Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

দৃশ্যপটে বাংলাদেশ পুলিশ ও জনপ্রত্যাশা

এ.কে.এম শামছুল হক রেনু

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০, ০৮:০২ পিএম


দৃশ্যপটে বাংলাদেশ পুলিশ ও জনপ্রত্যাশা

বাংলাদেশ পুলিশ আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার। তবে পুলিশের কিছু লোকের অন্যায় অসদাচারণ, অপরিণামদর্শিতা ও ঘুষ দুর্নীতির কারণে পুলিশের সুনাম, গর্ব ও অহঙ্কার যথেষ্ট সমালোচিত। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ একেবারেই পরাহত।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে বর্বর হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত অবস্থায় ট্যাংকের গুলি চালিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ ও তাদের স্ত্রী, পুত্র, পরিজনকে নির্মম, নিষ্ঠুর, দানবীয় ও নৃশংসভাবে হত্যা করে থাকে।

যারা লাশের স্তূপে মৃত্যুর জ্বালায় কাতরাতে ছিলো তাদেরও থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি ও বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করা হয়। তারপরও ডিউটিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মাটি আজও পুলিশ ও তাদের পরিবার পরিজনদের রক্তে আচ্ছাদিত। যে দুঃখ ও বেদনার শেষ নেই। এমনিভাবে ইপিআর (বিজিবি), সেনাবাহিনী, আনসার ও অন্যদের অবদানকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

ঘুষ দুর্নীতির সাথে পুলিশকে জড়ানো হলেও আজ বেসামাল ঘুষ দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে পুলিশের দুর্নামকে ম্লান করে অন্যদিকে ধাবিত হচ্ছে। যেখানে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অন্য বিভাগ ও সংস্থার শত শত, হাজার হাজার কোটি টাকার সীমাহীন ঘুষ, দুর্নীতি চোখে পড়ে থাকে। যে উদাহরণের শেষ নেই।

পুলিশ বিভাগসহ অন্য পর্ষদে নিষ্ঠাবান, আদর্শবান, ন্যায়পরায়ণ, ঘুষ দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব হিসেবে অগনিত ব্যক্তি রয়েছে। তাদের আচরণ দেখে এমনিতেই তাদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধার কমতি থাকে না। কিন্তু কিছু লোক চেয়ারে বসে নিজেকে রাজা, মহারাজা মনে করে থাকে। এদের কোনো আদর্শ নেই, দর্শন নেই। জনগণের ঘামের অর্থে তাদের বেতন আসে তাহাও ভুলে যায়। ওরা মানুষকে সম্মান দিতে জানে না।


জানা যায়, অনেক সময় অনেকেরই পিএস, এপিএস, পিএ, স্টাফ অফিসারের দায়িত্বে থাকা কিছু ব্যক্তি এমন অশোভন ও অমার্জনীয় ব্যবহার করে থাকে যা কল্পনাতীত। যা অনেক সময় অনেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে না জানিয়ে নিজেকে সংবরণ করে থাকে। অথচ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে উদাসীন ও চোখ, কান খোলা না রাখার কারণে তাদের সুনাম ও ভাবমর্যাদাকে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে যা ভাবতে গিয়েও অবাক বিষ্ময় ও হিমশিম খেতে হয়।

কিছুদিন আগে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি দুঃখ করে বলেছেন, দেশের একজন নামিদামি স্বনামধন্য জনবান্ধব কর্মকর্তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের অভিপ্রায়ে তারই স্টাফ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে সদুত্তর মেলেনি। বরং মনে হয়েছে, এই অধীনস্থ স্টাফ অফিসার অনেক ঊর্ধ্বে।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দেশে সামরিক শাসন জারির আগে সিরডাপ মিলনায়তনে এক সামাজিক অনুষ্ঠানে বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান ও সাংবাদিক আতাউস সামাদ বলেছিলেন দেশের ভালো মানুষগুলো আজ বড় অসহায়। আর কিছু চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও খারাপ লোক মাথার উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে।  

কিছুদিন হয় পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানার সাথে কথা বলেছিলাম। তাতে তিনি যে সুন্দর ব্যবহার করেছিলেন তাতে সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত। যদিও এআইজি মিডিয়াকে আগে আমি চিনি না, জানিও না। প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে তার সুমধুর আচরণ পারফরমেন্স ফুটে উঠেছে। তার মাঝে অহঙ্কারি ও দাম্ভিকতার ছায়া স্পর্শ করেনি।

যা তাকে মহান করেছে। আর যারা মানুষের সাথে যথাযথ আচরণ না করে বেবিচকের ন্যায় কথা বলে ওরা শুধু নিজেকেই ডুবাচ্ছে না স্বনামধন্য, জনবান্ধব ও প্রশংসিত কর্মকর্তাকেও ডুবাতে বাকি রাখেনি।

কিছুদিন আগে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের এনডিসি নাজিম উদ্দিন রাত সাড়ে ১২টায় মোবাইল কোর্টের নামে একজন সাংবাদিককে ঘুম থেকে তুলে আনেন। সঙ্গীয় লোক নিয়ে পেটায় এবং ক্রসফায়ারে দেয়ার কথা বলে। জামালপুরের সাবেক ডিসি তার বাসায় অফিস কক্ষের পাশে নান্দনিক ও সুশোভিত কক্ষ করে অফিসের মহিলা সহকারীর সাথে যে বেলাল্লাপনার ঘটনা ঘটিয়েছিল তা কারো অজানা নয়।

তারও আগে বরখাস্তকৃত একজন পুলিশ কর্মকর্তার ঘটনা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হিসেবে বিবেচিত। নিবন্ধের প্রারম্ভেই বলছিলাম, পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির অপবাদ এখন অনেকাংশে ম্লান হতে চলেছে। কারণ গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংবাদপত্রের শিরোনামে প্রকাশিত শিরোনাম ছিলো, করোনায় মাস্ক ও থার্মোমিটার নিয়ে দুর্নীতি, ৯ কোটি টাকার করোনা ভাইরাস  সামগ্রী কেনাকাটায় আট কোটি টাকাই লোপাট।

জানা যায়, কোভিড- ১৯ রোধে ৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকার মাস্ক ও ইনফ্রারেড থার্মোমিটার কেনায় বড় ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডেসিক প্রিপিউনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের কেনাকাটায় উপেক্ষা করা হয়েছে।

ওষুধ প্রশাসনের এনওসি ছাড়াই চীন থেকে চোরাইপথে আনা হয় নিম্নমানের কোভিড-১৯ সামগ্রী। যদিও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতির সাথে আপস নেই। সে যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন। দুর্নীতিবাজ দেশ, জাতি ও জনগণের শত্রু। এমনিভাবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকেও সোচ্চার হতে দেখা যায়।

জানা যায়, কিশোরগঞ্জের জেলা রেজিস্ট্রারের ঘুষবাণিজ্য থেকে আসে ৩৫ লাখ টাকা। জেলায় মাসে নিবন্ধনকৃত ১০ হাজার দলিল থেকে ২০০ টাকা করে ২০ লাখ, রেকর্ডরুম থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে মাসে তিন লাখ, প্রতিমাসে তিনটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস পরিদর্শন করে ছয় লাখ, প্রতিমাসে কর্মচারীদের বদলি বাণিজ্য করে পাঁচ লাখ এবং জেলায় খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালনকারী সাব-রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষবাণিজ্য হচ্ছে (৩ সেপ্টেম্বর, দৈনিক যুগান্তর)।

তা ছাড়া প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ঘুষ-দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। যা কারও না জানার কথা নয়। জানা যায়, পাসপোর্টের আঞ্চলিক অফিসগুলো রীতিমতো ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দালালের মাধ্যমে প্রকাশ্যে চলে ঘুষ-বাণিজ্যের কারবার। যা ওপেন সিক্রেট। ৬৯টি আঞ্চলিক অফিস থেকে কর্মকর্তাদের নামে প্রতিমাসে কমবেশি ঘুষ তোলা হয় ১২ কোটি টাকা। বিভিন্ন হারে যার ভাগ যথাসময়ে পৌঁছে যায় প্রধান কার্যালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের পকেটেও। পিলে চমকানো এ রকম ঘুষ কারবারের তথ্য প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে।

যেখানে বলা হয় একজন পরিচালক তিন বছরে মাসোহারা তুলেছে ছয় কোটি টাকা। সাক্ষ্য প্রমাণসহ গোয়েন্দা সংস্থার চাঞ্চল্যকর রিপোর্টটি এখন দুর্নীতি দমন কমিশনে (যুগান্তর ৮ সেপ্টেম্বর)। নিবন্ধনে তিনটি উদাহরণ থেকে পুলিশকে এখন ঘুষ, দুর্নীতির ব্যাপারে লাগামহীনভাবে আগের মতো বলার সুযোগ না থাকারই কথা।

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহার চড়ায় সেনাবাহিনীর চৌকস মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং তদন্তে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ এসআই লিয়াকত ও অন্যদের সংশ্লিষ্টতা যেভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তা পুলিশ বাহিনীর জন্য খুবই দুঃখজনক। পুলিশ বাহিনীতে ওসি প্রদীপের মতো কিছু দানব থাকার কারণেই পুলিশের অনেকেরই অর্জন সময় সময় ধুলায় লুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে।  দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে পুলিশ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠাতা ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জনক রবার্ট ফিল বলে গেছেন Police are the public and Public are the police অর্থাৎ পুলিশই জনতা এবং জনতাই পুলিশ। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ কিছুদিন আগে মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খানের নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ায় ছুটে যান এবং সেখানে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে দুঃখ প্রকাশ করে ভরাক্রান্ত মনে বলেছিলেন, পুলিশ বাহিনীতে থেকে অন্যায় করে রেহাই পাবে না কেউ।

যদি কারও ভালো না লাগে তবে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে পারেন। কাউকেই ক্ষমা করা হবে না। বেনজীর আহমেদ একজন নিষ্ঠাবান আইজিপি। তিনি যেখানেই চাকরি করেছেন অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। দেশের মানুষের কাছে তিনি জনবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তার মাঝে হিংসা ও অহঙ্কারের চাপ নেই। তিনি একজন স্পষ্টভাষী হিসেবেও পরিচিত। তাহার কাছে সমাজের সাধারণ মানুষের মর্যাদা অপরিসীম। সার্বিক অর্থে আইজিপি হিসেবে তার মতো এমন একজন ব্যক্তির প্রয়োজন ছিলো বলে দেশের অনেকেই তা মনে করে থাকে।

এছাড়া ডিএমপির কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দুর্নীতিদের বিরদ্ধে যে অভিযান পরিচালনা করেছেন, দেশের মানুষ ও ইতিহাসে তা অমর হয়ে থাকার কথা। দেশের একজন নাগরিক, সাংবাদিক ও নিবন্ধক হিসেবে বলব বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদ কিশোরগঞ্জের এডিশনাল এসপি ও পরবর্তী সময় জনবান্ধব এসপি হিসেবে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে যে ভূমিকা রেখে গেছেন তা স্মৃতি হয়ে রয়েছে, যা ভুলে যাওয়ার নয়।  বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব, কর্তব্য অপরিসীম।

যে কারণে তার অধঃস্তনদের মানুষের সাথে যথাযথ ব্যবহার করা সমোচিত। তা না হলে আঁচর তার ওপরেই সঙ্গত কারণে চলে আসে। একজন নিবন্ধক হিসেবে সাদামাঠাভাবে বলব, জনবান্ধব আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের আশপাশে দায়িত্বে থেকে অধঃস্তনরা এমন কিছু করবেন না যাতে নিজের ও স্বনামধন্য জনবান্ধব আইজিপির সম্মান ক্ষুণ্ন হয়।

যদিও আইজিপির সম্মান বৃদ্ধিতে অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশ পুলিশে আরও যেমন প্রদীপ মার্কা ওসি রয়েছে তেমনি অনেক ন্যায়-নিষ্ঠাবান, আদর্শবান ও ভালো কর্মকর্তা রয়েছে। আর কারো অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারও গোপন থাকেনি।

যা বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে যেমন মিডিয়াতে চলে আসে, তেমনি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় সময় ভাইরাল হতে দেখা যায়। মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খানের নিহত হওয়ার ঘটনায় এসআই লিয়াকত ও অন্য আরেকজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেখলে যে কারো শরীর শিউরে ওঠে।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ডিএমপির কমিশনার থাকাকালীন প্রভূত সমস্যা ও অচলায়তনকে অতিক্রম করে সমৃদ্ধ হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের র্যাবের অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় র্যবের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষতি হয়। তিনি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে অক্লান্ত শ্রম, নিষ্ঠা ও দক্ষতায় র্যাবকে নতুন করে মানুষের কাছে আস্থায় আনতে সক্ষম হয়ে থাকেন।

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সাথে সংশ্লিষ্ট গডফাদারকে ধরেছেন, আইনের আওতায় নিলেও অনুঘটক ও নাটের গুরুরা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বিভাগে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের মতো অগনিত স্বচ্ছ, ন্যায়পরায়ণ, নিষ্ঠাবান, আদর্শবান ও জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে। যাদের অবদান, সুনাম ও কৃতিত্বকে ভুলে যাওয়ার নয়।

সারদা পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাজিবুর রহমান, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম, ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান, এসপি মাশরুকুর রহমান খালেদ, মো. বরকত উল্লাহ খান এসপি হাইওয়ে পুলিশ, সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানাসহ আরও অগনিত পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখযোগ্য। মল্লিক ফখরুল ইসলাম এসপি হিসেবে কিশোরগঞ্জ থেকে বদলিজনিত কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ার সময় অনেকেই রবীঠাকুরের কবিতার পংক্তিতে বলছিল ‘যেতে নাহি দেবো’।

একবার আমি একজন সাংবাদিক বন্ধুসহ আরেকজনকে সাথে নিয়ে সারদা পুলিশ একাডেমি দেখতে যাই। তার একদিন পরই নবাগত উপপুলিশ পরিদর্শকদের পাসআউট প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল নাজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাদের পুলিশ আউটপাস প্যারেড অনুষ্ঠান দেখার আমন্ত্রণ জানান।

তা ছাড়া পুলিশ একাডেমি ঘুরে দেখার জন্য অভূতপূর্ব সহযোগিতা করে থাকেন। যা কোনোদিন ভুলে যাওয়ার নয়। তিনি এবং তার সহকর্মীরা যে সুন্দর ব্যবহার, আপ্যায়ন করেছেন, যে আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন তা মন থেকে ক্ষণিকের জন্যও চলে যায়নি। বারবার মনে হয়, আবার যেনো সারদা পুলিশ একাডেমি দেখে আসি।

মানুষ মানুষের জন্য এ কথাটি চালু থাকলেও প্রায় সময়ই এ কথাটির প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায় না। এই অবক্ষয়ের সময়ও নাজিবুর রহমানের মতো একজন বড় মাপের পুলিশ কর্মকর্তা, নিরহঙ্কার, সাদামাটা মনের মানুষ ও মানুষের জন্য মানুষ পাওয়া আজ খুবই কঠিন। বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এই কর্মকর্তার পারফরম্যান্স কত যে ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে তা কল্পনাও করা যায় না।

তার পরও বলবো, এসব পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব, অহঙ্কার, দেশ, জাতি ও জনগণের আশার আলোকবর্তিকা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও চিহ্নিত কিছু ব্যক্তির কোটি কোটি টাকার বেসামাল দুর্নীতির অপবাদ পুলিশের বিরুদ্ধে না এলেও প্রদীপ কুমার দাস, লিয়াকতের মতো কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার অপরিণামদর্শিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অসদাচরণ দৃশ্যপটে যথেষ্ট আলোচিত ও সমালোচিত। যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

পুলিশের এ শ্রেণিটা পুলিশের বিভিন্ন অবদানকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে যা ভাবতেও অনেকেরই হিমশিম ও আঁচড় খেতে হয়। আজ পুলিশের দীর্ঘদিনের ঘুষ-দুর্নীতির অপবাদ, বদনাম অন্যান্য মেগা দুর্নীতির কারণে যেমন ম্লান হতে চলেছে, তেমনি পুলিশ যদি অপরিণামদর্শিতা ব্যতিরেকে মানুষের সাথে সুন্দর ও ভালো ব্যবহার করে থাকে মানুষকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য না ভেবে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকে তবে পুলিশের এখনো যতটুকু দুর্নাম ও বদনাম আছে তা হয়তো একসময় বিদায় নেবে বলে অভিজ্ঞজনদের ধারণা।

গত ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক মুক্তখবর এ আইজিপির পরিকল্পনা ও পুলিশের সংস্কার নিয়ে যে সংবাদটি ছাপা হয়েছে তা পড়ে অনেকেই আশান্বিত। যাতে পুলিশের আচরণ ও অপরিণামদর্শিতার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়, সুন্দর, মার্জনীয় এবং জনবান্ধন আইজিপি ড. বেনজীর আহমদের উদ্যোগ সফল হয় ইহাই জনপ্রত্যাশা। অনেকের অধঃস্তনদের মতো আইজিপির অধঃস্তনদের ব্যবহার যেন না হয়।

আইজিপির ভাবমূর্তি ঊর্ধ্বে এবং তলানিতে নেয়ার জন্য অধঃস্তনরাই যথেষ্ট। পরিশেষে আবারো বলবো, পুলিশ আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার। তবে পুলিশের কিছু লোকের অন্যায়, অপরিণামদর্শিতা, অসদাচারণ, গর্ব, অহঙ্কার, অসদুপায়, মানুষের সাথে রূঢ় ব্যবহার যথেষ্ট সমালোচিত, এসবের উত্তরণেও জনগণের প্রত্যাশা কম নয়।

আমারসংবাদ/এআই