Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

করোনায় শিক্ষার্থীর অন্ধকার এবং সমাধানকল্প

মোমিন মেহেদী

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০, ০৮:৪৫ পিএম


করোনায় শিক্ষার্থীর অন্ধকার এবং সমাধানকল্প

হ-য-ব-র-ল। এই শব্দটির সাথে পরিচয় অনেক আগে থেকেই। এখন এই করোনাকালে এসে সেই শব্দটির যথাযথ প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একের পর এক কৌতূক টাইপের রাজনৈতিককথা, দুর্নীতি আমাদের যখন নির্মমতার মুখোমুখি করছে; তখন নিজেকেই নিজে শেষ করে দিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

এই নির্মম সিদ্ধান্ত নেয়ার তালিকায় অগ্রসর রয়েছেন শিক্ষকরা। বিশেষ করে কিন্ডার গার্টেনের প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক যখন বেতনহীন-চাকরিহীন নিরন্ন তখন সরকার অনলাইন শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

অনলাইনে শিক্ষার যে প্রক্রিয়াটি গত কয়েক মাসে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। সে চেষ্টায় হিতে বিপরীত ঘটনার সূত্রপাত হচ্ছে। যেখানে প্রতি মাসে হাসপাতালটিতে গড়ে চার হাজার শিশু আসত।

সেখানে গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি শিশু আসছে। যাদের মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের মাইয়োপিয়া সমস্যা রয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা এগিয়ে নিতে মাস চারেক ধরে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের স্কুলগুলো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। সারাদেশে প্রায় ৫০ লাখ শিশু শিক্ষার্থী স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে পাঠগ্রহণ করছে। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

এ অবস্থায় ট্যাব-স্মার্টফোনের মতো খুদে ডিভাইসে ক্লাস করা শিশু শিক্ষার্থীরা মাইয়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টির ঝুঁকিতে পড়বে। এমন ঝুঁকির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ। যা কারোই কাম্য নয়। আর তাই সমাধানের রাস্তা ধরে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে আলোকিত রাখতে-আলোকিত থাকতে।

সাউন্ডবাংলা স্কুল, জাতীয় শিক্ষাধারাসহ শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করছি দীর্ঘদিন ধরে। সেই সুবাদে জানি যে, দেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮ জন। এর মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধেকের কিছু কম। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা না থাকলেও শহরাঞ্চলের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ অনলাইনে ক্লাস করছে।

এ হিসাবে অনলাইনে ক্লাস করা শিশুর সংখ্যা ৫০ লাখের কম নয়।এই ৫০ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ যেন কোনোভাবেই অন্ধকারাচ্ছন্ন না হয়; সে কথা ভেবে এগিয়ে চলতে হবে সবাইকে। কেননা, বিভিন্ন গবেষণা বলছে— অনলাইন ক্লাসে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও স্মার্টফোন চোখের খুব কাছে রেখে ছোট ছোট লেখাগুলো পড়ার কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের চোখে মারাত্মক চাপ পড়ছে।

কেননা অক্ষিগোলকের আকৃতি যখন স্বাভাবিক থাকে, তখন প্রথমেই আলো গিয়ে চোখের মণিতে (কর্নিয়া) পড়ে। সেখান থেকে মণির ভেতরের আরও কালো যে অংশ, সেই নয়নতারা (পিউপিল) ও লেন্স হয়ে আলো অক্ষিপটে (রেটিনা) পৌঁছায়। অক্ষিপটের কোষগুলো উদ্দীপিত হয়ে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠালে তবেই মানুষ দেখতে পায়।

অথচ দীর্ঘ সময় চোখের খুব সামনে রেখে শিশুরা যখন কম্পিউটার, ট্যাব বা মুঠোফোনে অনলাইন ক্লাস করে তখন চোখ বিশ্রাম পায় না। শিশুরা যখন কাছ থেকে এই ডিভাইসগুলো একমনে ব্যবহার করতে থাকে, তখন চোখের মণি এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে। শিশুরা চোখের পাতা ফেলে না। পাতা ফেললে চোখের ভেতরের পানি চোখের মণিকে আর্দ্র করে। পাতা না ফেললে কর্নিয়ার যে পানি, তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আস্তে আস্তে চোখ শুকিয়ে দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতা সৃষ্টি হয়।

চোখের মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এতে মাথাব্যথা, ঝাপসা দেখা ও চোখ পিটপিট করার মতো সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত স্ক্রিন অ্যাক্টিভিটি বড়দের চোখের চেয়ে শিশুদের চোখে অনেক বেশি ক্ষতি করে। কারণ তাদের চোখ এখনো পরিপক্ব হয়ে ওঠেনি। তাই কোমল চোখে স্ক্রিনের আলো পড়লে সেটা সহজেই চোখকে আক্রান্ত করে।

সত্যিকার্থেই দেশকে করোনা পরিস্থিতিতে রক্ষার জন্য পদক্ষেপগুলো গবেষণা এবং পরিকল্পনা করে না নেয়ায় অন্ধকারের হাতছানি শিশু-কিশোরদের চোখে। শৈশবে দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের মূল কারণ তিনটি।

এগুলো হলো- জন্মগত সমস্যা, পুষ্টির অভাব ও খুব কাছ থেকে ছোট জিনিস সময় নিয়ে দেখা। প্রথম দুটির কারণে এমনিতেই দেশে বিপুল্লংখ্যক শিশু ক্ষীণদৃষ্টিতে ভুগছে। বাবা-মায়ের অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে অনেক শিশু দুই-চার বছর বয়স থেকে স্মার্টফোন-ট্যাব ও ল্যাপটপ-কম্পিউটার এবং টেলিভিশনে বিভিন্ন কার্টুন ছবি দেখা কিংবা গেম খেলায় আসক্ত হয়ে চোখের বারোটা বাজাচ্ছে। এর উপর অনলাইন ক্লাস এখন শিশু শিক্ষার্থীদের ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তরণের পথ নির্মাণে নিরন্তর পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি।

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের জন্য-মানুষের জন্য সিদ্ধান্তহীন বিভিন্ন পদক্ষেপের মতো অনলাইন ক্লাসের ধারাবাহিকতায় একথা সত্য যে, প্রতিমাসে হাসপাতালটিতে গড়ে চার হাজার শিশু আসতো। যার মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি মাইয়োপিয়া বা ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা ছিল।

 অথচ গত কয়েক মাস ধরে গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি শিশু চোখের সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে আসছে। যাদের মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের মাইয়োপিয়া সমস্যা রয়েছে। তাদের বেশির ভাগ অভিভাবক জানিয়েছেন, প্রতিদিন অনলাইনে টানা দেড়-দুই ঘণ্টা ক্লাস এবং পরবর্তীতে আরও দীর্ঘ সময় ব্যয় করে মোবাইল ফোন কিংবা ট্যাব থেকে পড়া তোলার কারণে তাদের সন্তানরা চোখের সমস্যায় পড়ছে।

বেশ কিছু বাবা-মা জানিয়েছেন, তাদের শিশু সন্তানদের আগে থেকেই মোবাইল ফোন ও ট্যাবে গেম খেলা এবং কার্টুন ছবি দেখার আসক্তি ছিল। এ কারণে তারা আগে থেকেই চোখ পিটপিট করতো। অনলাইনে ক্লাস শুরু করার পর তারা এখন চোখে ঝাপসা দেখছে। অনেকে খালি চোখে মোবাইল স্ক্রিনের ছোট লেখা পড়তেও পারছে না। এ অবস্থায় তারা বাধ্য হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন।

একজন নিবেদিত শিক্ষা-সংস্কৃতিজন হিসেবে-অভিভাবক হিসেবে বলতে পারি- অধিকাংশ অভিভাবকদের শিশু সন্তানদের মোবাইল ফোনে গেম খেলা ও ভিডিও দেখার আসক্তি থাকায় তারা এতদিন এসব ডিভাইস তাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তবে অনলাইনে ক্লাস শুরু হওয়ার পর বাধ্য হয়ে তা তাদের হাতে তুলে দিতে হয়েছে।

এ সুযোগে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি গোপনে মোবাইল ফোনে গেম খেলছে ও কার্টুনসহ বিভিন্ন ভিডিও দেখছে। সাথে সাথে সময়-অসময়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়ায় শিশু শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ঘুমাতে না পারার কারণেও তাদের চোখে বাড়তি চাপ পড়ছে।

গণমাধ্যমকে অবশ্য সাউথ পয়েন্ট স্কুলের মালিবাগ শাখার ইংলিশ ভার্সনের নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একাধিক অভিভাবক বলেছেন, পেশাগত কারণে তাদের অনেক রাতে ঘুমাতে যেতে হয়। সে কারণে তাদের সকালে ঘুম থেকে উঠতে কিছুটা দেরি হয়।

 এ জন্য তারা তাদের শিশু সন্তানদের মর্নিং শিফটে ভর্তি না করে ডে শিফটে ভর্তি করিয়েছেন। অথচ স্কুল শিক্ষকরা এখন সকাল সাড়ে ৮টায় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন।

এতে তাদের শিশু সন্তানদের আধাঘুম চোখ নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে কোনো লাভ না হওয়ায় কেউ কেউ এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও ভাবছেন।

বাংলাদেশকে করোনা পরিস্থিতিতে রক্ষার কথা না ভেবে একটা শ্রেণি দুর্নীতি করেই যাচ্ছে। সেই শ্রেণিটি থেমে নেই শিক্ষা নিয়ে দুর্নীতি থেকেও; বরং এতটাই দুর্নীতিবাজ যে যেমন তেমন করে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার ব্যবস্থা করেছে।

কিন্তু একবারের জন্যও ভাবেনি- ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারের চেয়ে স্মার্টফোনে অনলাইন ক্লাস করা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের জানা প্রয়োজন ছিলো- স্ক্রিন বেশ ছোট। যে কারণে চোখের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে। এ ছাড়া স্মার্টফোনের তীব্র আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর। যদিও দামি ফোনগুলোতে তা অটো অ্যাডজাস্ট হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

অথচ আমাদের দেশে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার নেই। তারা বেশির ভাগ কমদামে কেনা নিম্নমানের স্মার্টফোনে অনলাইন ক্লাস করছে। যা তাদের চোখের সমস্যার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

তবে শিশুর চোখের বিষয়টি বিবেচনায় রাখাও জরুরি। কেননা অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে শিশুর কোমল চোখে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিলে কৈশোর পেরোনোর আগেই তাদের শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটতে পারে। কেননা বিজ্ঞানীদের গবেষণা তথ্যানুযায়ী, ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যাগ্রস্ত শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতি পাঁচজনে একজনের দৃষ্টিক্ষমতা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা শেষ পর্যন্ত অন্ধ হয়ে যায়।

শিশুদের যে সময় দূরের দৃষ্টি তৈরি হওয়ার কথা, সে সময়ই তারা মোবাইল ফোনের কিংবা ট্যাবের স্ক্রিনে দৃষ্টিকে আটকে রাখছে। যে কারণে দূরের দৃষ্টি প্রসারিত হতে পারছে না। বংশগত কারণেও ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যা হতে পারে, তবে স্ক্রিন অ্যাক্টিভিটি, রোদে খেলাধুলা না করা শিশুদের মাইয়োপিয়ার অন্যতম কারণ।

করোনা পরিস্থিতির আগে শহরাঞ্চলের শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণতার হার ছিল ২০ শতাংশ এবং এটা গ্রামের শিশুদের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ। অথচ অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার পর তা আরও প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও গ্রামাঞ্চলে এ হার অনেকটা আগের জায়গাতেই রয়েছে।

এতে শুধু অনলাইন অ্যাক্টিভিটি বাড়ার কারণেই শহরে ক্ষীণদৃষ্টিতা বেড়েছে তা বলা যাবে না। তবে এর সঙ্গে ক্ষীণদৃষ্টিতার যে বড় সম্পর্ক রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই- যোগ করেন ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ। এমনিতেই শহরের শিশুদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চশমার পাওয়ারও বাড়ানো লাগছে এবং চশমার প্রয়োজনীয়তা বেশি দেখা দিচ্ছে।

বিশেষ করে যেসব শিশু বেশি বই পড়ে, টিভি দেখে, স্মার্টফোন, ট্যাব, কম্পিউটার ইত্যাদির সঙ্গে বেশি সময় কাটায়, তাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হবার আশঙ্কা বেশি। গ্রামের শিশুরা এসব পায় না বলে তাদের মধ্যে এসব থেকে সৃষ্ট সমস্যা অনেক কম। করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় তারা এ সমস্যা থেকে দূরে রয়েছে। আমার দেখা শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একটি আমার বন্ধুর সন্তানের জীবনে ঘটতে দেখেছি।

তার ৮ বছরের সন্তান গুলশানের একটি খ্যাতনামা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড থ্রির শিক্ষার্থী। করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৭ মার্চ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মাস দেড়েক পর থেকে শিক্ষকরা অনলাইন অ্যাপ ‘জুমে’ ক্লাস নিচ্ছেন। প্রথমদিকে তিনি কর্মক্ষেত্রে না যাওয়ায় তার ব্যবহূত স্মার্টফোনেই ছেলে ক্লাস করত।

তবে সমপ্রতি তার অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সকালেই তাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে একটি চাইনিজ স্মার্টফোন কিনে দেন। মাসখানেক আগে তিনি লক্ষ করেন, তার শিশু সন্তান অনলাইনে ক্লাস করার সময় চোখ পিটপিট করছে। ক্লাস করার পর প্রায়ই মাথাব্যথায় ভুগছে। পরে তাকে আই হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন, সে ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যায় ভুগছে।

চিকিৎসক তাকে চশমা পরার পাশাপাশি টানা আধাঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই ধরনের সমস্যার কথা জানিয়ে রাজধানীর আরেকটি স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমার সাথে আলাপকালে বলেছেন- আমার মেয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে মাইনাস টু পাওয়ার লেন্সের চশমা পরছে।

চলতি বছর ক্লাস থ্রিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আমি মেয়েকে চোখের ডাক্তার দেখিয়েছি। তখনো তার চশমার পাওয়ারের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ওই চশমা পরে এতদিন সে চোখে সবকিছুই স্বাভাবিক দেখছিল। অথচ গত মাস চারেক ধরে অনলাইনে টানা এক-দেড় ঘণ্টা ক্লাস করার পর মোবাইল ফোনের স্ক্রিন ঝাপসা দেখছে।

পরে তাকে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তার চশমার লেন্সের পাওয়ার আরও এক বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমন নিদারুণ সমস্যার হাত থেকে মুক্তির জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোরভাবে স্যানিটাইজার ও মাস্কের আওতায় রাখতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি কামনা করছি। চাই সামাধান দেশ ও মানুষের মঙ্গলময় আগামীর প্রত্যয়ে...

লেখক : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি

আমারসংবাদ/এআই