Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

জাতীয় কৃষি দিবস ও প্রাসঙ্গিক কথা

আকাশ বাসফোর

নভেম্বর ১৫, ২০১৮, ১০:৪২ এএম


জাতীয় কৃষি দিবস ও  প্রাসঙ্গিক কথা

হেমন্তের দ্বিতীয় মাস অগ্রহায়ণ। শীতের আগাম বার্তা নিয়ে তার আগমন। বাংলার মাঠে মাঠে সোনালী রঙের ছড়াছড়ি। কৃষকের মুখে নতুন ধানের হাসি। বাতাসে নতুন ধানের সুবাস। ধান ঘরে তুলতে কৃষাণীদের কর্মব্যস্ততা। নতুন ধানের চাল থেকেই শুরু হবে নবান্ন উৎসব। কৃষকের হাসির ওপর এখনও অনেকাংশে দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে। আর এই কৃষক ও কৃষিকে এগিয়ে নিতেই ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর (১ অগ্রহায়ণ) বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে পালন করা শুরু হয় জাতীয় কৃষি দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “কৃষিই কৃষ্টি, কৃষিই সমৃদ্ধি। হেমন্তে কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন- ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়, এই কার্তিকের নবান্নের দেশে।’ বাংলাদেশ ধানের দেশ-গানের দেশ-পাখির দেশ, তাই অগ্রহায়ণে ধান কাটার উৎসব গ্রামবাংলা তথা বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য। আবহমান এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পহেলা অগ্রহায়ণ দিনটি পালন করে আসছে এ দেশের জনগণ নবান্ন উৎসব তথা জাতীয় কৃষি দিবস হিসেবে। প্রাচীন কাল থেকেই আবাহমান বাংলায় নতুন ধান ঘরে তোলার উৎসব পালিত হচ্ছে। হেমন্তের মাঝামাঝিতে গ্রামবাংলার ঘরেঘরে নতুন ধান ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় উৎসবটি। অগ্রহায়ণের শুরুতে আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে শুরু হয় নতুন চালের তৈরি নানা রকমের পিঠা, পায়েসসহ হরেক রকমের রকমারি খাবারের আপ্যায়ণ। পাহাড়েও লাগে নবান্নের ছোঁয়া সেখানেও আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। নবান্ন উৎসবকে অনেক বড় পরিসরে পালন করা হলেও কৃষি দিবসটি এখনও রয়ে গেছে অনেকের অজানা। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে অনেক আগে থেকেই নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কৃষিদিবস পালিত হয়ে আসছে। আইওয়াতে ২০০৫ সাল থেকে কৃষি দিবস পালন শুরু হয়েছে। সেখানে তারা ১০ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী কৃষি দিবস পালন করে , উত্তর ক্যারোলিনাতে ৩১ জুলাই এবং ১ ও ২ আগস্ট এ ৩দিন ১১ পর্বে উদযাপিত হয় কৃষিদিবস। ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে খাদ্যসংকট শুরু হয়। বাংলাদেশেও এসময় দুদফা বন্যা এবং সিডরের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে কৃষিতে অনেক বড় আকারের ক্ষতি হয়। এসময় কৃষিকে উজ্জীবিত করতে জাতীয়ভাবে কৃষি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কৃষকদের অবদানের ফলেই বোরো, আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়, এছাড়াও আলুসহ অন্যান্য শস্যেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংকট আয়ত্তের মধ্যে আসে। প্রথম ‘জাতীয় কৃষি দিবস’ পালনের জন্য সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর মধ্যে প্রধান আকর্ষণ ছিল ধান কাটার উৎসব ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর অর্থাৎ ১অগ্রহায়ণ থেকে প্রতিবছর “জাতীয় কৃষিদিবস” হিসেবে পালিত হচ্ছে। “কৃষিই কৃষ্টি, কৃষিই সমৃদ্ধি” স্লোগানকে নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর সারাদেশে পালিত হলো দিবসটি। বাংলাদেশের বেশ কিছু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা মাধ্যমে পালিত হয়েছে “জাতীয় কৃষি দিবস”। এই সূত্র ধরেই রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতি বছর পালন করে আসছে জাতীয় কৃষি দিবস ও নবান্ন উৎসব। বর্তমানে হাজারো সমস্যায় আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি, লাখো সমস্যায় জর্জরিত আমাদের কৃষক। সচেতনতার অভাবে প্রতিদিন ইঞ্চি ইঞ্চি করে কমছে কৃষি জমি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার কেড়ে নিচ্ছে কৃষকের মুখের গ্রাস, দাদন ব্যবসায়ীর শোষণে আর সার্টিফিকেট মামলায় হাতছাড়া হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকের কৃষি জমি। কৃষকের ফসলের লাভের অংশ চলে যায় মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দখলে। একথা আজ সর্বজন স্বীকৃত, দেশের খাদ্য দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পরে। যেহেতু প্রতি বছরই কৃষি দিবস পালন করা হবে, সেহেতু গ্রামে গ্রামে কৃষি সমবায় সমিতি গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। এতে করে কৃষিদিবস উদযাপনে রাষ্ট্রেও সঙ্গে কৃষকের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে। জাতীয় কৃষি দিবস কৃষকের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। কৃষকের এ উদ্দীপনাকে কাজে লাগোনো এবং বাস্তবরূপ দেয়া সরকারের দায়িত্ব। প্রতিবছর কৃষি দিবসকে আরও বড়সড়ভাবে পালন করার পাশাপাশি কৃষকদের জন্যে নতুন কোন ঘোষণা আরও এগিয়ে যাবে আমাদের কৃষি। কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চত করতে হবে। বছরে বাঙালিদের দুুটি উৎসব জাতীয় পরিসরে পালন করলে ক্ষতি কী? নবান্ন উপলক্ষে পহেলা বৈশাখের মত চারুকলা ও ছায়ানট যদি মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্যোগ নিতে পারে তাহলে দেশের কৃষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বিত উদ্যোগ কি পারে না বড় পরিসরে একটি কৃষি দিবসের আয়োজন করতে? এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ও কৃষি মন্ত্রণালয়। পহেলা বৈশাখের মতো সারাদেশে জাতীয় কৃষি দিবসও উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হোক। জাতীয় কৃষি দিবস বাঙলি জাতীয় জীবনে অনাবিল আনন্দ, সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।

লেখক : শিক্ষার্থী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।