Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

নদীর নাম মধুমতি (পর্ব-২)

অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান খান

অক্টোবর ১৮, ২০২০, ০৮:৫৫ পিএম


নদীর নাম মধুমতি (পর্ব-২)

৪। নদীর নামকরণ
মধুমতি নদীর নামকরণ নিয়ে তিনটি মতবাদ চালু আছে। এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও লোকমুখে শুনে শুনে বংশপরম্পরায় তা আজ আমাদের হাতে পৌঁছেছে। এর প্রথম মত দুটি অতোটা জোরালো নয়।

প্রথমটি হচ্ছে— এ নদীর পানি অতি সুমিষ্ট ও সুস্বাদু, অনেকটা মধুর মতো। তাই লোকজন সখ করে এর নাম ‘মধু’ নদী বলে ডাকতো। কিন্তু মতি শব্দটা কীভাবে যোগ হয়েছে তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। তাই এই তত্ত্বের মত ঐতিহাসিকরা গ্রহণ করেন না।

অপর মতবাদ হচ্ছে— এই নদী দিয়ে বাওয়ালিরা সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যাওয়া-আসা করতো, সেই সুবাদে এই নদীর নাম মধুমতি হয়েছে। এই নামকরণও বিশ্লেষকরা গ্রহণ করেননি। কেননা এখানেও মধু শব্দের সাথে মতির কোনো যৌক্তিক যোগসূত্র না থাকায় এ মতও পরিত্যক্ত হয়েছে।

সবচেয়ে জোরালো মতবাদ হচ্ছে মধুমালা ও মতিমিয়ার ব্যর্থ প্রেমের অমর কাহিনী নিয়েই রচিত লোকগাঁথা— যার মূল তত্ত্ব হচ্ছে মধুমালার ‘মধু’ আর মতিমিয়ার ‘মতি’— এই নিয়েই নদীর পূর্ণাঙ্গ নাম হয়— মধুমতি।

নদীপাড়ের বাসিন্দাদের কাছে যে লোক কাহিনী প্রচলিত তা হলো— সপ্তম শতাব্দীতে বর্তমান মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার সাত কি.মি. উজানে বসুর ধুলজুরি গ্রামের উত্তর পাশে এবং কাশিপুর গ্রামের দক্ষিণে অবস্থিত বাইরাল পাচুড়িয়া নামক একটি গ্রাম ছিলো।

সেখানে একটি জেলে পল্লীর বসতি ছিলো। সেই গ্রামে নিবারণ মাঝির অপূর্ব এক সুন্দরী কন্যা ছিলো। তার নাম ছিলো মধুমালা ওরফে মিথিমালা। মধুমালার মায়ের নাম শুক্লা মাঝি। অপরদিকে ঐ গ্রামেই মুসলমান সমপ্রদায়ের জোতদার কিতাবুল্যার পুত্রের নাম ছিলো মতিমিয়া। এই মতিমিয়া ও মধুমালার একদিন নদীর ঘাটে সাক্ষাৎ হয়।

তারপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায়ই তারা নির্জন নদীপাড়ে অভিসারে মিলিত হতো। এক কান দুকান থেকে একথা চলে যায় চার কানে। তখন এই দুই সমপ্রদায়ের মধ্যে চরম সহিংসতা শুরু হয় এবং সংঘর্ষে উভয়পক্ষের দুইজন লোক মারা যায়। দুই সমাজের কোনো পক্ষই তাদের এই প্রেম-ভালোবাসা মেনে নেয় না।

কিন্তু চরম বিধিনিষেধ আরোপ করার পরও মতিমিয়া আর মধুমালার গোপন অভিসার চলতেই থাকে। বিধর্মীদের সাথে সম্ভ্রম বাঁচাতে কয়েক গ্রামের জেলেরা একজোট হয়ে মধুমালাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কোনো এক অমাবস্যার কালোরাতে মধুমালাকে তার সমপ্রদায়ের লোকেরা নৃশংসভাবে খুন করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এই সংবাদ পরদিন জানাজানি হলে ব্যর্থ প্রেমের খেসারত দেয় মতিমিয়া।

সে প্রেমিকা মধুমালার এ করুণ পরিণতি মেনে নিতে না পেরে গলায় কলশি বেঁধে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেয়। নদীর স্রোতে ভাসতে ভাসতে অলৌকিকভাবে দুজনের লাশ লোহাগড়ার বর্তমান ইতনা নামক জায়গায় একটা চরে আটকে যায়।

কথিত আছে যে— মধুমালা আর মতিমিয়ার প্রেমের শেষ পরিণতি ঘটে ইতি দিয়ে যে জায়গায়। সেখানকার নামকরণ হয় ইতি গ্রাম। যা পরে বিকৃত হয়ে ইতনা হয়েছে।

আরেকটি উপখ্যান থেকে জানা যায় যে, এ ঘটনাটি ঘটেছিল এই নদীর সূচনা মুখ কামারখালীর সন্নিকটে গন্ধখালী নাওড়াপাড়া গ্রামে। তখন গ্রামটির নাম রাজাপুর ছিলো। মধুমালা মূলত একজন ঋষির মেয়ে ছিলো। মতিমিয়ার সাথে এই অসম প্রেম মেনে নেয় না হিন্দু সম্পদায়ের লোকজন।

 হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা প্রকট আকার ধারণ করে এবং উভয়পক্ষের অনেক লোক মারা যায়। ফলে মধুমালা আর মতিমিয়া বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুজনে এক সাথে শাড়ির আঁচলে নিজেদের বেঁধে ফেলে এবং উভয়ই একই সাথে গলায় কলসি বেঁধে নদীতে ঝাঁপ দেয়।

তাদের স্মরণে আজো কামারখালির অদূরে নাওড়াপাড়া গ্রামে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেষদিন ঋষি বটতলায় মেলা মেলে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক মধুমালা ও মতিমিয়ার স্মৃতিবিজড়িত ঋষি বটতলার মেলায় বেড়াতে আসে। এই স্মৃতিকথা ও লোকগাঁথা থেকে আমরা মধুমতি নদীর ইতিহাস জানতে পারি।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক ও খুলনার আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক প্রবাহের সম্পাদক প্রফেসর গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনির কাছে মোবাইল ফোনে নদীটির নামকরণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান যে, মধুমালা আর মতিমিয়ার ব্যর্থপ্রেমের উপখ্যান নিয়েই মধুমতি নদীর নামকরণ হয়েছে।

তবে ঘটনাস্থল ছিলো মহম্মদপুর থানার বাইরাল পাচুড়িয়া গ্রামে। তিনি আরও জানান যে, মধুমতি নদীপাড়ে বাস্তবে বাইরাল পাচুড়িয়া গ্রামের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও ডিস্ট্রিক্ট সেটেলমেন্টের ১৯২০ সালের জরিপে জেএল নং ২৫ এবং মৌজার নাম বাইরাল পাচুড়িয়া নামক জনপদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যদিও মৌজাটির অধিকাংশই এখন মধুমতি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে একই বক্তব্য রাখেন আধুনিক প্রজন্মের প্রথিতযশা মফস্বল সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন শাহিন। তিনি মহম্মদপুর সরকারি আরএসকেএইচ ইনস্টিটিউশনের একজন শিক্ষক। তিনিও সাহিত্যিক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনির বক্তব্য সমর্থন করেন। এভাবেই প্রমত্তা এ নদীটির নাম হয় মধুমতি।

৫। মধুমতি নদীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ— মানুষ থেকে কুমির
মধুমতি নদীপাড়ে অবস্থিত বিখ্যাত নদীবন্দর এলাংখালীর ঘাট। এর দুমাইল ভাটিতে নদের চাঁদের ঘাট। ১৬১২ সালের আগস্ট মাসের কথা। মধুমতি নদীতীরে মহম্মদপুর থানার পাচুড়িয়া গ্রামে বাস করতো চাঁদ নাম করে একটি যুবক। সে আসামের কামরূপ কামাক্ষায় যন্ত্রমন্ত্র শিখতে যায়।

প্রায় ১০ বছর মন্ত্র শিখে বাড়িতে ফিরে আসে। তার বাবা গদাধর পদ্মায় মাছ মারতে গিয়ে মারা যায়। মা ছেলেকে সংসারী করার জন্য সরলা নাম করে এক যুবতীর সাথে তার বিয়ে দেয়। তিনি সবাইকে জানান যে, তিনি মন্ত্রবলে মানুষ থেকে কুমির হতে পারেন।

এই সময় তার স্ত্রী বায়না ধরে যে, সে কুমির দেখতে চায়। স্ত্রীর অনুরোধে নদের চাঁদ কুমির হতে রাজি হয়। তিনি দুটি পাত্রে মন্ত্রপড়া পানি রেখে তার স্ত্রীকে ভালো করে বুঝিয়ে দেন যে, একটির পানি তার গায়ে ছিটিয়ে দিলে তিনি কুমির হয়ে যাবেন।

অন্য পাত্রের পড়াপানি ছিটিয়ে দিলে তিনি আবার মানুষ হয়ে যাবেন। প্রথমে তার স্ত্রী চাঁদের গায়ে পানিপড়া দিলে তিনি কুমির হয়ে যান এবং মধুমতি নদীতে নেমে যান। পরে কুমিররূপী চাঁদ বাড়ির ঘাটে এলে তার স্ত্রী দেখে অজ্ঞান হয়ে যান।

গ্রামবাসীরা দৌড়ে এসে ঘটনা অবহিত হয়। মাটির ঘটে রাখা পড়াপানি কুমিরের লেজে লেগে ঐ পড়া পানি ছিটকে পড়ে কুমিরূপী মানুষ নদের চাঁদের গায়ে। তখন অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক কুমিরের রূপ ধারণ করেন নদের চাঁদ। পাঁচদিন অবধি কুমিরটি বাড়ির ঘাটের চারপাশেই ঘোরাফিরা করতো।

এদিকে গ্রামের কিছু লোক নদের চাঁদের গুরুমাতার কাছে কামাক্ষায় যান এবং বিস্তারিত খুলে বলেন। গুরুজি অতি দ্রুতই নদের চাঁদের বাড়িতে চলে আসেন। এদিকে পাঁচদিন উপবাস থাকার পর ছয় দিনের মাথায় প্রচণ্ড ক্ষুধায় নদের চাঁদ মৎস্য আহার করেন। তখন গুরুজি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন যে, যেহেতু আহার হয়ে গেছে তাকে আর মানুষরূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কুমির হওয়ার পর নদের চাঁদ প্রায়ই বাড়ির ঘাটে আসতো। নদের চাঁদের মা ও স্ত্রী তাকে মাছ খেতে দিতো।

এর কিছুদিন পর এক ইংরেজ বন্দুক দিয়ে কুমিরটিকে গুলি করে মেরে ফেলে। অনুশোচনায় ক্লান্ত স্ত্রী সরলা পরে নদীতে ডুবে আত্মাহুতি দেয়। তার নামানুসারে নদের চাঁদ খেয়াঘাট, নদের চাঁদ সরকারি প্রাইমারি স্কুল, নদের চাঁদ হাট, নদের চাঁদ পোস্ট অফিস এবং নদের চাঁদ নামক একটি মৌজা আছে। নভেল, নাটক, সিনেমা আর মানুষের মুখে মুখে আছে নদের চাঁদের কুমির হওয়ার অলৌকিক কাহিনী।

৬। খেয়াতরি ডুবে সর্বোচ্চ সলিলসমাধি ৮০ জন
মধুমতি নদীতে ডুবে এ পর্যন্ত কত লোক মারা গেছে তার হিসাব কে দেবে! তবে এই নদীতে ডুবে একসাথে প্রাণ হারিয়েছেন ৮০ জন লোক। এমন মর্মস্পর্শী ঘটনার সাক্ষী মধুমতি পাড়ের লোকজন। বেদনাবিধুর এ ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসান ডুবে যাওয়া ওই খেয়া নৌকার একজন ভিকটিম। তার নাম ছত্তার মোল্লা। তার বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার পাল্লা গ্রামে। তার বয়স ১০৪ বছর।

নৌকাডুবির ওই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল বাংলা ১৩৫৬ সালের ৮ আষাঢ়, বুধবার। ঘটনাস্থল ছিলো মহম্মদপুর থানার পাল্লা ও মধুখালি থানার নওপাড়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা মধুমতি নদীর মাঝ নদীতে। তখনকার দিনে সাপ্তাহিক হাট বসতো মাত্র একদিন। নওপাড়াহাট মিলতো প্রতি বুধবার। নওপাড়া ছিলো বড় মোকাম।
 
এ পাড়ে যশোর জেলার লোকজন নওপাড়া মোকামে মাত্র একখানা খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে হাটে যাতায়াত করতো। নৌকাডুবির এ দুর্ঘটনার দিনে বিকাল ৩টার সময় প্রায় দেড় শতাধিক লোক সতীশ নামের পাটনির খেয়াতরিতে উঠে পড়ে। ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ লোক খেয়া নৌকায় ওঠার ফলে সতীশ পাটনি তরি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।

কিন্তু যাত্রীদের চাপের মুখে পাটনি নৌকা ছাড়তে বাধ্য হন। পাল্লা গ্রামের সরব্দি মোল্লা পালের ডুরি ধরেন। খেয়া নৌকার পাটনি সতীশ পাছা নৌকায় যাত্রীদের সরে বসতে বলেন। কিন্তু যাত্রীরা তার কথায় কান দেয় না। মাঝ নদীতে নৌকা পৌঁছালে হটাৎ একঝলক দমকা হাওয়া খেয়া নৌকাকে টালমাটাল করে তোলে। শরব্দি মোল্লাকে কেউ কেউ পালের ডুরি ছেড়ে দিতে বলে। আবার কেউ কেউ টেনে ধরতে বলে। শরব্দি মোল্লা তালহারা হয়ে পালের ডুরি ছেড়ে দিলে কালীতলা নামক জায়গার মাঝ নদীতে খেয়াতরির বিসর্জন ঘটে।

দুই পাড়ে তখন হাজারো মানুষের কান্নার রোল। এই খেয়াডুবিতে ৮০ জন লোক প্রাণ হারান। ২৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অবশিষ্ট ৭৫ জনের লাশ নদীতেই সমাহিত হয়। ওই খেয়া নৌকায় বেঁচে থাকা ভিকটিম পাল্লা গ্রামের ছত্তার মোল্লা (যিনি এখনো বেঁচে আছেন) একটি ধামা বুকের তলে দিয়ে ভাসতে ভাসতে নদের চাঁদের ঘাট অবধি গিয়ে কীভাবে বেঁচে ছিলেন তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আমাকে।

এই ঘটনাকে উপজীব্য করে স্থানীয় লোক কবি বাঁশো গ্রামের মোকছেদ আলী একটি ধুয়াগান রচনা করেন। ধুয়া গানটি আমাকে পড়ে শোনান পাল্লা গ্রামের নুরু মাতব্বর। পাঠকদের উদ্দেশ্যে হূদয়বিদারক নৌকাডুবির সেই ঘটনা হুবহু তুলে ধরা হলো।

আরে ও শোনো ভাই সকলে, এক দুঃখের কথা বর্ণন করতে বুক ভাসে নয়ন জলে, দয়াময় এই কি তোর লীলে। ওরে ১৩৫৬ সাল আষাঢ় মাসে ৮ই বুধবার বেলা শেষে, বসে ভাবি সেই মধুমতির কূলে। আরে ও দেশের লোক সকলে, তারা ইতর ভদ্র এক সাথে জুটে যাচ্ছে নওপাড়ার হাটে, পৌঁছিল ঐ খেয়া ঘাটে। ওরে সতীশ নামে পাটনি ছিল, তরি সে কিনারায় দিল, পাড়ের লোক সব উঠলো সেই খেয়ায়।

আরে ও ডেকে কয় পাটনি, তোমরা পাছা নৌকায় সরে বসো সোজা হোক মোর তরনি, কেহ তার শুনলো না বাণী। তাতে পুবাল বায়ে তুফান ভারি শরব্দি নেয় পালের ডুরি, হু হু শব্দে চলছে তরণি। আরে ও দরিয়ার মাঝখানে, নৌকার হালেতে বাধে নারে পানি, আড়ে বাধে তুফানে- শরব্দিকে কয় জনে জনে, তুমি ছেড়ে দাও ঐ পালের ডুরি, শরব্দি ছাড়িল ডুরি অমনি তরি যায় বিসর্জনে। আরে ও উঠলো কান্নার ধ্বনি। তারা কেউ কান্দে হায় হায় শব্দে, ত্বরাও আজ কাদের গণি, কেউ কান্দে হায় না দেখলাম জননী। কেউ কান্দে নাম ধরে ভাই আর বেটা কেউ কান্দে সহধর্মিনী।

আরে ও কতজন নাউ ছাড়ে, তাতে বাতাসের বেগ বেশি হইলো সামনে নৌকা না সরে। বাহু তুলে যায় কতক জনে, তাতে ধরতে গেলে যায় না ধরা, দেখতে দেখতে হইলো সারা, কলেমা পড়ে যায় পাতালপুরে। আরে ও লোক মরলো ৮০ জন, তার জন পঁচিশেক পড়লো ধরা হিসাবে তাই পাই এখন। আরে ও মরলো রসিদ খুনকার, নাগরিপাড়া তার বসতি, কাশিপুরের দোকানদার।

পাল্লা গাঁয়ের জসিম আর জব্বার, খোরশেদ আলী মীর মরিল, বিদেশি লোক যত ছিল, নায়েব বাবু, বিলপাড়ার আনছার। ও তাই মোকছেদ আলী ভেবে বলে যা লিখেছে সাঁই যার কপালে বিধির লিখা না হয় রে খণ্ডন”। এই পর্বটি আমাকে সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছিলেন নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া পাল্লা গ্রামের খোরশেদ আলী মীরের পোতা ছেলে আনিস বিন আকবর।

৭। মধুমতি নদীতে ৩৯ মুক্তিযোদ্ধা হত্যা
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী শহিদের তালিকায় ৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধার বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে এই মধুমতি নদীতে। ১৯৭১ সালের ২৩ মে নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার অধীন ইতনা ও চরভাটপাড়া গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীদের সাথে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে শাহাদাতবরণ করেন ৩৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সবাইকে হত্যা করে লাশ মধুমতি নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। নদীর ওপাড় থেকে ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস পাড়া থেকে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা এসে অতর্কিতে আক্রমণ করে হত্যা করে এসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

এই যুদ্ধে চারজন পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যও খতম হয়। প্রতি বছর ২৩ শে মে সেখানে শাহাদাতবরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ করা হয়। মধুমতি নদীতে ঘটে যাওয়া এই ট্রাজেডি নদীপাড়ের লোকজন কখনোই ভুলবে না।  

লেখক : কলামিস্ট, বিশ্লেষক, আইনজীবী মাগুরা বার

আমারসংবাদ/এআই