চলের অসহায় নিঃস্ব পরিবারের মানুষগুলো। নদীভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিকল্পিত নদীশাসনের দাবি করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আর নদী পাড়ের মানুষরা বলছেন, শুধু বন্যা বা বর্ষা মৌসুমে নয়, সারা বছরই নদী ভাঙন রোধে গুরুত্বারোপ করা উচিত। অন্যদিকে এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভাঙন রক্ষায় বড় প্রকল্প গ্রহণে পরিকল্পনার কথাও ভাবছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তায় পানি কমলেও সব জায়গায় একরকম নয়। কোথাও পানি কমলে আবার অন্য কোথাও বাড়ছে। তিস্তার পানি বাড়া-কমাতেই থেমে নেই। সৃষ্ট এই বন্যার কারনেই অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি, ঠিকানা কেড়ে নিয়েও শান্ত হয়নি খরস্রোতা এই তিস্তা নদী। এখন শুরু হয়েছে নদীভাঙন। বর্তমানে তাই তিস্তা পাড়ের মানুষদের আরেক আতঙ্কের নাম নদীভাঙন।

এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। দিন-রাত তাদের মনের ভেতরে শুধু ভয় কাজ করে— কখন নদী হানা দেয়। অনেক সময় হাজারো চেষ্টা করেও ঘরবাড়ি বাঁচানো সম্ভব হয় না। যাদের একেবারে জায়গা নেই, তাদের কষ্ট তো সীমাহীন। সামপ্রতিক দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যায় লালমনিরহাটে তিস্তা সংলগ্ন চরাঞ্চলে নদীভাঙনে ভিটেবাড়ি হারিয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি হারানোর পাশাপাশি ফসলি জমি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

এদিকে পানি যতই কমছে ততই তীব্র হচ্ছে নদীর ভাঙন। বিলীন হয়েছে বেড়িবাঁধ, সহস্রাধিক মানুষের ঘরবাড়ি-জমি। অথচ তিন বছর আগে থেকে এই সমস্যার জানান দিলেও অস্থায়ী প্রতিরোধের চেষ্টাতেই সীমাবদ্ধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৌড়ঝাঁপ।

লালমনিরহাটে তিস্তার পাড়জুড়ে গ্রাম বিলীনসহ মসজিদ, মাদ্রাসা, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালর্ভাটের অভাবানীয় ক্ষতি হয়েছে। এই এলাকার মানুষজন বলছেন, অবিলম্বে বাঁধ নির্মাণসহ তিস্তা নদী খনন করা না হলে নদী যেদিক পাবে সেদিক প্রবাহিত হবে। ফলে তিস্তা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীরভাঙন থেকে রক্ষায় ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সমস্যা দূরীকরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে।

তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এটি বাস্তবায়নে আরও দেরি হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে গৃহহীন হয়ে পড়ছে লক্ষাধিক পরিবার।

একই সাথে তিস্তার বামতীরে বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে তিস্তা নদীর মূল প্রবাহকে ঘিরে গড়ে ওঠা ডানতীর বাঁধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শহর রক্ষা বাঁধ, বেড়িবাঁধসহ হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো অকার্যকর হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই তিস্তার ভাঙন থেকে ওই এলাকার মানুষদের রক্ষার জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

আমারসংবাদ/এসটি