Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

ফ্রান্সের ঔদ্ধত্য ও একটি চপেটাঘাত

সামিন ইয়াসার আজহা

ডিসেম্বর ২২, ২০২০, ১১:৪৫ এএম


ফ্রান্সের ঔদ্ধত্য ও একটি চপেটাঘাত

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) হলেন ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। যিনি সকল মনিষীর লেখনিতে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে ভূষিত। শুধুমাত্র মুসলিমরাই নয়, অমুসলিম মনীষীরাও তার শ্রেষত্ব এবং মহত্বের স্বীকৃতি দিয়েছেন।

‘মাইকেল হার্ট’ যিনি বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী একশত সেরা মনীষীর জীবনী লিখেছেন, সেই তালিকায় তিনি মহানবী (সাঃ) কে সবার উর্ধ্বে রেখেছেন। তিনি তার লিখনিতে বলেছেন, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সাফল্যের মধ্যে জাগতিক ও ধর্মীয় উভয় কর্তৃত্বে এক অতুলনীয় সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। একারণেই তাদকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

তবুও বিশ্বজুড়ে এই মহামানবকে নিয়ে বিভিন্ন কুৎসা রটিত এবং প্রচারিত হয়। বিশেষত মুসলিম বিদ্বেষী এবং ইসলাম ধর্ম বিরোধীরা এসব কাজ করে থাকেন। সম্প্রতি ফ্রান্সে স্যামুয়েল প্যাটি নামের একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহানবী (সাঃ) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেছিলেন এবং সেইজন্যে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট বিভিন্ন অভিভাবক অভিযোগ করেন। পরে ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়ে দলমত নির্বিশেষে মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করে রাস্তায় নেমে আসেন।

এমন অপ্রাকৃত ঘটনাটি ঘটে ফ্রান্সে শার্লি হেবদো ম্যাগাজিনের অনুরূপ আরেকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শন করায় ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ম্যাগাজিনটির কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। এতে  ম্যাগাজিনটির সম্পাদক ও নামকরা তিনজন কার্টুনিস্টসহ মোট ১২ জন নিহত হয়৷ দুই হামলাকারীও প্রাণ হারান। এর কিছুদিন পরে প্যারিসে আরেকটি হামলায় ৫ জন নিহত হয়। এই দুটি হামলার যোগসূত্র আছে বলে দাবি করে দেশটির তদন্তকারী সংস্থা। 

কিছুদিন আগে প্যারিসের উত্তর-পশ্চিমের শহরতলী এলাকার রাস্তায় ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনকারী সেই শিক্ষককে ছুরিযোগে গলা কেটে হত্যা করে এক সন্ত্রাসী। এতে পুলিশের গুলিতে স্পটে প্রাণ হারান হামলাকারীও। পুলিশ জানায় , হত্যাকারীর বয়স ১৮ এবং সে ফরাসি চেচেন বংশদ্ভূত।

বলা হয়, শার্লি হেবদো মহানবীর যেসব ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে ব্যপক ঘৃণ্য এবং বিতর্কিত হয় তার মধ্যে কয়েকটি ব্যঙ্গচিত্র স্যামুয়েল প্যাটি ক্লাসে প্রদর্শন করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভিত্তি করে। 

তবে এই হত্যাকাণ্ডের হত্যার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যার কারণ হলো ইসলামপন্থীরা আমাদের ভবিষ্যত কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু ফ্রান্সে কার্টুন প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না। 

এর পর থেকে তোলপাড় শুরু হয় পুরো বিশ্বে। ক্ষুব্ধ এবং একত্রিত হয় পুরো মুসলিম বিশ্ব। কাতার, জর্ডান, কুয়েত, মরক্কো সহ বেশ কয়েকটি দেশ ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দেন। সাথে ইসলাম ধর্মের প্রভাবশালী স্কলারস ডা. জাকির নায়েকও ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের জন্য বলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয় প্রতিবাদ এবং ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক। শুরু হয় জোর প্রতিবাদ। 

গোত্র কিংবা সম্প্রদায় নির্বিশেষে সারাবিশ্বে ইসলাম ধর্ম অনুসারীরা সবাই একটিই আওয়াজ তোলে, 'বয়কট ফ্রান্স'। 

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করেন, "I am throwing away my Cartier watch. হ্যাশট্যাগ Boycott french products"। সোশাল মিডিয়াতেও হ্যাশট্যাগ 'boycott France' পোস্ট দিতে থাকে পুরো বিশ্বের মুসলিম জনগণ।

বিভিন্ন দেশের প্রথিত চেইন শপ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রান্সের পণ্য সরিয়ে ফেলা হয় রাতারাতি। অর্থনৈতিক এমন ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে টনক নড়ে ম্যাক্রোঁ প্রশাসনের। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ তার আওয়াজ নিচু করেন জনসম্মুখে এসে। 

কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মহানবীকে অবমাননা করলে মুসলমানদের অনুভূতি কেমন হতে পারে তা আমি উপলব্ধি করতে পারি। এটাও জানান, ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা ফ্রান্সের কোনো সরকারি উদ্যোগ ছিল না। এটি একটি স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র সংবাদপত্রের কাজ, যেটি সরকারের অনুগত নয়। 

তথাপি ফ্রান্সের ঔদ্ধত্য আচরণ এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীর চপেটাঘাত পরবর্তী ম্যাক্রোঁ প্রশাসনের নতিস্বীকার মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর ধর্মানুরাগীদের একটি নিরব বিজয় বৈকি! পৃথিবী জুড়ে ইসলাম ধর্মের জনপ্রিয়তা ইতোমধ্যে প্রকাশিত। ধর্মটির মূলে রয়েছে শান্তির বার্তা প্রেরণ, ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সাম্যের স্লোগান। ইসলাম ধর্মের দীক্ষা হলো পৃথিবীর পালিত সকল ধর্মকে শ্রদ্ধার সাথে দেখা। তবুও মহামানবকে নিয়ে কটুক্তির পুনরাবৃত্তি, ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন এবং তৎসংক্রান্ত কার্যকলাপ ইসলাম ধর্মানুসারীদের অন্তরে লোমহর্ষক আগুন জ্বালিয়ে দেবার মত।

লেখক: শিক্ষার্থী, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ।

আমারসংবাদ/কেএস