Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা

রায়হান আহমেদ তপাদার

অক্টোবর ৯, ২০২০, ০৫:৫৫ পিএম


বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনা

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় এবং ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের নেতৃত্বের আসনে বসাতে সক্ষম হন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে।

স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি এবং এসএমই খাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য।

এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।

এই দেশে নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল পদ্মা সেতু নির্মাণ, যা বিশ্বে দ্বিতীয় দীর্ঘ সেতু। শুধু সড়ক সেতু নয়, তার সাথে রেলসেতুও। বিশ্ব ব্যাংক সহ তাবত সহযোগী সংস্থা অবাক হয়েছিল, তারা প্রথমে এগিয়ে এসেও পরবর্তীতে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সরে যায়।

নেত্রী তখন বলেছিলেন, টাকা ছাড় না করেই সন্দেহ! তা আমার দরকার নেই। বাংলার জনগণের টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু করে ছাড়ব। পদ্মা সেতু আজ শুধু দৃশ্যমান নয়, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ের দিকে।

এছাড়া আজ ঘরে বসে দুনিয়ার সকল কাজ কর্ম ডিজিটাল পদ্ধতিতে শুরু হয়ে গেছে। গোটা পৃথিবী হাতের মুঠোয় এসে গেছে। কী নেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে? লেখাপড়া, অফিস আদালত, দেশ থেকে বিদেশে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সভা সমাবেশ যেনো অকল্পনীয় পৃথিবীর বাস্তব উদাহরণ। জাতিসংঘের মতো পৃথিবীর সেরা মিটিংগুলো আজ দুনিয়ার রাজা প্রেসিডেন্টরা দেশে বসেই সেরে ফেলছেন।

যেনো মুহূর্তে সারা বিশ্বে ভাইরাল হয়ে যায়। গ্রাম থেকে শহর, শহর থেকে রাজধানী কোনো অংশেই কম যাচ্ছে না। কোভিড-১৯ এর মতো মহাদুর্যোগেও প্রশাসন এবং জনগণকে কিভাবে দিন রাত একের পর এক নির্দেশনা দিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যুতে আজ প্রায় সারা দেশে শতভাগ সাফল্য।

শিক্ষায় ছেলে মেয়েরা পৃথিবীর যেকোন ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। স্বাস্থ্য খাতে গ্রামেগঞ্জে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে বড় বড় মেডিকেল স্থাপনসহ বার্ন ইউনিট হাসপাতাল আলাদাভাবে তৈরি এদেশে যেনো কল্পনা ছিলো।

কোভিড-১৯ মহামারিতে আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশ অনেক ভালো রয়েছে। সঠিক সিদ্ধান্ত ও যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে। সামরিক সেক্টর থেকে আরম্ভ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত কোন সেক্টর আছে যে, তার আধুনিক ডিজিটাল দক্ষতায় উন্নয়ন হয়নি। সব ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত মানোন্নয়নের সাথে বাহিনীগুলোকে নানান দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় জাতিসংঘের মিশনের মতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংস্থায় বাঙালি ছেলেমেয়েরা কৃতিত্ব অর্জন করে চলেছে।

যার সব কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার। শুধু তাই নয়, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সাস্টেইনেবল গোল উপহার দিতে লেগে আছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলিয়ান হয়ে দেশপ্রেমের টানে নিজেদেরকে তৈরির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

তাছাড়া বাংলাদেশের জন্য ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান করেছেন। শত বছর পর বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তার কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় আজকের রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর যেকোনো নান্দনিক শহর থেকে কোনো অংশে কম নয়। উড়াল সেতু, মেট্রোরেলসহ সকল মেঘা প্রকল্প দ্রুত পূর্ণতা পাচ্ছে।

যেমনি অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে, তেমনি দলের ভেতর জাগিয়ে উঠা অন্যায়কারীদেরও কঠোর শাস্তির আওতায় এনে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেয়া এই নেত্রীর ধীরে ধীরে বিশ্বের নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।

ইতোমধ্যে জাতিসংঘে ১৬ বার ভাষণ দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। হয়তো অনেক রাষ্ট্রনায়কেরও এই বিরল সম্মান খুবই কম আছে। অতি সমপ্রতি মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন আট লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে।

আজ সারা বিশ্বেই তার নাম আলোচিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’ হিসেবে। জাতিসংঘের গত অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা তার এই মানবিক দৃষ্টান্তের প্রশংসা করেছেন। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।
 
এরপর থেকে গত ৩৯ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসামপ্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

বিশ্বের সমস্যা ও সংকট নিরসনে ভূমিকার পাশাপাশি শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে এখন বিশ্বনেতার মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি সরকার পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

১৯৯৬-২০০১ সালে তার সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা ১০ বছরে দেশে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে ছিলো বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন ও টার্নিং পয়েন্ট। বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আজকের পৃথিবীর অন্যতম একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কত যে জরুরি ছিলো সেটা বিগত বছরগুলোর বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আজ সহজেই অনুমেয়।

৩৯ বছর আগের সেই দিনটিতে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার এক ঐতিহাসিক পটভূমি তৈরি করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জিত হওয়া, অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরও জননেত্রী শেখ হাসিনা বিগত ৩৯ বছর যাবত আমানবিক পরিশ্রম করে, প্রতিমুহূর্তে মৃত্যু অবজ্ঞা করে বাংলাদেশকে আজ পৃথিবীর বুকে একটি ইমার্জিং টাইগারের অর্থনীতির দেশ, আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে দিচ্ছেন সেটা কি এ দেশের জনগণ মূল্যায়ন করার ক্ষমতা রাখে?

এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদেরকে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকতে হবে। কোভিড-১৯ সারা পৃথিবীর জন্যই এক বিশাল সমস্যা। মহামারির ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে যখন আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের সকল দেশগুলো দিশেহারা, উন্নত দেশগুলোতে ভয়ানক মৃত্যুর মিছিল যেখানে থামছেই না, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।

কিন্তু শেখ হাসিনা সীমিত সুযোগ ও সামর্থের মধ্যে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মহামারি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। তাই বিশ্বজোড়ে তার পারফরম্যান্সের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি, পদক ও স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানকে সম্মানিত করা হয়েছে।

এসবের মধ্যে রয়েছে-ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি অব জাপান-এর সম্মানসূচক ডক্টরেট অব ‘ল’ ডিগ্রি, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব আলবারটে ডান্ডির সম্মানসূচক ডক্টরেট অব ফিলোসফি ইন লিবারেল আর্ট, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান সূচক দেশিকোত্তমা, অষ্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডক্টরেট অফ লস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিজপোর্ট ইউনিভার্সিটির, ডক্টর অফ হিউম্যান লেটারস। সম্মানসূচক ডিগ্রি অর্জন করেন।

এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি ডক্টরেট অব ল’স প্রদান, পল হারিস ফেলোশিপ দ্য রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনেস্কোর হাউফুয়ট-বোনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা পুরস্কার-১৯৯৮ এবং ২০০৬, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্যান্ডলফ ম্যাকন মহিলা কলেজের পার্ল এস বাক পুরস্কার-১৯৯৯, সিইআরইএস পদক- ১৯৯৯, এমডিজি অর্জনের জন্য জাতিসংঘ পুরস্কার (শিশু মৃত্যু)-২০১০, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০০৯, দক্ষিণ-দক্ষিণ পুরস্কার-২০১১, এমডিজি অর্জনের জন্য জাতিসংঘ পদক-২০১৩, পুরস্কার, রোটারি শান্তি পুরস্কার- ২০১৩, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪ আইসিটি স্থায়ী উন্নয়ন পুরস্কার-২০১৪, পৃথিবীর চ্যাম্পিয়ন্স অবদ্য আর্থ-২০১৫, এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড-২০১৬, এবং প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন পদক-২০১৬ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম সম্মান দেশ ও জাতীর জন্য উপহার দিয়েছেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পারফরম্যান্স যত ভালো হয়, প্রত্যাশা বাড়ে পাল্লা দিয়ে এটাই জগতে নিয়ম। এমনকি পারফরম্যান্স বৃদ্ধির হার যদি হয় জ্যামিতিক, প্রত্যাশা বাড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে। আমরা সেটা ভালোই টের পাচ্ছি। তবে অকপটে স্বীকার করতে হবে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী।আর এই পারফরম্যান্স ধরে রেখে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নেয়াই হবে শেখ হাসিনার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করাই শেখ হাসিনার লক্ষ্য। যদি এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা জায়, তাহলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে আমাদের অবস্থান হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

আমারসংবাদ/এসটিএম