Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

তোমায় মনে পড়ে তাসলিমা

ডিসেম্বর ২২, ২০১৪, ০১:০০ পিএম


তোমায় মনে পড়ে তাসলিমা

  প্রিয় পাঠক, আজ আমি হৃদয় বিদারক এক করুণ গল্প শোনাব যা আপনাদেরও আমার মতো হৃদয়ে নাড়া দেবে। যা কখনো ভোলার নয়। আজও ভুলে যেতে পারিনি সেদিনের মর্মান্তিক  তপ্ত-বাস্তব কাহিনী।
 ২০০৫ সালের কথা, মামা বাড়ি আড়পাড়া গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বড় মামাদের বাসায় বসে টিভি দেখছি, বাড়ির সবাই মিলে। দিনটি ছিল শুক্রবার, তাই বিটিভিতে বাংলা ছবি হচ্ছিল। মামি, মামাত ভাবি, মামাতো ভাই-বোন মিলে দেখছিলাম মনোযোগ দিয়ে। এরই মধ্যে পাশের বাড়ির এক মামাতো বোন তাসলিমা (১৪) টিভি দেখতে এসেছে। আমাকে দেখেই জিজ্ঞাসা করলো ভাই কেমন আছেন? বললাম ভাল আছি। ফুফু কেমন আছে? বললাম ভাল আছে।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে মামাতো বোনকে তার মা ডাক দিয়েছে। যাওয়ার সময় আমাকে বলল, ভাই আমাদের বাড়িতে আসবেন বলেই চলে গেল।
তখন বিকাল প্রায় চারটা বাজে।  ঠিক ১০ মিনিটের পর ওদের বাড়িতে কান্নার আওয়াজ পেলাম।  বড় মামি বলল তাসলিমার মা তাসলিমাকে বকা দিয়েছে, তাই মনে হয় কান্না-কাটি করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে কান্নার আওয়াজ ভারী হয়ে গেল এবং বেশ কয়েক জনের কান্নার শব্দ শোনা গেল।
আমরা সকলে টিভি দেখা রেখে তাসলিমাদের বাড়িতে যাই। বাড়ির ভিতর যেয়েই দেখি বারান্দায় তাসলিমা শুয়ে আছে। ডাকলাম তাসলিমা বলে, কোন শব্দ নেই। আবারও ডাকলাম, তাও কোন শব্দ নেই। তখন তাসলিমার মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাঁদছিলেন। আর বললেন এই মাত্র মেয়েটা টিভি দেখে আসল, আমি একটু রাগ করতেই ও ঘরের গিয়ে আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি ভাবলাম ও রাগ করে ঘরে দরজা দিয়েছে। জানালা দিয়ে দেখি ও আড়ার সাথে ঝুলে আছে।
সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো নিমিষেই।
আমি হতবাক হয়ে গেলাম, মুখে কোন কথা নেই, মামিকে সান্তনা দেবার ভাষা আমার নেই। আমি যেন বোবা হয়ে গেছি। আমার হৃদয়ে তখন রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ভাবতে থাকলাম এই বুঝি নিয়তির খেলা। এই মাত্র যে আমাদের সাথে হাঁসি মুখে কথা বলে আসল, মুহুর্তের মধ্যেই তাকে লাশ দেখতে হল।
 ভাবলাম বিধাতা মনে হয় আমার সাথে তাসলিমার শেষ দেখা এবং কথা বলার জন্য আড়াপাড়ায় নিয়ে এসেছে। আমিও স্তম্ভিত ফিরে পেলে কাঁন্না ধরে রাখতে পারিনি।
৯টি বছর পার হয়ে গেল। ভুলে থাকতে চাইলেও পারিনা সেদিনের সেই নির্বাক-হতবাক করা স্মৃতি। চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাসলিমার নিথর দেহ খানা।