Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

নিকাহ্ রেজিষ্টারদের হালচাল

অক্টোবর ৪, ২০১৬, ১২:৫৩ পিএম


নিকাহ্ রেজিষ্টারদের হালচাল

প্রত্যেক ধর্মেই রহিয়াছে বিবাহের বিধান ও নিয়মাবলী। মুসলিম বিবাহ ও তালাক সম্পর্কিত বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বিস্তারিত বিধানাবলী রহিয়াছে। বৃটিশ শাসনামলে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত), ১৯৩৭ এবং পাকিস্তান শাসানাধীনে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ জারী করা হইয়াছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শাসনামলে বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। নিকাহ্ রেজিষ্ট্রেশন প্রতিষ্ঠান সরকারের একটি অত্যন্ত পুরোনো এবং লাভ জনক খাত। সারাদেশ থেকে বছরে প্রায় কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয়ে থাকে নিকাহ্ রেজিষ্টারদের নিকট থেকে। অথচ নিকাহ্ রেজিষ্টারদেরকে সরকারের তরফ থেকে কোনো বেতনভাতাদী দেওয়া হয়না। ইহা কোনো সরকারী চাকুরী নয়। সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত আলেম ওলামা, ঠাকুর, পাষ্টর, পাদ্রীগন শুধু জনসেবক উপাধিতে সীমাবদ্ধ। অফিস খোলা, ধুয়া-মুছাসহ অফিসের যাবতীয় রক্ষণা-বেক্ষণের কাজ নিকাহ্ রেজিষ্টারের দায়িত্বের মধ্যেই।

বাল্য বিবাহ একটি জাতীয় সমস্যা, ইহা প্রতিরোধে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দলমত র্নিবিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সাথে একমত পোষণ করে বাল্যবিবাহ রোধে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করিতে নিকাহ্ রেজিষ্টারদের ন্যূন্যতম কার্পন্যতা নেই। বর্তমানে দেশে সরকার অনুমোদিত প্রায় ৮ হাজারের মতো মুসলিম নিকাহ্ রেজিষ্টার আছেন। এছাড়াও হিন্দু, খ্রিষ্টান বিবাহ নিবন্ধক ও বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক সহ আরও আছেন প্রায় হাজার খানেক। বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক নিয়োগ দিয়ে এই দেশে সকল ধর্মের মানুষদের সভ্যতার সহিত বাসযোগ্য দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের গৌরব উজ্জল করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। নিশ্চই তিনি প্রশংসার দাবীদার। সামাজিকভাবে এরা সবায় কাজী হিসেবে পরিচিত। তাহাদের সংগে সহায়ক হিসেবে আরো প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার লোক জড়িত রয়েছেন। এ্যাডভোকেট, মসজিদের ঈমাম, শিক্ষক, মুফতি, মোহাদ্দেসসহ বিভিন্ন ধর্মের সাংস্কৃতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ঠাকুর পাদ্রী, পাস্টর, প্রভাষক এবং প্রিন্সিপালের মতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন পেশার সাথে জড়িত এই কথা অনস্বীকার্য। সমাজে তাদের সম্মানজনক একটা অবস্থান রয়েছে। রাষ্ট্রের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব পালন করেন নিকাহ্ রেজিষ্টারগণ। তাহাদের কথা সমাজে মান্য করে। প্রশাসনের তরফ থেকে অহেতুক বাল্য বিবাহের দায় চাপিয়ে নিকাহ রেজিষ্টারদের নিগৃহীত করার বিষয়টি সমাজের সহজ সরলমনা মানুষ ভাল চোখে দেখছেন না। বরং এতে সরকারের ভাবমূর্তী দারুন ভাবে ক্ষুণ্য হচ্ছে। আলেম ওলামাদের সাথে সরকারের সম্পর্কেরও কিছুটা অবনতি ঘটতে পারে। এজন্য দায়ী কে ? এ প্রশ্নও সামনে আসাটা স্বাভাবিক। এটাও প্রশাসনকে সতর্কতার সহিত নজরে রাখা দরকার বলে মনে করি।

কোন প্রকার ভুল তথ্য দ্বারা রেজিষ্ট্রিকৃত জমি জমার দলিল আদালত কর্তৃক বাতিল হইলে রেজিষ্ট্রীকারক সাব-রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে জ্বাল দলিল রেজিষ্ট্রির দায়ে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ নিবন্ধন কর্মকর্তাগণ পাবলিক সার্ভেন্ট। তেমনি একই নিয়মে বর বা কনে পক্ষ কর্তৃক দাখিলকৃত ও প্রদর্শিত তথ্যাদি দ্বারা কোন বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা হইলে পরবর্তীতে দাখিলকৃত তথ্যাদি জ্বাল বলিয়া প্রমাণিত হইলে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিষ্ট্রার তাহার জন্য দায়ী থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। পূর্ব থেকে বিবাহ সাদীর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করার সময় পক্ষগণ ম্যারেজ রেজিষ্টারকে ডাকেন। ঐ মুহুর্তে বর এবং কনে পক্ষ কর্তৃক নিকাহ্ রেজিষ্টারের নিকট প্রদর্শিত আইনানুগ কাগজপত্র দেখে ইহার ফটোকপি সংরক্ষণ করে বয়স বিষয়ে নিশ্চিত হইয়া কাজী সাহেবগণ বিবাহ রেজিষ্ট্রি করিয়া থাকেন। এতে নিকাহ রেজিষ্টারদের উপর কোনরূপ দায়-দায়িত্ব বর্তানো যুক্তিযুক্ত নয়। পক্ষগণ কর্তৃক কোনো তথ্য গোপন করিয়া থাকিলে তাহার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষই সকল প্রকার দায় দায়িত্ব বহন করবেন এটাই বাস্তবতা এবং যৌক্তিক।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা-২০০৯ ও সংশোধনী ২০১১ এর বিধি ২৩ ‘ক’ মোতাবেক বর এবং কনের জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জেএসসি বা জেডিসির কিংবা এস এস সি বা সমমানের পরীক্ষার সনদ এর যে কোনো একটির মাধ্যমে বয়স বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদী না থাকলে উল্লেখিত বিধানের ২৩-‘ক’ উপধারা (২/১) মোতাবেক বর বা কনের পিতা মাতা বা আইনগত অভিভাবক কর্তৃক প্রদত্ত বয়স সংক্রান্ত হলফনামা দ্বারা বয়স বিষয়ে নিশ্চিত হইয়া বিদ্যমান বিধান মোতাবেক নিকাহ রেজিষ্টারগণ বিবাহ নিবন্ধন করে থাকেন। নিকাহ্ রেজিষ্টার নিয়োগ প্রদানের পর সরকার কর্তৃক তাদের কোনরূপ প্রশিক্ষণ না দিয়েই বালামবহি দিয়ে তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিবাহ অনুষ্ঠানের স্থলে বর বা কনে পক্ষ কর্তৃক প্রদর্শিত কাগজপত্রাদী সঠিক কি না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যাঁচাই বাছাই করার মত প্রয়োজনীয় সময় আইনগত কোনো ক্ষমতা বা কোনরূপ যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়না তাদের।

প্রচলিত বিধানের ২৩.ক (৩) মোতাবেক বর বা কনে পক্ষ কর্তৃক মিথ্যা তথ্য দিলেএবং উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিকাহ রেজিষ্টারগণ বিবাহ রেজিষ্ট্রি করিলে তজ্জন্য কোন নিকাহ রেজিষ্টার দায়ী হইবে না মর্মে বিধান সুস্পষ্ট ও বিদ্যমান। যেহেতু প্রচলিত বিধান মেনেই পক্ষগণ কর্তৃক প্রদর্শিত কাগজপত্রাদি দেখিয়া আইনানুগ ভাবেই নিকাহ্ রেজিষ্টারগণ বিবাহ রেজিষ্ট্রি করে থাকেন। সংগত কারণেই বাল্য বিবাহের দায় চাপিয়ে নির-অপরাধ নিকাহ রেজিষ্টারদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া আইনগত কোন ভিত্তি নাই। পাশাপাশি অমানবিক ও বটে। বাল্য বিবাহ রোধে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন বাস্তবায়ন ও কার্যকর করিতে হইলে একই ব্যক্তির নামে ভিন্ন রকম একাধিক জন্ম সনদ প্রদানকারী কর্মকর্তা এবং জন্ম সনদ গ্রহণকারির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আইন প্রনয়ণ পূর্বক বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করিলে দ্রুত বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হইবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। ৮ সেপ্টেম্বর -২০১৪ ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মারফত জানা যায় যে, ভারতে দিল্লির উচ্চ আদালত কর্তৃক একটি মামলার শুনানিতে বাল্য বিবাহের শিকার শিশুর মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিবাহিতা শিশুর মা-বাবার দায়ের করা মামলার শুনানী অন্তে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদালত এ নির্দেশ দেন। বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশেও তাই হওয়া উচিত। এছাড়া মাননীয় হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, The Nikah Register is the name of an office appointed by the government , (Popular known as the Kazi) has the authority to register marriage in Bangladesh. Nikah Register, appointed by the government under the Muslim Marriage and Divorces (Registration) Act, 1974, and rules framed there under, the Muslim Marriage and Divorces (Rules), 1975 Each Kazi is appointed to a defined locality where their job is registration of Muslim Marriages and Divorces within the given area. According to a recent High Court decision, Nikah Registrars ar Public servants [ Kazi Obaidul Haque vs State. 55 DLR(১৯৯৯) ২৫]. মাননীয় হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তে প্রচলিত মুসলিম ও বিবাহ তালাক (নিবন্ধন) আইন ও বিধান দ্বারা অত্যন্ত শক্তিশালী ভাবে প্রমানিত যে, নিকাহ্ রেজিষ্টারগণ পাবলিক সার্ভেন্ট।

বাল্যবিবাহের দায় চাপিয়ে যে সকল নিকাহ্ রেজিষ্টারদেরকে সাজা প্রদান করা হয়েছে-প্রায় সকলেই ইতোমধ্যে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে উচ্চ আদালত কর্তৃক বেকসুর খালাস পেয়েছেন। মোবাইল কোর্ট নির্ধারিত পন্থায় পরিচালিত হয়নি মর্মেও রায়ে উল্লেখ্য রয়েছে। ফলে বাল্যবিবাহের দায় নিকাহ্ রেজিষ্টারের নয় বিষয়টি সুস্পষ্ট বাস্তবতা। সংগত কারণে রাষ্ট্রের প্রচলিত দন্ড বিধির ২১ ধারার আলোকে নিকাহ্ রেজিষ্টারদের উক্ত আইনের আদলে Public servants (জনসেবক) হিসেবে সুরক্ষা পাওয়ার দাবীদার। মাননীয় হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের আলোকে নিকাহ্ রেজিষ্টারদের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৭ (১) ধারা প্রচলিত আইনে সংযোজন করা প্রয়োজন। সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিকাহ্ রেজিষ্টোরের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের বা কোনো ফৌজদারী অভিযোগ আমলে না নিয়ে জন্ম নিবন্ধন আইন-২০১৪-২৯নং আইনের ১৯ ধারায় নিবন্ধক কর্মকর্তাকে যেরূপ আইনী নিরাপত্তা এবং রেজিষ্ট্রেশন আইনের ধারা ৮৪ তে নিবন্ধকগণকে জনসেবক বলে অভিহিত করে ধারা ৮৬ তে তৎকর্তৃক সরল বিশ্বাসে দাপ্তরিক কাজের ব্যাপারে যেরূপ সুরক্ষা/ আইনী নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে, একইভাবে মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্টেশন) আইন ১৯৭৪ ও বিধি ১৯৭৫ এ প্রয়োজনীয় ধারা সংযোজনের যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব।

মুসলিম বিবাহ তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯ এর বিধি ১৪ মোতাবেক নিকাহ্ রেজিষ্টারের অফিস তাহার নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করার আইনগত বাধ্যকতা রয়েছে। বিধি. ২৫ মোতাবেক কোন নিকাহ্ রেজিষ্টার তাহার নিজ এলাকার বাহিরে গিয়ে অফিস স্থাপন বা বিবাহ রেজিষ্ট্রি করার আইনগত কোন সুযোগ নেই।

প্রচলিত বিধানের তফসিল ক (বিধি ৯ দ্রষ্টব্য) ‘ফরম ক’ এর ৭নং কলাম মোতাবেক নিকাহ্ রেজিষ্টার প্রার্থীর অফিস হিসাবে ব্যবহারের জন্য বৈঠক ঘর থাকার শর্তে সরকার কর্তৃক নিকাহ্ রেজিষ্টারের লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে। নিকাহ্ রেজিষ্টারদের নিয়োগের সময় যেহেতু তার অফিস নির্ধারিত হয়ে থাকে সেহেতু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া নিকাহ্ রেজিষ্টারকে তাহার মূল অফিস থেকে সরিয়ে নিয়ে গায়ের জোরে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় কাউন্সিলর অফিসের সাথে সংযুক্ত বা স্থানান্তর করার বিষয়টি অজৌক্তিক তো বটেই, নিকাহ্ রেজিষ্টার এবং তাহার সরকারি বালামবহি ও যাবতীয় রেকর্ডপত্রাদি নিরাপত্তার বিষয়টিও অনিশ্চিত।

পাশাপাশি বিবাহ ও তালাক রেজিষ্টেশনে জনগণের ভোগান্তি বৃদ্ধি পাওয়ারও যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই উত্তম। এই রকম অদ্ভুত পদক্ষেপ বাল্যবিবাহ রোধে কতটা সহায়ক হবে বিষয়টি সরকারকে গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখা দরকার। বিধি ৩৮ (১) মোতাবেক নিকাহ রেজিষ্টার কর্তৃক বিবাহ ও তালাকের তথ্যাদী ‘ছক’ আকারে জেলা রেজিষ্টার বরাবরে বাৎসরিক প্রতিবেদন দাখিল করিয়া থাকেন। এছাড়া অন্য কোন দপ্তরের নিকট কোনরূপ তথ্যাদি প্রেরণ করার আইনগত কোন বাধ্যবাধকতা নেই বরং বিদ্যমান বিধানের সম্পূর্নরূপে পরিপন্থী।

বিধি ৩৪ মোতাবেক বিবাহ ও তালাকের রেজিষ্টার বহি খুলিবার সময় এবং সমাপ্ত করণে বালামবহিতে পৃষ্ঠা উল্লেখ পূর্বক একমাত্র নিকাহ্ রেজিষ্টার কর্তৃক প্রত্যয়ণের বিধান রয়েছে।
এছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক বালামবহিতে প্রত্যায়ণ করার আইনগত এখতিয়ার বহির্ভূত। বিধি ৩৯ (১) মোতাবেক প্রত্যেক নিকাহ্ রেজিষ্টার জেলা রেজিষ্টারের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রন এবং সকল অফিসসমূহ মহাপরিদর্শক নিবন্ধন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানের সুস্পষ্টভাবে বিধান থাকায়, ইউএনও, ওসি, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা স্থানীয় প্রশাসন বা স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ কোন কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি দ্বারা নিকাহ রেজিষ্টারদের উপর খবরদারী করা আইনগত এখতিয়ার বহির্ভূত। বিধি ২৩.ক (১) মোতাবেক যাবতীয় তথ্যাদী নিকাহ্ রেজিষ্টারের নিকট প্রদর্শন করিলে নিকাহ্ রেজিষ্টার বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনে অপারগতা প্রকাশ করিলে পক্ষগণ কর্তৃক বিধি ২৪ মোতাবেক সংশ্লিষ্ট নিকাহ্ রেজিষ্টারের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আপিল/অভিযোগ দায়েরের বিধান রয়েছে। কাজেই আইনানুগ কাগজপত্রাদী প্রাপ্তির পর নিকাহ্ রেজিষ্টার কর্তৃক বিবাহ প্রত্যাখ্যানের প্রচলিত আইনে কোন সুযোগ নেই। নিকাহ রেজিষ্টারদের পতিপক্ষ না ভেবে তাহাদের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধে একসাথে কাজ করাই হবে স্থানীয় প্রশাসনের জন্য উৎকৃষ্ট পন্থা এবং কার্যকরী পদক্ষেপ। এতে বাল্যবিবাহ রোধে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ইদানিং দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে যে, জেলা প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্যবিবাহ নিরোধে প্রকাশিত কর্ম পরিকল্পনা ছক অনুযায়ী একটি নমুনাপত্রে দেখা যায় যে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক প্রতি মাসে একবার বিবাহ নিবন্ধকের কার্যালয় পরিদর্শন করিবেন। ইহা বাস্তবায়নের সাথে ওসি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডি.ডিকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে নমুনা পত্রে উল্লেখ আছে। বিবাহ সম্পাদনকারী ও নিবন্ধকদের অনিয়ম হলে সকল থানার ওসিদের মাধ্যমে আইন প্রোয়োগের বিষয়টিও নমুনাপত্রে উল্লেখ রয়েছে। নিকাহ রেজিস্ট্ররের অফিস তদারকি করার জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করাসহ উল্লেখিত অন্যান্য পরিকল্পনাসমূহ প্রচলিত মুসলিম বিবাহ্ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধি মালার সম্পূর্নররূপে পরিপন্থীতো বটেই অনধিকার খবরদারীরও শামিল। এতে বাল্য বিবাহ নিরোধে তেমন কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয়না বরং কারণে অকারণে যখন তখন আলেম ওলামা তথা নিকাহ রেজিষ্টারগণের যথেষ্ট নিগৃহীত ও হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলেম সমাজের সম্পর্কের বৈরিতা সৃস্টির আশংকা দেখা দিয়েছে।

ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে আওয়ামী রাজনীতির উপর বিরুপ প্রভাব পড়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আইন মন্ত্রনলায় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নিকাহ্ রেজিষ্টারদের এবং বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের চলমান আইনের মধ্যে থেকেই স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধি আলেম সমাজ ও নিকাহ্ রেজিষ্টারসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের নিয়ে প্রতিটি মন্দির, গির্জা, মিশন/ চার্চ এবং পাড়া মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে উঠান বৈঠক, হাই স্কুল, দাখিল মাদ্রাসা, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং অভিবাবকদের সাথে সেমিনার সিম্পেজিয়ামের মাধমে বাল্য বিবাহের অপকারিতা এবং উহার কুফল বিষয়ে অবহিত করিয়া জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রুত বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হইবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। লেখক -প্রেসিডেন্ট-ন্যাশনাল কংগ্রেস, চেয়ারম্যান-সম্মিলিত ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ফোরাম-জাতীয় নির্বাহী কমিটি। facebook// presidentatcongress