Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক অর্জন মার্চে

মার্চ ৭, ২০১৭, ১২:২৭ পিএম


বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক অর্জন মার্চে

  বর্বরোচিত হিংস্রতার পরও বাঙ্গালী চেতনাবোধকে ধ্বংস করতে পারেনি হিংসাত্মক পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি। দীর্ঘ সাড়ে নয় মাস এই পাকহানাদার বাহিনী একের পর এক অত্যাচার নিপীড়ন চালাতে থাকে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর। তাদের এই লোমহর্ষক বর্বরতা কখনো ভুলে যাবার মতো নয়। এতো লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা সহ্য করে আজকের এই স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলার মানচিত্র দেখার স্বাদ পেয়েছে সাড়ে ষোল কোটি বাঙ্গালী। নিপাত হয়েছে ক্ষমতালোভী আর মায়ের ভাষা বিরোধী নরপিশাচ পাকিস্তানী হায়েনাদের। সব ষড়যন্ত্রের জাল পুড়িয়ে দিয়েছে এদেশেরই তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে সর্ব বয়সী বাঙ্গালী চেতনার জনগন। মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল কিছু বাংলাদেশ বিরোধী কুচক্রি মহল সহ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি। কিন্তু বিধাতার অপরূপ দৃষ্টি থেকে ধ্বণিত হতে থাকে সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর আত্মনাদ---বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা আর মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারে। কেননা মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সেরা জীবের সব ভাষা বুঝতে পারে। তাই বাংলা ভাষার মাতৃভূমিটির প্রতি মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলআমীনের দৃষ্টি ছিল পাকিস্তানের কবল থেকে এই বাংলাদেশ স্বাধীনতার ছোঁয়া পাক। স্বাধীন আর গৌরবময় বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি বরবারই বাংলার ইতিহাসকে মনে প্রাণে বিশ্বাস স্থাপন করে আমার লেখনিতে ঐতিহাসিক যুক্তিগুলো একই রূপে ধারণ করে থাকি। তাই এই ত্যাগ তিতীক্ষার স্বাধীন বাংলাদেশকে সঠিকভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আমি সদা সচেষ্ট।

১৯৬৯ সালে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রবল রূপ ধারন করে। ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারী সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচী পেশ করেন। কিন্তু তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান এই দাবি অগ্রাহ্য করে আন্দোলনকারীদের উপর দমনপীড়ন শুরু করেন। এই আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনায় প্রাণ হারান ছাত্রনেতা আসাদ, কিশোর মতিউর, সার্জেন্ট জহুরুল হক, শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা সহ আরো অনেকে। এই সকল ঘটনায় সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি পেলে ২২শে ফেব্রুয়ারী সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল বন্দীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। অবশেষে আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন এবং ২৪ শে মার্চ তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভের অবসান হয়। ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় পরিষদের নির্বাচন এবং ১৭ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের ৫টি প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন। উভয় পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পরিষদের সর্বমোট ৩০০ টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসন অধিকার করে। অন্যদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৮৮ আসন অধিকার করে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা লাভ করে। হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশনামূলক উদাত্ত আহ্বানে গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে প্রত্যক্ষভাবে।

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ, বৃহস্পতিবার। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে একটি ভয়াল কালো রাতে রক্তস্নাত জন্ম বাংলাদেশ নামের এই স্বাধীন রাষ্ট্রের। ২৫ মার্চের আগে ঢাকা থেকে সব বিদেশী সাংবাদিককে বের করে দেয়া হয়। সে রাতেই পাকিস্তান বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের হত্যাযজ্ঞ। যদিও এই হত্যাযজ্ঞে মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা, পুরো দেশজুড়ে বাঙ্গালী হত্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছিল তাদের বিশেষ লক্ষ্য। মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়কে পাকিস্তানী হায়েনার দল লোমহর্ষক বর্বরতা চালায় ঐ মুহূর্তে। একমাত্র হিন্দু আবাসিক হল-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এতে ৬০০ থেকে ৭০০ আবাসিক ছাত্র নিহত হয়। নিরস্ত্র বাঙালিদের গণহত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অপারেশন সার্চলাইট। মেজর জেনারেল ফরমানের নেতৃত্বে ঢাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর অন্যতম লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিআর সদর দফতর, এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন ধ্বংস ও পরাভূত করা এবং ২য় ও ১০ম ইবিআরকে নিরস্ত্র করা। যদিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের ঠান্ডা মাথার হত্যাকান্ডের কথা অস্বীকার করেছে তবে হামিদুর রহমান কমিশনের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপক ধরনের শক্তি প্রয়োগ করেছিলো। জগন্নাথ হল এবং অন্যান্য ছাত্র হলগুলোতে পাকিস্তানীদের হত্যাযজ্ঞের চিত্র ভিডিওটেপে ধারণ করেন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বর্তমান বুয়েট অধ্যাপক নূর উল্লাহ। মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ পুরো বাংলাদেশেই হিন্দু এলাকাগুলো বিশেষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মধ্যরাতের আগেই, ঢাকা পুরোপুরি জ্বলছিল, বিশেষভাবে পূর্ব দিকের হিন্দু প্রধান এলাকাগুলো। ২রা আগস্ট, ১৯৭১ টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন অনুযায়ী হিন্দু, যারা মোট রিফিউজিদের তিন চতুর্থাংশ, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ক্রোধ ও আক্রোশ বহন করছিল। ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেফতার হবার একটু আগে শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। শেখ মুজিব গ্রেফতার হবার পূর্বে ২৫মার্চ রাত ১২টার পর (অর্থাৎ ২৬মার্চ) টি.এন্ড.টি ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর) ওয়ারলেসের মাধ্যমে মেসেজে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, ১৫শ খন্ড,পৃ:৫৬)। ১৯৭১ সালের এই রাতের ঘটনা আজো প্রত্যেক বাঙালিকে ভয়ার্ত ও আতঙ্কিত করে তোলে। বাঙালি রক্তে-আগুনে-কামানের গোলায় বিভীষিকাময় এই এক রাতের কথা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। সেই ভয়াল কালোরাতে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। এটা অবশ্যই কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না, ছিল পরিকল্পিত আক্রমণ- অপারেশন সার্চলাইট। ঐ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পরই মধ্যরাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন :
পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিত পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিগুলোর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সাথে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। কোনো আপস নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন, জয় বাংলা। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পাঠ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার একটি লিখিত বাণী চট্টগ্রামের জহুর হোসেনসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র এ সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। ২৬ মার্চ কালুরঘাট ট্রান্সমিশন সেন্টার থেকে সর্বশক্তি নিয়ে হানাদার বাহিনীর মোকাবিলা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। উল্লেখ্য যে, এ ঘোষণা প্রচারের সময় বেতার কেন্দ্রের নাম ছিল স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র কিন্তু পরে বিপ্লবী শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এ বেতার কেন্দ্র থেকেই ২৭, ২৮ ও ৩০ মার্চ পর পর তিনটি ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে স্বাধীনতার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, সেনা ছাউনিগুলোতেও।

ইতিহাসের পাতায় এটি দীর্ঘ সময় না হলেও কোনো জাতির অগ্রগতির জন্য একেবারে কম সময়ও নয়। এই সময়ে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়োজন যে আমরা কী করতে পেরেছি, কী পারিনি, মুক্তিযুদ্ধে এত আত্মদান ও ত্যাগ তিতিক্ষার পেছনে আমাদের যে লক্ষ্য ও স্বপ্নগুলো ছিল, সেসব কতটা পূরণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িকতা; আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মর্মকথা ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সব ধরনের অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি। এখন আমরা অনেক দূর এগুতে পেরেছি। একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রদের বর্তমান সরকার যেভাবে বিচারের কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছে, সত্যিই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আজকের এই বাংলাদেশের জন্য। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী থেকে সাড়ে ষোল কোটি বাঙ্গালীর মনে এখন অনেক বড় প্রত্যাশা আর সত্যিকার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়। জাতি আজ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে বাংলাদেশে এখন সত্যিকারের গণতন্ত্র চর্চার প্রতিফলন ঘটবে। তাই পাকিস্তানী হায়েনারা এখনও মরিয়া এই ৪৫ বছরের স্বাধীন আর স্বার্বভৌম বাংলাদেশকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু বাংলার জনগণ এখন আর সেই পূর্বের ষড়যন্ত্রের পুর্নজন্ম হোক এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়, কারণ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের বিচার চলছে এবং চলবে। এটাই বাঙ্গালী জাতির প্রত্যাশা আর দৃঢ় প্রত্যয়।
একটা জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্খা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল কামানের মুখে। সমস্ত জাতির ভাষা যে বজ্রকণ্ঠ ধারণ করেছিল সেদিন, বিনা অপরাধে জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যা, নিরীহ মানুষদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চালিয়ে পাক শাসকরা চেয়েছিল বাঙালি জাতিকে চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরই মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে দেয়া হয় সর্বত্র। সত্যিকারের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষাপট একদিনেই তৈরি হয়নি। আমার মতে এটা তৈরি হয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা থেকে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে। ’৭০-এর নির্বাচন না মেনে নেয়ার প্রেক্ষিত থেকে। আর এসব পটভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সব কিছুর অবিসংবাদিত নেতা তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রসেনানীরূপে প্রতীয়মান হয়। ৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গমাইল বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’। এই ঘোষণাপত্রে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। এর এক জায়গায় বলা হয়, ‘হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও বাঙালি-অবাঙালি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করতে হবে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক।

মজলুম নেতা মাওলানা ভাসানী, শহীদ সোহরাওয়াদীসহ খ্যাতমান রাজনীতিদরা অনায়েসে সেদিন বলেছিলেন এই মুজিব-ই-বাংলার অহঙ্কার আর ত্যাগী নেতা। জাতির জনক মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং এই হাওড়-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমান-স্বাধীন বাংলার মহীয়ান। এই প্রজন্মের একজন বাঙ্গালী হিসেবে কথাটি আমার মনে প্রাণে ভেসে উঠে বারংবার এই মানুষটির নাম। তাই মুজিব জাতির ক্লান্তিলগ্নকে জন্ম নিয়েছে এই মার্চ মাসেই। যে মার্চ মাস বলে ঐতিহাসিক ৭, ১৭,২৫ আর ২৬ তারিখ। গুরুত্বপূর্ণ এই মাসটিকে আমরা সবাই আরো বেশী স্মরণ করবো এই ত্যাগী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। যাঁর অগ্রণী ভূমিকা পালনে স্বাধীন ইতিহাস এক বিরল স^াক্ষী আজকের এই বাংলাদেশ। তাই নতুন প্রজন্মের বোঝা উচিত যে, স্বাধীনতা মানে শুধু পরাধীনতা থেকে মুক্তি নয়, নতুন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আয়োজনও শুধু নয়। স্বাধীনতা হলোÑ স্বাধীন রাষ্ট্রে সার্বভৌম জাতি হিসেবে টিকে থাকার আয়োজন। স্বাধীনতা মানে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই অর্থনৈতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্পষ্টভাবেই উচ্চারণ করেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এই মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামীদের মতোই স্বপ্ন ও সাহস এগিয়ে আসুক, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক, গবেষক, সাংবাদিক
e-mail: [email protected]