Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

মুজিবকোটের অপব্যবহার রোধে আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে

জাহাঙ্গীর কবির

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০, ১০:৩৬ পিএম


মুজিবকোটের অপব্যবহার রোধে আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে

গত ১২ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে মুজিবকোটের অপব্যবহার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনটি পড়ার পর বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভা-সমিতিতে সাদা পাঞ্জাবির উপর ছয় বোতামের হাতাহীন কালো কোট পরিধান করতেন বলে এই হাতাহীন কালো কোটটিকে আমরা বাংলাদেশের নাগরিকরা মুজিবকোট বলে থাকি। জাতির পিতা নিয়মিত পরিধান করতেন বিধায় এটি একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

এর প্রতি একটা সম্মানসূচক দৃষ্টি নিপতিত হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতারা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেক নেতাকর্মী জামা কিংবা পাঞ্জাবির উপর মুজিবকোট পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান এবং তার আদর্শ হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে চান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দৃষ্টিগতভাবে আওয়ামী লীগার পরিচিতি পেতে এটি একটি সহজ উপায় বলে অনেকে মনে করেন।

এই কোট গায়ে জড়াতে কোনো ধরাবাধা নিয়ম না থাকায় যে কেউ এটি পরতে পারে। হালকা শীত নিবারণে কিংবা শখের বসে নিজেকে সুসজ্জিত করতে অনেকেই এই কোট পরিধান করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিশেষ করে- রাজনৈতিক নেতাপর্যায়ের ব্যক্তিরা এই কোট গায়ে জড়িয়ে সভা সমাবেশে উপস্থিত হন।

কিন্তু আজকাল রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী সমর্থকদের মাঝে এ হাতাহীন কালো কোট পরিধান বেশ লক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কিংবা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মী সহজ পরিচয় বুঝাতে অনেকেই এই কোট ব্যবহার করে থাকেন। এতে দোষের কিছু না দেখে বরং আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশে অনেক লোক গায়ে জড়িয়ে জমায়েত হলে তাতে একটা বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় বলে অনেকের ধারণা।

বঙ্গবন্ধুকে হূদয়ে ধারণ করে এ কোট অঙ্গে জড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার আদর্শিক সৈনিক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করার ইচ্ছা অনেকেরই। মুজিবকোট পরিধানকারীদের আপাতদৃষ্টিতে মুজিব সৈনিক বা তাদের আওয়ামী লীগার ভাবাই স্বাভাবিক। মুজিবকোট পরিধান করা মানেই বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা।

 তবে মুজিবকোট পরিধান না করলে তিনি যে মুজিব আদর্শিক নয় কিংবা আওয়ামী লীগ সমর্থক নয় এমনটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। মুজিবকোট পরিধান বিহীন একজন আদর্শবাদী নেতাকর্মীকে প্রকৃত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনো কমতি হওয়ার কথা নয়। মুজিবকোট গায়ে দিতেই পারে। এটা একজন ব্যক্তির অভিরুচি। কিন্তু তার ভেতর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে কিছু সংখ্যক অসৎ লোক। তারা মুজিবকোট গায়ে দিয়ে অপর্ম করে বঙ্গবন্ধুর মুজিবকোটকে আলোচনার সামনে এনেছে। এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।

কেউ কেউ মুজিবকোটের অপব্যবহার বলে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। নব্য সুবিধাবাদীরা তাদের নানা অপকর্ম জায়েজ করতে এ কোটের অপব্যবহার করছে বলেও মন্তব্য করেছেন। ‘নব্য’ আওয়ামী লীগার শব্দ ব্যবহার করে কিছুদিন ধরে কারো কারো মুখে সমালোচনা করতে দেখা যায়। এতে আমার অভিমত দুটি বিষয়ে।

একটি হলো— মুজিবকোটের অপব্যবহার ও অপরটি ‘নব্য’ আওয়ামী লীগার উক্তি নিয়ে। প্রথমেই ‘নব্য’ কথাটি নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই। তা হলো- যারা পুরনো তাদের মাঝেও তখন কেউ না কেউ নব্য ছিলেন। তবে হতে পারে তাদের মধ্যে কেউ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অপকর্ম করেনি। করে থাকলেও ধরা পড়েনি বলে তখন তাদের ‘নব্য’ কথার তির্যক শব্দ শুনতে হয়নি।

কিন্তু এ কথা বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না যে পুরনো প্রত্যেকেই খুব ভালো কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেছে। কেহই কোনো অপকর্ম করে নিজের আখের গুছাতে বা রাজনৈতিক ফায়দা লোটেনি। নিজ স্বার্থে দুর্নীতি করেনি। এমনকি মীরজাফরের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে খন্দকার মোস্তাকের ভূমিকা সবারই জানা। মুজিবকোট পরে কারো অপকর্ম প্রকাশ পেয়েছে আবার কারোটা হয়তো প্রকাশ পায়নি।

তাদের কেউ নব্য হয়ে না ঢুকলেও অপকর্ম দুর্নীতি করেছে এমন গুঞ্জন বাজারে আছে। তাদের গায়েও মুজিবকোট ছিল এখনো আছে। অপকর্মকারী দুর্নীতিবাজ হিসেবে কারো কারো নাম প্রকাশ না পেলেও দুর্নীতি করছে না এমনটা বলা যাবে না। হয়তো বা কোনো না কোনোভাবে আড়ালে থেকে যাচ্ছে। অদৃশ্য শক্তির কারণে অথবা ক্ষমতার দাপটে তাদের নাম প্রকাশ পায় না।

এসব বাস্তবতা যদিও উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হলো। তবে প্রশ্ন জাগে ‘নব্য’ বলতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কি অপকর্মকারী বুঝায়? ‘নব্য’ বলতে দুর্নীতিবাজ বুঝায়? তবে দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী নব্য কিংবা পুরনো যেই হোক তার পরিচয় একটাই সে দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী। কিন্তু ‘নব্য’ আওয়ামী লীগার কথাটাতে অনেকেরই আপত্তি থাকার কথা।

বিশেষ করে— যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হূদয়ে ধারণ করে এবং তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের উপর বিশ্বাস রেখে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে বা আগামীতে যোগ দেবে তাদের কাছে এ তির্যক অসম্মানসূচক শব্দ বড়ই পীড়াদায়ক। যারা ভালো মন নিয়ে আওয়ামী লীগ করতে চায় বা যোগ দিয়েছে তাদের আলোচনা বা সমালোচনায় এই তির্যক ভাষার মুখোমুখিতে যেন আড়ালে মুখ ঢাকতে না হয় সে দিকে প্রবীণদের লক্ষ্য রাখা উচিত।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নবীন-প্রবীণ যাতে সহবস্থান করতে পারে সে সুনজর থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। সুবিধাবাদী লোক নতুন পুরাতন উভয় ক্ষেত্রেই থাকতে পারে। কেবল নবাগতদের ‘নব্য’ আওয়ামী লীগার বলে আখ্যায়িত করে হেয়প্রতিপন্ন করা কি যুক্তিসঙ্গত?। শব্দটি আভিধানিক অর্থে অশালীন মূল্যহীন না হলেও নবাগতদের প্রতি বিরক্তিকারে ব্যবহার করায় এটি এখন তির্যক শব্দে রূপ নিয়েছে।

যা তিরস্কারের মতো শুনায়। কিন্তু পুরনো দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী সুবিধাবাদীদের ক্ষেত্রে কি শব্দ ব্যবহার করা যায় তা ভেবে দেখা দরকার। পুরনো দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী সুবিধাবাদীদের বেলায়ও তো বিশেষ শব্দ বের করা উচিত। তা নাহলে নবাগত ও পুরাতনদের দুর্নীতি অপকর্মের ক্ষেত্রে তির্যক শব্দ প্রয়োগে বৈষম্যমূলক আচরণ হয়ে যায়।


পুরনো দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী সুবিধাবাদী তাদের তো আর সাধু বলা যাবে না? প্রশ্ন উঠতে পারে নবাগতদের কারা বাড়তি সুবিধা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ‘নব্য’ শব্দে ভূষিত করেছে? দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী সুবিধাবাদী যেই হোক সে তার অনিয়ম অপকর্মের জন্য তিরস্কৃত হবে এটাই স্বাভাবিক। ‘নব্য’ বলে তিরস্কার করলে নবাগতরা রাজনীতিতে আসতে উৎসাহ হারাবে।

কারণ কেউ নবাগতকে দেখে যদি বলে তুমি ‘নব্য’ তখন কি তার আত্মসম্মানে লাগবে না? এ শব্দটিকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যারা নবাগতদের ‘নব্য’ বানাতে সহায়তা করেছে তারাতো নিশ্চই পুরাতন। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া কি ‘নব্য’ হওয়া যায়? বাবা তার ছেলেকে বেয়াদব বলে গালি দিলেও ছেলে পাল্টা বাবাকে একই কথা বলতে পারে না; শোভাও পায় না।

তাই পুরনোদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অপকর্মকারী অন্যায়কারী দুর্নীতিবাজদের ‘নব্য’ বলে তিরস্কার করলে একই চরিত্রের অধিকারী পুরনোদের কি বলে তিরস্কার করা যায় সে শব্দ আবিষ্কারের ভার তাদের উপরই ন্যস্ত করা হলো। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না।

কথায় আছে কান টানলে মাথা আসে। নবাগতরা এগিয়ে না এলে পুরনোরা চিরকাল বেঁচে থাকবে না। পুরনোরা নবাগতদের সঠিক পথে পরিচালিত করলে নবাগতরা ‘নব্য’ না হয়ে সৎ রাজনৈতিক কর্মী বলে বিবেচিত হবে। আর সে দিকে নজর দিতে হবে বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদেরই। এবার আসি মুজিবকোটের অপব্যবহার নিয়ে যে দুটি কথা বলতে চাই। লেখাটি শুরু করেছিলাম এ বিষয় নিয়ে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিহিত কালো কোটটি কালক্রমে আমাদের কাছে ‘মুজিবকোট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশে মুজিবকোটকে অবশ্যই সম্মানের চোখে দেখা হয়। অনেকে গায়ে জড়িয়ে সম্মানবোধ করে। এই কোট গায়ে দিয়ে বিশেষ করে— সভা সমিতি অফিস আদালতে যেতে অনেকে উৎসাহবোধ করে।

তবে সত্যিকারের আওয়ামী লীগার কিংবা বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সৈনিক হওয়া এই কোট পরিধানে যেমন গুরুত্ব বহন করে না তেমনি স্বীকৃতি পাওয়ারও কথা নয় যদি না সে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হূদয়ে ধারণ করে। কেবল মুজিবকোট গায়ে চড়িয়ে মুজিব আদর্শিক হওয়া যাবে না। মুজিব সেনা হতে হলে জাতির পিতার আদর্শ হূদয়ে ধারণ করাই প্রথম শর্ত। কেউ যদি ধারণ না করে তবে সে ক্ষেত্রে মুজিবকোটের কোনো দোষ নেই। সে ক্ষেত্রে এ কোট গায়ে চড়ানোর জন্য অনুপযোগী হবে ব্যক্তি।

একইভাবে বলা যায়, দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী সুবিধাবাদী কেউ হলে সেটা ব্যক্তির উপরই বর্তায় মুজিবকোটের উপর নয়। আর এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হলে ব্যক্তি চরিত্রের পরিবর্তন সর্বাগ্রে। মুজিবকোট নিয়ে টানাটানি নয়। অর্থাৎ মাথা ব্যথা হলে রোগ সারাতে মাথা কেটে ফেলা নয়। আসল ব্যাপারটা অনুধাবন করার বিষয়। অপর্মকারী দুর্নীতিবাজ তৈরি হয় কিভাবে এবং কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা দরকার।

যাদের জোগসাজশে এসব দুর্নীতিবাজরা অপকর্ম করে ঘুরে বেড়ায় তারা মুজিবকোট পরলেই কি আর না পরলেই বা কি আসে যায়। তারা তাদের কাজ করেই যাবে। মুজিবকোট গায়ে থেকে সরালেও এসব দুশ্চরিত্র লোকদের দ্বারা দুর্নীতি অপকর্ম বন্ধ হবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদে থাকা ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় যোগসাজশে এরা অবৈধ ধন সম্পদের মালিক হয়ে থাকে। তাদের সহযোগিতাই দুর্নীতিবাজদের উত্থান ঘটে। তাতে মুজিবকোট গায়ে চড়ালে বা না জড়ালে তাতে কিছু যায় আসে না।

অপকর্মকারীদের তৈরি করবার সুদক্ষ কারিগর যারা তারা দেশের এবং ক্ষমতার বিভিন্ন স্তরে আছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও কম নয়। সব ক্ষেত্রে আছে বলেই মাঝে মাঝে বলতে শুনা যায় দুর্নীতেতে দেশ ছেয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে মুজিবকোটের দিকে না তাকিয়ে অপকর্মকারী দুর্নীতিবাজ তৈরি করার কারিগরদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা সমুচিত বলে অনেকে মনে করেন।

বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ মুজিবকোট ব্যবহারে প্রয়োজনে আইন প্রণয়নের কথা বলছেন। সেক্ষেত্রে যোগ্যতার যে মাপকাঠি বা বিচার-বিবেচনায় মুজিবকোট পরিধানের উপযোক্ততা নির্ণয় করা হবে সেক্ষেত্রে মুজিবকোট ব্যবহারের স্বীকৃতি বা অনুমোদন পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের কাছে অগণিত লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়বে কিনা ভেবে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রেও দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি রোধ করা কতটা সম্ভব হবে তাও ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন সহজ হবে কিনা তা বিশেষজ্ঞরাই ভালো জানবেন।

আমি একজন সাধারণ জ্ঞানের মানুষ হয়ে ভাবতে চাই এটা নৈতিকতার বিষয়। ব্যক্তি যদি দুশ্চরিত্রের হয় তবে সেটা কেবল পোশাক ব্যবহার করে নয় পোশাক না ব্যবহার করেও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে নৈতিকতার অবক্ষয় বিশেষ পোশাক ব্যবহার করা ছাড়াও লক্ষ্য করা যায়। নজর দিতে হবে ব্যক্তি চরিত্র ঠিক রাখার দিকে। শক্ত হাতে দমন করতে হবে দুর্নীতি অপকর্ম। আর সেটা যে পোশাকই যার গায়ে থাকুক। সাধারণ লোকদের মধ্যে কেউ কেউ হালকা শীত নিবারণের জন্য হাতাহীন কালোকোট পরে থাকে।

সে ক্ষেত্রে কি আইন থাকবে তাও ভেবে দেখার বিষয়। ধরা যাক আইন যদি হয়েই যায় তবে মুজিবকোট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নকল মুজিবকোট চিহ্নিত করার ব্যাপারে আলাদা জনবল প্রয়োজন হবে নাতো? এসব ঝামেলা এবং প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার কারণে কোনো আত্মসম্মানবোধ ব্যক্তি মুজিবকোট পরার আগ্রহ হারাবে। অতিসম্প্রতি মুজিবকোট পরা আওয়ামী লীগ নামধারী সায়েদ করিম ও লোপা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা খেয়েছে।

তাদের ধরা খাওয়ার পরই মুজিবকোটের অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে। অপকর্মকারীর মুখ উন্মোচিত হোক এটা সবারই কাম্য। এরা যদি মুজিবকোট গায়ে চড়ায়ে কোনো উত্তম কাজ করে খ্যাতি অর্জন করত তবে সে ক্ষেত্রে মুজিবকোটের অপব্যবহারের স্থলে হয়তো এর পরিধানের জন্য প্রশংসিত হতে পারতো। অর্থাৎ মুজিবকোটের অবমাননা করেছে।

অপকর্ম দুর্নীতি করার দায়ে তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাতেই হবে। কিন্তু এই মুজিবকোট গায়ে জড়িয়ে কি তারাই বর্তমান সময়ে অপকর্ম করেছে নাকি এর আগে পরে কেউ না কেউ অপকর্ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে এমন প্রশ্ন অনেকের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছে। মুজিবকোট গায়ে চড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় যখন তারা দৌড়ঝাঁপ করে বাড়তি সুবিধায় অবৈধ কাজ বাগিয়ে আনার চেষ্টা করতো তখন সেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কি মুজিবকোটের দিকে তাকিয়েই তাদের অপকর্মে সুবিধা দিয়েছিল? নাকি তাদের চরিত্রের দিকেও তাকানো উচিত ছিল?

যদি মুজিবকোট গায়ে জড়িয়ে কারো কাছে গেলে অবৈধ কাজ বাগিয়ে আনা সহজ হয় তবে তো কেবল সাহেদ লোপা নয় আরও মুজিবকোট গায়ে জড়ানো অপকর্মকারী দুর্নীতিবাজ সুবিধাবাদীর বিচরণ যে নাই তা বলা যাবে না। তাদেরও ধরতে হবে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে মুজিবকোট পরা হোক আর মুজিবকোট না পরা হোক দুর্নীতিবাজ অপকর্মকারী যে লেবাসে থাকুক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। টাউট বাটপার চোর মুজিবকোট গায়ে জড়ানোধারী আর না জড়ানোধারী কাউকেই ছাড় নয়।

দুর্নীনীতিবাজ ধরা নিয়ে কথা। এ ক্ষেত্রে সফলতা এলে অপকর্মকারীদের গা থেকে মুজিবকোট আপনা থেকেই সরে যাবে বলে আশা করা যায়। আইন করে মুজিবকোট ব্যবহারকারীর যোগ্যতা নির্ণয় করতে পারলে বেশ ভালো কথা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এ নির্ণয় করা সচ্ছ হবে তো? কথায় আছে মানুষের মধ্যে কেউ কেউ সুযোগের অভাবে সৎ থাকতে বাধ্য হয়। যখন সুযোগ পেয়ে দুর্নীতি অপকর্ম করবে তখন তাকে না ধরে মুজিবকোট গায়ে থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি? টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বদলি তদবিরে সফল হতে মুজিবকোট গায়ে চড়ালেই যদি সব বাগিয়ে আনতে সহজ হয় তবে সেখানকার কর্তাব্যক্তিদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিহিত মুজিবকোটের আলোচনায় যাতে এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থেকে আমাদের মন্তব্য করতে হবে। নৈতিক চরিত্র ঠিক না থাকলে মুজিবকোট গায়ে না জড়ায়েও অপকর্ম যারা করার তারা করেই। নজর রাখতে হবে যারা তাদের অপকর্ম করতে সাহায্য সহোযোগিতা করে তাদের উপরও।

সূত্রমতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা রাজনীতি করছেন তারাও এ কোট ব্যবহার করছেন। মুজিবকোট একটি আদর্শ পোশাক। বঙ্গবন্ধুর ভক্তদের কাছে এ কোট ধারণ করা মানেই তাকে ধারণ করার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন।

ব্যক্তি দুশ্চরিত্র অন্যায় অপকর্ম নানা অপরাধ বড় করে তুলে ধরা হোক। ধৃত সাহেদ লোপার কারণে মুজিবকোটকে সামনে আনলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ভক্তরাও এ কোট ব্যবহার করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে। নিরুৎসাহিত হবে। খোলা চোখ এমনটাই বলছে।
 
লেখক : কবি প্রবন্ধকার ও কলামিস্ট

আমারসংবাদ/এআই