Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

মধু ভাইয়ের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প!

ববি প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ১৩, ২০২০, ০৭:৫০ এএম


মধু ভাইয়ের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প!

'মধু ভাই' নাম শুনে অবাক লাগছে? শুধু তাই নয়, কেউবা তাকে 'ঘি ভাই' বলে ডাকে। আবার কেউবা ডাকে 'রক্তচোষা' বলে। তার এই নাম গুলোর পেছনে রয়েছে অসাধারণ কিছু গল্প। সেই সাথে রয়েছে দুঃখে ভরা কিছু স্মৃতিও। নামগুলো যেন তার প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা ও সফলতার প্রতীক। মধু ভাই সবার কাছে প্রিয় একজন ব্যক্তি। বলছিলাম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী গাজী হাদীউজ্জামানের কথা।

গাজী হাদিউজ্জামান বর্তমানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করছেন। উদ্যোক্তা হাদীউজ্জামানের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কাজ করতে ভালো লাগে তার। পাশাপাশি মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে। তারমধ্যে অন্যতম স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন। মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত সংগ্রহ করে দেয়া যেন তার নেশায় পরিণত হয়ে পড়ে। বন্ধুদের সাথে তার সম্পর্ক হয়ে উঠে রক্ত দেয়া-নেয়ার। তাই তো বন্ধুরা তাকে ভালোবেসে 'রক্তচোষা' বলেও ডাকে।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে মানুষের সেবায় নিয়োজিত মধু ভাই আক্রান্ত হন প্রাণঘাতী (জিবিএস) ভাইরাসে। পুরো শরীর তখন প্যারালাইজড হয়ে যায়। ভ্যাকসিন দিতে খরচ হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। মধ্যবিত্ত পরিবারে হঠাৎ যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। পরিবারের সহায়সম্বল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের আর্থিক সহায়তায় ঢাকা নিউরোসাইন্স হাসপাতাল থেকে ১ মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন হাদীউজ্জামান। 

মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সে যাত্রায় মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে ফিরেছেন। সবার কাছেই সে এক মৃত্যুঞ্জয়ী নাম। ছাত্রাবস্থায়ই  স্বাবলম্বী হতে হবে আর্থিকভাবে। শুরু হল নতুন প্রত্যয়ে জীবন সংগ্রাম। বরিশালে গড়ে তোলেন কোচিং সেন্টার। সেখান থেকে পড়ালেখার পাশাপাশি উপার্জন করতে শুরু করেন তিনি। জড়িত হয়ে পড়েন ভিন্নধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা 'শেখাই' এর পরিচালক প্যানেলেও।

করোনাভাইরাসে সব ইনকামের পথ বন্ধ হলে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন হাদীউজ্জামান। লকডাউনে বাড়িতে আটকে থেকে এক সময় মনে হলো মানুষ ভেজাল ছাড়া ভালো খাবার পায় না। তাই নিজ এলাকা সাতক্ষীরার বিখ্যাত পণ্য নিয়ে 'বিখ্যাত পণ্য সম্ভার' নামে শুরু করেন অনলাইন বিজনেস। অল্পদিনেই গ্রাহকদের কাছে খাঁটি পণ্যের বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী হিসেবে আস্থা অর্জন করেন। তাইতো গ্রাহকেরা তাকে ভালোবেসে 'মধুভাই', 'ঘি-ভাই' বলে ডাকেন। তার সাথে বর্তমানে কাজ করেন আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের হালও ধরতে পারছে তারা।

প্রাকৃতিক চাকের মধু, সুন্দর বনের চাকের মধু, চাষের মধু আর সাতক্ষীরার জনপ্রিয় 'ঘি' খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল, যশোরের গুড়, যশোরের টাটকা ফুল, খুলনার বিখ্যাত চিংড়ি শুটকি, চট্টগ্রামের শুটকি, যশোরের গরুর ঘানি ভাঙানো সরিষা তেল তার পণ্য। সরাসরি নিজেই সংগ্রহ করেন এসব পণ্য।

সফল উদ্যোক্তা হাদীউজ্জামান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করবো। চাকরির পিছনে না ছুটে অন্যকে চাকরি দিব। সেক্ষেত্রে আমি অনেকটা সফলও হয়েছি। কিছুদিনের মধ্যেই আল্লাহর অশেষ রহমতে ও সবার দোয়ায় 'বিখ্যাত পণ্য সম্ভারের' পণ্য ছড়াতে শুরু করেছে পুরো বাংলাদেশে সুনামের সঙ্গে। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে একটি ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান খুলবো। যেখানে অনেকেই কাজ করতে পারেন। এ সময় তিনি বরিশাল বিভাগীয় উদ্যোক্তা হাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশ ও দশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সকলের দোয়া ও আর্শীবাদ কামনা করেন।

লেখক: মো. ইমদাদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

আমারসংবাদ/কেএস