Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

প্রত্যক্ষ উপায়ে টিকার ব্যবস্থা দরকার

জানুয়ারি ১৮, ২০২১, ০২:১০ পিএম


প্রত্যক্ষ উপায়ে টিকার ব্যবস্থা দরকার

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীতে অচল সারাবিশ্ব। সবাই শুধু টিকা নিয়ে চিন্তা করছে, কখন টিকা পাবে, কিভাবে প্রয়োগ হবে এসব নিয়ে যত পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন দেশের জনগণের। কোনো দেশ কখন পাবে সেই নিয়ে সকল দেশের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। 

দেশের জনগণের জন্য অনেক দেশ সরাসরি টিকা উদ্ভাবনকারী দেশের সাথে চুক্তি করে সংশ্লিষ্ট সরকার টিকার ব্যবস্থা করছে। আমাদেরও উচিত উদ্ভাবনকারী দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়ার সাথে সরাসরি চুক্তি করে টিকার ব্যবস্থা করা। 

কারণ আমাদের দেশের কিছু ওষুধ কোম্পানি রয়েছে যাদের শক্তিশালী ল্যাব আছে যেখানে টিকা তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও করোনাভাইরাসের টিকা রফতানি নামে আরেক দেশের নানান সিদ্ধান্ত আমাদের সরকারকে বিভিন্নভাবে বিব্রত করছে, যা কোনভাবে কাম্য নয়। 

সেই ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এসব চুক্তি করে আমাদের নিজেদের দেশে উৎপন্ন করতে পারলে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন হয় না। সেই ক্ষেত্রে টিকা পাওয়া এবং প্রয়োগ করা সহজ হতো। আমি মনে করি, সরকার ওষুধ কোম্পানি বা বেসরকারি প্রশাসনকে এই বিষয়ে উৎসাহ বা প্রণোদনা দিতে পারে। যাতে তারা উৎসাহ পেয়ে এই কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।

বাংলাদেশে কারা টিকা পাবে তার একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে ১৮ বছর বয়সের নিচের কাউকে টিকা দেয়া হবে না। এছাড়া গর্ভবতী মহিলা ও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের টিকা দেয়া হবে না। 

ফলে ৪০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় আসবে। কারা টিকা পাবে তার একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ জাতীয় কমিটি কর্তৃক চলমান। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালগুলো এগিয়ে এসেছিল। কিছু বাদে অন্যদের ভূমিকাও ছিল সন্তোষজনক। সেইভাবে করোনার টিকা আনতে বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে আমরা সাধারণ নাগরিক অনেক বেশি উপকৃত হতাম। 

কারণ বাংলাদেশের বেক্সিমকো এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সময়সাপেক্ষ ও কঠিন। তাই আমার মতে বিকল্প উপায়ে টিকার অনুমোদন নিয়ে যুক্তরাজ্য বা চীনের টিকা দেশে তৈরি করতে পারলে অনেক ভালো হতো। 

প্রতি বছর সাড়ে ৩ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। ফলে প্রতি মাসে যে ৫০ লাখ করে টিকা আসবে, সেটার ব্যবস্থাপনা খুব একটা কঠিন হবে না। এমনকি বেশি এলেও কোনো সমস্যা হবে না।

সেরাম ইনস্টিটিউট পুনেভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার এই প্রতিষ্ঠান। সেরাম ইনস্টিটিউট ‘কোভিশিল্ড’ নামে ভারতে এই টিকা উৎপাদন করেছে। 

যদিও বাংলাদেশের বেক্সিমকো এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে তিন কোটি করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া যাবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে যে পরিমাণ টিকা পাবার আশা রয়েছে সব মিলিয়ে তার পরিমাণ হবে চার কোটি ৯০ লাখ ডোজ। একটি ডোজের ২৮ দিন পর আরেকটি ডোজ দিতে হবে।

সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই টিকা ক্রয় করবে। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে পরিবহণ খরচসহ আমাদের দেশে আনতে প্রতি ডোজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ ডলার। 

মোট ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার মধ্যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অগ্রিম পরিশোধ করা হবে ৬০০ কোটি টাকা। নিয়মানুযায়ী অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকা, আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ সাতটি দেশ অনুমোদন দিলে সেটি যে কোনো দেশ ব্যবহার করতে পারবে। ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড এই টিকার অনুমোদন দিয়েছে।

বর্তমানে অনেক দেশ চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্যর টিকা দেওয়া শুরু করেছে। আমরা কবে পাবো তা নিয়ে অনেক ধরনের তথ্য রয়েছে। ভ্যাকসিন একমাত্র সমাধান এই মহামারী থেকে পরিত্রাণের। পৃথিবীতে অনেক দেশে সাধারণ মানুষকে কোভিডের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় তখন অন্যদের মতো আমি নিজেই বেশ উদ্বিগ্ন ছিলাম। 

এর কয়েকমাস পরে জীবনযাত্রা যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করে তখন সেই ভয় কেটেছে। ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে হয়তো করোনাভাইরাসের টিকা আসতে পারে। তবে অনেকে লোক রয়েছে বাংলাদেশে টিকা আসলেই সাথে সাথে সেটি নেবেন না তারা। 

কারণ, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে অনেক লোক খুবই সাবধানী। কারণ এটা একটা নতুন জিনিস। সাইড ইফেক্টের ব্যাপারটি অনেক জনগণ আগে বিচার বিশ্লেষণ করবে। অন্যরা টিকা নিলে সেটা পর্যবেক্ষণ করবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেবে যে টিকা নেওয়া যায় বা যায় না।

কারণ মেক্সিকোতে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নেওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক নারী চিকিৎসক। যদিও ফাইজার-বায়োএনটেক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ৩২ বছর বয়সী এক নারী চিকিৎসকের হাসপাতালের ভর্তি হওয়ার ঘটনায় তারা গবেষণা চালাচ্ছে।

টিকা নেয়ার পর তার খিচুনি, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে র‌্যাসের সমস্যা দেখা দিলে মেক্সিকোর নুয়েভো লেভনের রাষ্ট্রের এক সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত ফাইজার-বায়োএনটেক কোনো মন্তব্য শোনা যায়নি।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য গত ২ ডিসেম্বর ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর দেশটিতে এই টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বাহরাইন, সৌদি আরব, ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দিয়ে তার প্রয়োগ শুরু করে। 

এছাড়াও ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার ঐ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ফলে এই অনুমোদনের খবরে বেক্সিমকোর শেয়ারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বেক্সিমকো এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে যে তিন কোটি টিকা দেবে ভারত। 

ভারতের যুক্তরাজ্যর সাথে টিকা প্রকল্পে অংশীদারীত্ব রয়েছে বিধায় তারা এই সুযোগ পেয়েছে। আমরাও এইভাবে অন্য দেশের সঙ্গে অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে টিকা উৎপন্ন করতে পারতাম। এখনও সেই সুযোগ রয়েছে।

আমরা এভাবে টিকার অনুমোদন নিয়ে নিজেরা টিকার প্রয়োগ করতে পারলে খুবই ভালো হতো। এতে অন্য তৃতীয় দেশ বা ভায়া হয়ে টিকা ক্রয়ের প্রয়োজন হতো না। ফলে আমাদের দরকার অনুযায়ী টিকার প্রয়োগ করা যেতে পারত। করোনার টিকা নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত সরকারের, যাতে আরও দ্রুত টিকা আনার ব্যবস্থা করা হয়। 

প্রধানমন্ত্রী যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করছে, তা খুবই প্রশংসনীয় এবং তার নিকট কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস সরকার প্রধান অন্যান্য ইস্যুর মত টিকার ব্যবস্থাপনায় সফল হবে।

লেখক: মো. শফিকুল ইসলাম (পিএইচডি ফেলো, জংনান ইউনির্ভাসিটি অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ল, উহান, চীন।  শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)

আমারসংবাদ/এআই